পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর (Bonedi Barir Durga Puja) সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ রইল বালুরঘাটের সাহাবাড়ির দুর্গাপুজোর কথা।
রাজা দাস, বালুরঘাট: দেবী দুর্গার পাশে অধিষ্ঠিত লক্ষ্মী সরস্বতী ঠিকঠাকই আছেন। শুধু বদলে গিয়েছে কার্তিক গণেশের অবস্থান। ১৭৪ বছরের সাহাবাড়ির পুজোয় তিনপুরুষ আগে এই বদলের ধারা এসেছে। আগে স্বাভাবিক একচালা প্রতিমা গড়েই সাহাবাড়ির পুজো হত।
দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রাচীন পারিবারিক পুজোর সংখ্যা একেবারেই কম নয়। তবে বালুরঘাট সাড়ে তিন নম্বর মোড় এলাকার সাহাবাড়ির পুজো অন্যতম। এই পুজোর প্রতিষ্ঠাতা বনমালী সাহা। যিনি অধুনা পূর্ববঙ্গের বাসিন্দা ছিলেন। পৌনে দুশো বছর আগে ব্যবসার কাজে বালুরঘাটে চলে আসেন তিনি। জলপথে ব্যবসা করতে এসে বালুরঘাটেই থেকে গিয়েছিলেন বনমালী সাহা। বালুরঘাটের বিশ্বাসপাড়া এলাকায় বসতবাড়ি তৈরি করেন। সেখানেই প্রথম দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন তিনি। বর্তমানে যা সাহাবাড়ির পুজো নামে পরিচিত। বনমালী সাহার উত্তরসূরি কালীকৃষ্ণ সাহা রায় এখন এই পারিবারিক পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন। এই পুজোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সাহাদের একচালা দুর্গাপ্রতিমা একটু ভিন্ন প্রকৃতির। এখানে দেবী দুর্গার পাশে লক্ষ্মী সরস্বতীর স্থান অপরিবর্তিত থাকলেও গণেশ ও কার্তিকের স্থান বদলেছে। এখানে দুর্গার বাঁদিকে গণেশ রয়েছে। এই স্থান পরিবর্তনের নেপথ্যে রয়েছে অলৌকিক ঘটনা। তবে মা দুর্গার ছেলেমেয়েদের অবস্থান যাই হোক না কেন পরম্পরা মেনে একই মৃৎশিল্পীর বংশধর সাহাবাড়ির প্রতিমা গড়ছেন। বংশপরম্পরায় পুজো করে আসছেন একই পরিবারের পুরোহিতরা।
[আরও পড়ুন: এবার পুজোয় আপনিও দুর্গা কিংবা অসুর, জানেন কীভাবে?]
এই বাড়ির বর্তমান পুজো কর্তা কালীকৃষ্ণ সাহা রায় জানান, ঠাকুরদা বনমালী সাহা প্রথম এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন। প্রথমদিকে প্রতিমার স্বাভাবিক অবস্থান ছিল। এক অলৌকিক ঘটনার কারণে প্রতিমার অবস্থান বদলে যায়। তিনপুরুষ আগে এক বছর পুজোয় মৃৎশিল্পী নিয়ম মেনে দেবী দুর্গার বাঁদিকে কার্তিক ও ডান দিকে গণেশকে রেখেছেন। পরেরদিন সকালে দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী নিজেদের জায়গাতে থাকলেও কার্তিক ও গণেশের অবস্থান বদলে গিয়েছে। মৃৎশিল্পী এই দৃশ্য দেখে ফের আগের অবস্থানে কার্তিক ও গণেশকে ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু পরের দিন সকালে পুনরায় কার্তিক-গণেশের অবস্থান বদলে যায়। ব্যাপারটি গৃহকর্তা বনমালী সাহাকে জানান ওই মৃৎশিল্পী। সেই থেকে এভাবেই সাহাবাড়ির দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। এই বাড়িতে মায়ের ভোগে থাকে দুধের তৈরি নানা উপকরণ।