মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য: শনিবারের পরিস্থিতিটা দেখে সত্যি খুব নস্ট্যালজিক হয়ে পড়ছি। মনে পড়ে যাচ্ছে আমার কোচিং জীবনের অন্যতম স্মরণীয় সেই দিনের কথা! ইস্টবেঙ্গলের প্রথম জাতীয় লিগ জেতার মরশুমেও শেষ দিনে লিগের ফয়সালা হয়েছিল। ম্যাচের আগে আমাদের টিম ছিল এক নম্বরে। মাত্র এক পয়েন্ট এগিয়ে ছিলাম মোহনবাগানের থেকে। জানতাম একটা ছোট্ট ভুল মানেও ট্রফিটা হয়তো মোহনবাগানের ঘরে চলে যেতে পারে। সেবারের আগে পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গল জাতীয় লিগ পায়নি। যার জন্য চাপটা দ্বিগুণ ছিল। সমর্থক হন বা ক্লাবকর্তা। সবাই আশা করে ছিলেন কেরল থেকে প্রথমবার জাতীয় লিগ জিতে ফিরবে ইস্টবেঙ্গল।
[ফ্রি-কিক থেকে দুর্দান্ত গোল সোনির, আই লিগের শেষ ম্যাচে জয় পেল মোহনবাগান]
শেষ দিন এসিবিটি-র সঙ্গে সেই ম্যাচে আমি প্রায় সারাক্ষণ ইস্টবেঙ্গল টাচলাইনে দাঁড়িয়ে। কিন্তু মন পড়েছিল মোহনবাগান-আইটিআই ম্যাচে। প্রতি মুহূর্তে ভাবছি কী চলছে মোহনবাগান ম্যাচে? কর্তারা বারবার খোঁজ নিচ্ছিলেন ওই ম্যাচে রেজাল্ট কী যাচ্ছে? হাফটাইমে ড্রেসিংরুমেও আমার ফুটবলাররা শুধু জিজ্ঞেস করছে, কোচ মোহনবাগান কী জিতছে? জবাবে শুধু বলেছিলাম, তোমরা নিজেদের খেলা খেলো। অন্য ম্যাচ নিয়ে ভেবো না।
সত্যি বলতে সেদিন ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত খুবই নার্ভাস ছিলাম। ফুটবলারজীবনেও এতটা টেনশনে থাকিনি কোনওদিন। কিন্তু আমার আসল চ্যালেঞ্জ ছিল ফুটবলারদের চাপমুক্ত রাখা। জানতাম ফুটবলাররা যদি ভাবে কোচ টেনশনে আছে তা হলে সেটার প্রভাব মাঠে ওদের খেলায় পড়বেই। দিনের শেষে আমরা এক পয়েন্টে এগিয়ে থেকেই লিগ জিতেছিলাম।
আলেজান্দ্রোও যেন একইরকম পরিস্থিতিতে। এমনকী ওর জন্য রাস্তাটা আরওই কঠিন। কারণ এবারের ইস্টবেঙ্গল কোচের নিজের হাতে কিছু নেই। অন্য ম্যাচে চেন্নাই সিটি যদি আজ জিতে যায় তা হলে ইস্টবেঙ্গলের আর কিছুই করার থাকবে না। আমি এবার আই লিগে ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ যতটুকু টিভিতে দেখেছি তাতে মনে হয়েছে আলেজান্দ্রো খুবই ঠান্ডা মাথার কোচ। কিন্তু তাতেও কোনও সন্দেহ নেই যে আজ ও নিজেও চাপে থাকবে। কিন্তু আমার একটাই পরামর্শ, নিজের সেই চাপটা তোমার ড্রেসিংরুমকে বুঝতে দিও না আলেজান্দ্রো।
[মরশুম শেষের আগেই আলেজান্দ্রোর সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়াল ইস্টবেঙ্গল]
গত ক’দিন প্রায় নিয়মিত আমাকে সবাই প্রশ্ন করছে, ইস্টবেঙ্গল কি পারবে আই লিগ জিততে? আমি শুধু সমর্থক হলে বলতাম, হ্যাঁ পারবে। কিন্তু আমি নিজেও ফুটবল খেলেছি। তাই যুক্তি দিয়ে পরিস্থিতিটা বিচার করছি। আর যুক্তি দিয়ে বিচার করলে বলতেই হচ্ছে, ফেভারিট চেন্নাই সিটি। হ্যাঁ, ফুটবল মানেই অঘটন ঘটে। কিন্তু ভুললে হবে না আজ চেন্নাইয়ের ঘরের মাঠে ম্যাচ। তার উপর সামনে এমন এক মিনার্ভা যারা না আছে অবনমন বাঁচানোর লড়াইয়ে। না চ্যাম্পিয়নশিপ দৌড়ে। মানে মিনার্ভার আজকের ম্যাচে বাড়তি মোটিভেশন নেই। চার্চিলের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে চেন্নাই হেরেছে ঠিকই। কিন্তু সেটা অ্যাওয়ে ম্যাচ ছিল। আর মিনার্ভাও চার্চিল নয়। চেন্নাই যেমন অ্যাটাকিং ব্র্যান্ডের ফুটবল খেলে তাতে মিনার্ভা কি গোল খাওয়া আটকাতে পারবে? মনে হয় না। ইস্টবেঙ্গলকে সল্টলেক স্টেডিয়ামে মিনার্ভা এবার হারিয়েছিল। কিন্তু তখন ওরা লিগের শুরুতে বাড়তি মোটিভেটেড!
ইস্টবেঙ্গলেরও আজ অবশ্য শেষ ম্যাচে খুব সমস্যা হওয়ার কথা নয়। গোকুলামও শক্তিশালী দল নয়। ইস্টবেঙ্গল হারবে না ম্যাচটা। কিন্তু তাতেও লিগ জিততে পারবে কি? যুক্তি দিয়ে বললে আশা খুব কম। ইস্টবেঙ্গল শেষ দিন অবধি লড়াই নিয়ে গিয়েছে তাতে দলটার মানসিকতার প্রশংসা করতে হবে। কিন্তু লিগ জিততে যেরকম ধারাবাহিকতার দরকার পড়ে সেটা দেখাতে পারেনি। এমন নয় ইস্টবেঙ্গল সুযোগ পায়নি। মরশুমের প্রথম দিকে টানা তিনটে হারের পরেও সুযোগ এসেছিল। কিন্তু শেষ দুটো হোম ম্যাচ ড্র করে লিগ প্রায় চেন্নাইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। বিরাট অঘটন না ঘটলে চেন্নাই লিগটা ফসকাবে না।
তবে শেষ দিনে এসে এসমস্ত কিছু নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই ইস্টবেঙ্গলের। যতটুকু নিজেরা করতে পারবে করে এসো। আর আগেই বললাম না, অঘটনও ঘটে। তাই ইস্টবেঙ্গল যেন আশা রাখে এমনই কিছু হবে। কেরলেই ইস্টবেঙ্গল কোচ হিসেবে জিতেছিলাম জাতীয় লিগ। কাকতালীয় ভাবে আজও কেরলে খেলা ইস্টবেঙ্গলের। আর যদি অলৌকিক কিছু ঘটে তা হলে আমার থেকে বেশি খুশি আর কেউ হবে না!
The post দেড় দশক পর লিগজয়ের হাতছানি, আজ ভাগ্যপরীক্ষা ইস্টবেঙ্গলের appeared first on Sangbad Pratidin.