সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দিন চারেকের উৎসব, হইহুল্লোড়। চোখের নিমেষে সময়টা পার হয়ে যায়। কিন্তু তার জন্য প্রস্তুতি চলে একেবারে ৩৬১ দিন ধরে। এটাই বাংলার রীতি, বাঙালির প্রাণের উৎসব। ফি বছর এই ছবিটা দেখতেই অভ্যস্ত রাজ্যবাসী। তবে এবছর পুজো প্রস্তুতির ছবিটা বোধহয় একটু ভিন্ন। তার অন্যতম কারণ অবশ্যই আর জি কর হাসপাতালে ঘটে যাওয়া নারকীয় ঘটনা। এ ঘটনা শুধু শহর বা জেলায় নয়, নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা সমাজকে। প্রশ্ন উঠেছে আজকের সমাজে নারীসুরক্ষা নিয়ে। আর এই আবহেই 'মেয়ে'র বিচার চেয়ে 'মায়ের পুজো' এবার কিছুটা নমো নমো করে সারতে চাইছেন বহু উদ্যোক্তা। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে বঙ্গে দুর্গাপুজো শুধু উৎসব, উদযাপনই নয়, এ এক বড় অর্থাগমের ক্ষেত্রও। বছরভর তার জন্য অপেক্ষায় থাকে বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। তাই পুজো ভালোভাবে না হলে তাঁদের জন্য 'আশ্বিণের শারদপ্রাতে' বেজে উঠবে না 'আলোকমঞ্জির'।
বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব - দুর্গাপুজো।
সাধ থাকে অনেকের, কিন্তু সাধ্য কই? শরতে হিমালয়কন্যা গৌরীবরণে নিজ নিজ ঘরে আয়োজন করার ইচ্ছা তো থাকে অনেকের। কিন্তু সে পুজোর আয়োজনের খরচ ঢের। তবে রাজ্য সরকার এসব বিষয়ে উৎসাহাদাতার ভূমিকা পালন করেছে। প্রতি বছর পুজো উদ্যোক্তাদের দেওয়া হয় সরকারি অনুদান (Donation)। বাজার দরের কথা মাথায় রেখে বছর বছর সেই অঙ্ক বাড়ছে। ২০২৪ সালে পুজো উদ্যোক্তাদের ৮৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু আর জি করের ঘটনার কিনারা না হওয়া পর্যন্ত সেই অনুদান নেবেন না বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ। আর্থিক সাহায্য ফেরালে পুজোর জৌলুস কমে যাবে না তো? এ প্রশ্নের জবাবে তাঁরা জানাচ্ছেন, নিজেদের চেষ্টায় নিজেরাই মূল পুজোর আয়োজন করবেন। বাজেট (Budget)কাটছাঁট করতে হয়, হোক। কিন্তু 'মেয়ের বিচার' না হওয়া পর্যন্ত 'মায়ের পুজো'য় কোনও আড়ম্বর নয়।
[আরও পড়ুন: রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষপদে বিরাট রদবদল, মুখ্য সচিবের দায়িত্বেও নতুন IAS অফিসার?]
এর বিপক্ষ মতও তৈরি হচ্ছে। অনেকেই আর জি কর কাণ্ডের বিচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে পুজোর অনুদানকে এক করতে রাজি নন। দুটি বিষয় আলাদা, তাদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করার ভাবনা অর্থহীন বলেই তাঁদের মত। একথা ভুললে চলবে না যে গোটা বাংলা দুর্গাপুজো ঘিরে চাঙ্গা হয়ে ওঠে শুধু উৎসবেই নয়, অর্থনৈতিক পরিসরেও। মৃৎশিল্পী থেকে শুরু করে শোলা, প্যান্ডেল, আলোর কাজ যাঁরা করেন, প্রত্যেকের নজর থাকে আশ্বিণে। দেবীর খুঁটিনাটি সমস্ত সাজগোজ শেষে পুজো একেবারে শেষ হলে পর অর্থাগম হবে, এই আশায় গোটা বছর দিন গোনেন তাঁরা। এবছর বরাত না পেলে সেসব মানুষের কী হবে? তা ভাববার বইকি।
[আরও পড়ুন: ‘প্রোপাগান্ডা ছবিতে বাংলাকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা’, কুণালের মন্তব্যে সায় জানিয়ে সরব সোহম]
ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের (Forum for Durgotsab) তরফে সম্পাদক শাশ্বত বোস বলছিলেন, কলকাতার পুজোয় কমবেশি ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক আদানপ্রদান হয়ে থাকে। অঙ্কটা কত বড়, তা বোঝাই যাচ্ছে। তাতে বড় অবদান রাজ্য সরকারের এই আর্থিক অনুদান। তবে এই অর্থ ঠিক কোন কাজে ব্যবহার করে থাকেন উদ্যোক্তারা? তা স্পষ্ট করে দিলেন কাশী বোস লেনের সোমেন দত্ত।
প্রতিমা তৈরি। ফাইল ছবি।
তিনি জানান, ''অনুদানের টাকায় আমাদের ভোগের কোনও খরচা হয় না। এই টাকার উপর কোনও পুরস্কার (Prize) পাওয়া নির্ভর করে না। পুজো ছোট হোক বা বড়, তা অনুদানের টাকার উপর নির্ভর করে না। অনুদানের টাকায় যা যা খরচ হয়, তা হল পদ্ম ও শালুক ফুলচাষিদের পাওনা মেটানো। ঢাকিদের প্রাপ্য গ্রামীণ খাজনা দেওয়া। শ্রমিকদের ইন্স্যুরেন্স (Insurance) পেমেন্ট করি। পুজোয় আগত দর্শনার্থীদের দুর্ঘটনা সংক্রান্ত বিমাও করা হয়। শ্রমিকদের পরিবারের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী জিনিস দেওয়া হয়। ইলেকট্রিশিয়ানদেরও ইন্স্যুরেন্স করা হয়ে থাকে।'' এ তো সারা বছরের বড় কাজ। তা থমকে যাওয়া কি কাম্য? বরং মায়ের পুজোর মাধ্যমেই মেয়ের নিরাপত্তার দাবি প্রতিধ্বনিত হোক আরও বেশি বেশি করে।