জাতপাতের অঙ্ক মোটামুটি অপরিবর্তিত থাকলেও নীতীশ কুমারের প্রতি মহিলাদের আস্থা এবারও ভোটে এনডিএ-র জয়ের চাবিকাঠি হয়েছে।
বিহারে চতুর্থবারের জন্য নীতীশ কুমার সরকারের প্রত্যাবর্তন হল। নীতীশ আগে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মোট ন’বার শপথ নিয়েছেন। ভোটে বড় জয় পেলেও দশমবারের জন্য যে তিনিই পাটনার মসনদে বসার শপথ নিচ্ছেন, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যায় না। এবার বিহারের মানুষ এমনভাবে রায় দিয়েছে যাতে নীতীশকে বাইরে রেখে বিজেপি রামবিলাস পাসোয়ানের দল এলজিপি ও এনডিএ-র বাকি শরিকদের নিয়ে অনায়াসে সরকার গঠন করতে সক্ষম। তবে এখনই বিজেপি সেই পথে হাঁটবে না, অনুমান। এখন যদি বিজেপি না-ও চায়, অদূর ভবিষ্যতে যে তারা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার হবে বা হতে চাইবে, তা মহারাষ্ট্র-সহ অন্য কয়েকটি রাজ্যের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়। ফলে আগামী পাঁচ বছর নীতীশের মোটেও স্বস্তিতে কাটবে না। পদ্মকাঁটা গলায় নিয়েই তাঁকে চলতে হবে।
আদর্শগতভাবে নীতীশের দলের বিজেপির ভিন্ন মেরুতে অবস্থান। গত দু’-দশকে নীতীশ একাধিকবার বিজেপির সঙ্গ ছেড়েছেন। এবার অবশ্য তাঁর হাতে সেই বিকল্পটা থাকছে না। কারণ তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন ‘মহাগঠবন্ধন’ এতটাই কম সংখ্যক আসন পেয়েছে যে নীতীশ তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা জোগাড় করতে পারবেন না। গত বিধানসভা ভোটে নীতীশের ক্ষমতা খর্ব করতে বিজেপি রামবিলাস-পুত্র চিরাগকে এনডিএ-র বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিয়েছিল। এবার চিরাগ এনডিএ জোটে রয়েছেন। তাঁর শক্তিও যথেষ্ট বেড়েছে। আগামী দিনে বিহারের রাজনীতিতে নীতীশের বিকল্প হিসাবে চিরাগকে খাড়া করে তাঁকে দিয়ে তারা দলিত ও অতি পিছিয়ে পড়া বর্গের ভোট একজোট করতে চায় বিজেপি। এবার এই দুই বর্গের ভোট এনডিএ জোটের দিকে টানতে নীতীশ ও চিরাগ, দু’জনেই কার্যকরী ছিলেন। সে-কারণে ২০০-র বেশি আসন জিততে সমস্যা হয়নি এনডিএ-র।
শতাংশর হিসাবে এবার তেজস্বীর দল আরজেডি সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে। মোটামুটি সমসংখ্যক আসনে লড়ে আরজেডি গত বিধানসভা নির্বাচনের মতোই ভোট পেয়েছে। যদিও তাদের আসন এবার একেবারে তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে। আরজেডির ভোট শতাংশ থেকে স্পষ্ট যে তাদের যাদব ও মুসলিম ভোট এবারও অটুট। শতাংশের বিচারে বিজেপির ভোট সামান্যই বেড়েছে। গত বিধানসভা ভোটের তুলনায় প্রায় চার শতাংশ ভোট বাড়িয়েছে নীতীশের দল। এবার বিহারে মহিলা ভোটের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। নীতীশের ঝুলিতে এই অতিরিক্ত মহিলা ভোট গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। মদ নিষিদ্ধ ও মহিলাদের জন্য একাধিক কল্যাণমূলক প্রকল্প করে নীতীশ আগেই মহিলাদের মন জয় করেছিলেন। তাঁর আমলে বিহারের আইন-শৃঙ্খলারও প্রভূত উন্নতি হয়। যেকারণে তাঁকে ‘সুশাসন বাবু’ বলে ডাকা হয়। জাতপাতের অঙ্ক মোটামুটি অপরিবর্তিত থাকলেও ‘সুশাসন বাবু’র প্রতি মহিলাদের আস্থা ও ভরসা এবারও ভোটে এনডিএ-র জয়ের চাবিকাঠি হল।
