shono
Advertisement
Donald Trump

শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য স্থাপনের চেষ্টা ট্রাম্প প্রশাসনের? আমেরিকার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে?

Published By: Kishore GhoshPosted: 05:58 PM Sep 18, 2025Updated: 05:58 PM Sep 18, 2025

দাসপ্রথার সমুদয় ‘এগ্‌জিবিটস’ মুছে দেওয়ার নির্দেশ ট্রাম্প প্রশাসনের। তবে কি অবিমিশ্র শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য স্থাপনের চেষ্টা চলছে!

Advertisement

মোহনপুরা রিজার্ভ ফরেস্টের দক্ষিণে মাইল পনেরো-কুড়ি দূরে একটি বিস্তৃত শাল ও বিড়ি পাতার জঙ্গল নিলাম হবে। তন্মধ্যে বিড়ি পাতার জঙ্গলটি কিনে নেওয়ার ‘বার্তা’ পেয়ে সত্যচরণ বেরিয়ে পড়ে– নিলামের আগে জঙ্গলটি একবার দেখে নেওয়ার জন্য। সঙ্গে পাটোয়ারি বনোয়ারীলাল। জঙ্গলের বর্তমান মালিকের যে খাস ভৃত্য, বুদ্ধু সিং, সে ঘটনাপ্রসঙ্গে জানায়, এ অঞ্চলের আদিম জনজাতির রাজার বংশধর এখনও নাকি বেঁচে।

এদিকের যত পাহাড়ি আদিম জাতি, প্রত্যেকে তাঁকে ‘রাজা’ বলে মানে। নাম: দোবরু পান্না বীরবর্দী। ‘খুব বৃদ্ধ ও খুব গরিব’। সত্যচরণের কৌতূহল হয়। সে রাজসন্দর্শনে যেতে চায়। সঙ্গে নেয় কিছু ফলমূল, গোটা দুয়েক বড় মুরগি। নজরানাস্বরূপ। যার যা প্রাপ্য তাকে তা না দিলে যে কর্তব্যে হানি হয়। রাজসমীপে গিয়ে আলাপ হয় রাজকন্যে ভানুমতীর সঙ্গেও।

দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পরে, সত্যচরণের সুযোগ হয়, রাজা দোবরু পান্না বীরবর্দীর পূর্বপুরুষদের রাজপ্রসাদ দেখতে যাওয়ার। আদতে তা একটি প্রকাণ্ড বড় গুহা। ছাদ বেশ উঁচু নয়। ভিতরে বাদুড়, শেয়াল, ভাম কী নেই! চামসে গন্ধ শ্বাস যেন রোধ করতে চায়। তারপর রাজা নিয়ে যান সত্যচরণকে রাজবংশের সমাধি দেখাতে। এক বিঘা জমি জুড়ে বটের অসংখ্য সরু-মোটা ঝুরি নেমেছে। আর সেখানে চারদিকে বাটনাবাটা শিলের মতো নানা আকারের পাথর ছড়ানো। এক-একটি পাথরের তলায় রাজপুরুষের এক-একজনের দেহ শায়িত। স্থানটির গাম্ভীর্য, রহস্য ও প্রাচীনত্ব অবর্ণনীয়।

এখান থেকে সত্যচরণের মনে অন্য চিন্তার উদয় ঘটে। সে বুঝতে পারে, সে বিজয়ী জাতির প্রতিনিধি। উন্নতনাসিকা, আর্যকান্তির অধিকারী। সভ্য, শিক্ষিত, আধুনিক। তার অর্জিত জ্ঞান তাকে দোবরু পান্না বীরবর্দীকে নেহাত ‘বুড়ো সাঁওতাল’ বলে ভাবতে বাধ্য করছে। অনার্য রাজপ্রাসাদকে মনে হচ্ছে সাপখোপ ও ভূতের আড্ডা। এই তো ইতিহাসের বিরাট ট্র্যাজেডি! যে জয়ী হয়, সভ্যতায় কেবল তার পদচিহ্ন আঁকা থাকে। যে হারে, পর্যুদস্ত হয়, সভ্যতা তাকে মুছে ফেলে প্রায়। যেমন, সাঁওতাল নৃপতি দোবরু পান্না বীরবর্দীর অস্তিত্ব কার্যত অবলুপ্ত হয়েছে সভ্যচেতনার ফ্রেম থেকে।

‘আরণ্যক’ উপন্যাসের একাদশ অধ্যায়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিহাসের যে ‘বিরাট ট্র্যাজেডি’-র উল্লেখ করেছেন সত্যচরণের জবানিতে– হালের আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে তাই যেন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে। মার্কিন প্রশাসন হুকুম দিয়েছে, দাসপ্রথার প্রচলন ছিল, এমন সব নথি-ছবি সেখানকার যাবতীয় সংরক্ষণাগার থেকে মুছে দিতে হবে, কেননা তা নাকি আমেরিকার সম্মানকে বিশ্বের দরবারে ধুলোয় লুটিয়ে দিচ্ছে। ইতিহাসের সাপেক্ষে দেখলে, দাসপ্রথা আমেরিকায় ছিল। শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য ছিল। দাসপ্রথার বিলোপ ঘটানো হয়, এও ঐতিহাসিক সত্য। তাহলে এখন সেসব ‘এগজিবিট্‌স’ নতুন করে মুছে দিলে বাড়তি কোন সত্যের প্রতিষ্ঠা ঘটবে? আমেরিকার ভাবমূর্তি কি উজ্জ্বল হবে? হায় ইতিহাস!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
Advertisement