সুমন করাতি, হুগলি: সৃষ্টি আর সৃষ্টিকর্তার সম্পর্কের কোনও রসায়ন নেই। মেধা, পরিশ্রম আর ইচ্ছাশক্তিতে যে কোনও সৃষ্টিই হয়ে উঠতে পারে অনন্য। ঠিক যেমন আপন সৃষ্টিকর্মে মগ্ন হুগলির ষষ্ঠ শ্রেণির খুদে। দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2023) মরশুমে মৌসমের হাতেই মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ী রূপ পাচ্ছে দেবী দুর্গা। তার হাতের তৈরি দেবী দুর্গা মহালয়ার (Mahalaya) দিন থেকেই পাড়ি দেবে বিভিন্ন মণ্ডপে। কোন্নগরের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মৌসমের হাতের তৈরি দেবী দুর্গা পূজিত হবে বিভিন্ন মণ্ডপে। তার এই কাজে দিনরাত উৎসাহ জুগিয়ে চলেছেন মা-বাবা।
আজকের প্রজন্ম ছেলেমেয়েরা মোবাইলে আসক্ত। কিন্তু তাদের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা কোন্নগরের (Konnagar) মৌসম নস্কর। ছোট থেকে তার আকর্ষণ মাটি এবং মাটি থেকে তৈরি নানা মূর্তি। একটু বড় হওয়ার পর পড়াশোনা সামলে নিজেই মূর্তি তৈরি করতে শুরু করে মৌসম। আর দেবী দুর্গার মূর্তি গড়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে। ষষ্ঠ শ্রেণির মৌসম নিজের তৈরি প্রতিমা বাড়িতেই পুজো করে। আর তার তৈরি দেবী দুর্গার অন্যান্য প্রতিমা বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে যায়, সেখানেই পূজিত হয়। এতে বেশি খুশি মৌসমের বাবা-মা।
[আরও পড়ুন: অতিবৃষ্টিতে বানভাসি একাধিক জেলা, মোকাবিলায় একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি মুখ্যমন্ত্রীর]
কোন্নগর কানাইপুর এলাকার বাসিন্দা মৌসম। যখন তার বয়স পাঁচ বছর, সেই থেকে মৃত্তিকার শিল্পকলা খুবই পছন্দ মৌসমের। সেই ছোট বয়স থেকেই বিভিন্ন মূর্তি বানানো শুরু। এরপর আসতে আসতে সমস্ত দেবদেবীর মূর্তি তৈরি করা শুরু বাড়িতেই। আর ছোট মৌসমকে এই কাজে সব সময় সমর্থন করে চলেছে তার বাবা-মা। পড়াশোনা সামলে বাবার সঙ্গে গঙ্গা থেকে মাটি আনা থেকে শুরু করে কুমোরটুলি (Kumortuli) গিয়ে রং দেবীর সাজ সমস্ত নিয়ে এসে প্রতিমা তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে মৌসম। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাটি উৎসবে অংশগ্রহণ করে সকলের নজর কেড়েছে কানাইপুর এলাকার বাসিন্দা মৌসম। আর এলাকার ছেলের এই প্রতিভা দেখে খুশি এলাকার বাসিন্দারাও।
এই বিষয়ে মৌসম বলছে, ছোট থেকেই তার মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতে ভালো লাগে। এরপর আসতে আসতে সমস্ত দেব দেবীর মূর্তি তৈরি করা শুরু। আর পড়াশোনা করে যে সময়টা পাওয়া যায় সেই সময় সে এই মূর্তি তৈরির কাজ চালায়। আগামী দিনে ভালো আর্ট কলেজে (Art College) ভর্তি হয়ে তার এই শিল্পকলার কাজ আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় মৌসম। আর ছেলের এই কাজ নিয়ে বাব সৌমেন নস্কর বলেন, ”ছোট থেকেই ওর মাটি নিয়ে বিভিন্ন জিনিস বানানোর কাজ করে। আর এতে কখনও বাধা দিইনি। উলটে সমস্ত বিষয়ে ছেলেকে সবসময় উৎসাহ দিই, যাতে ছেলে আগামী দিনে তার এই শিল্পকলা নিয়ে অনেক বড় হতে পারে।”
[আরও পড়ুন: শহরে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, উল্টোডাঙা-গড়িয়াগামী বাসের ধাক্কায় পথচারীর মৃত্যু, গ্রেপ্তার চালক]
মা মৌমিতা নস্করের কথায়, ”ছেলে পাঁচ বছর বয়েস থেকেই এই মাটি নিয়ে বিভিন্ন জিনিস বানিয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। এটা খুব আনন্দের। শুধু ছেলেকে বলি, পড়াশোনা সামলে সব কিছু করতে। আর ও সেটাই করে। আগামী দিনে ছেলে তার এই প্রতিভা নিয়ে আরও এগিয়ে যাক, সেটাই আমরা চাই।”