চিন-আমেরিকার হৃদ্যতার অর্থ অর্থনৈতিক ওরাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হবে ভারত। দু’দেশের ‘জি টু’গঠনে তেমনই আভাস।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও শি জিনপিংয়ের শীর্ষ বৈঠকের মধ্য দিয়ে নরেন্দ্র মোদির কূটনীতি ফের বড়সড় ধাক্কা খেল। দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠক বিশ্বের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে যে প্রভাব ফেলার ইঙ্গিত দিচ্ছে তা সাম্প্রতিককালে ঘটেনি। দীর্ঘদিন অাগে বারাক ওবামা ও হু জিনতাও যে ‘জি টু’ ধারণার জন্ম দিয়েই তাকে কবরস্থ করেছিলেন, সেটাই ট্রাম্প-শি বৈঠকের পর বাস্তবায়িত হতে চলেছে। যদি এই দু’দেশ মিলে ‘জি টু’ গঠন করে তাহলে তা বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনীতির একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করার পথ প্রশস্ত করবে। ভারতের পক্ষে এমন ঘটনা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়, বিপজ্জনকও বটে।
শি-র সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের পরই ট্রাম্প ঘোষণা করেন, আমেরিকায় বিরল খনিজের রপ্তানি বাড়াবে চিন। তাছাড়া চিন আমেরিকা থেকে বছরে ২.৫ কোটি টন সয়াবিন ও বহু কৃষিপণ্য আমদানি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। চিন থেকে অামদানিকৃত ফেন্টিনাইল রাসায়নিকের উপর শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ হতে চলেছে। এদিকে ভারত ও ব্রাজিলের উপর মার্কিন শুল্ক বর্তমানে ৫০ শতাংশ! ফলত ভারতীয় পণ্যের কদর কমবে মার্কিন বাজারে।
ট্রাম্প শুল্ককে হাতিয়ার করেছেন অর্থনৈতিক স্বার্থে নয়। তাঁর উদ্দেশ্য রাজনৈতিক। ব্রাজিলের উপর শুল্ক চাপ দিয়ে তিনি যেমন সেদেশের প্রাক্তন দক্ষিণপন্থী প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকে অাইন-অাদালত থেকে মুক্ত করতে চান, তেমন তিনি যে কোনও মূলে্য ভারতের রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে আগ্রহী। সেই ভয়ে ভারত ইতিমধে্যই তেল কেনা বন্ধ করছে। যার জের পড়তে চলেছে দেশে পেট্রোপণ্যের দামে। পেট্রোল-ডিজেলের দাম আবার বাড়া শুরু করলে মূল্যবৃদ্ধি লাগামছাড়া হতে বাধ্য।
ট্রাম্প-শি বৈঠকের পর ‘জি টু’ ধারণাকে সামনে আনার অর্থ, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় শান্তি স্থাপণে গঠিত চতুর্দেশীয় অক্ষ ‘কোয়াড’-কে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া। যে ‘কোয়াড’-এর অন্যতম অংশীদার ভারত।
প্রসঙ্গত, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় চিনের আগ্রাসন রুখতেই কোয়াড গঠিত হয়। ট্রাম্পের প্রথম দফার শাসনে কোয়াড-এর পুনরুত্থান ঘটলেও সদ্য প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে কোয়াড নতুন মাত্রা পায়।
কোয়াড-এর আগামী সম্মেলন ভারতে হওয়ার কথা। কিন্তু এই সম্মেলনে ট্রাম্প যোগ দেবেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। অথচ শি-র সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের পর ট্রাম্প ঘোষণা করে দিয়েছেন তিনি অাগামী এপ্রিলে বেজিং যাচ্ছেেন। ওয়াশিংটন সূত্রে খবর, সেটাই সম্ভবত ট্রাম্পের পরবর্তী এশিয়া সফর। ট্রাম্প বেজিং ঘুরে যাওয়ার পর শি যাবেন ওয়াশিংটনে।
মোদির ‘বিয়ার হাগ’-এর উপর দাঁড়িয়ে যদি দেশের বিদেশনীতি রচিত হয়, তা হলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পরেও আমরা দেখেছি পাকিস্তানকে নির্বান্ধব করা যায়নি। এই অবস্থায় চিন-আমেরিকা হাত মেলালে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে আরও কোণঠাসা হওয়াই ভারতের ভবিতব্য।
