shono
Advertisement
Firecrackers

নিষিদ্ধ প্রেমের মতো টান নিষিদ্ধ বাজির, সরকারি নিষেধে কাজ হবে?

মুক্তির পথ কী?
Published By: Kishore GhoshPosted: 05:33 PM Oct 20, 2025Updated: 05:34 PM Oct 20, 2025

‘নিষিদ্ধ’ বাজির টান এ-দেশে ‘নিষিদ্ধ’ প্রেমের টানের মতোই। মুক্তির পথ শুধুমাত্র সরকারি নিষেধ ও পুলিশি শাসন কি দেখাতে পারবে কোনও দিন?

Advertisement

প্রতি বছরের মতো এ-বছরও বাজির খেলায় তাণ্ডব করতে তৈরি কলকাতার আবাসনগুলি। তাদের ঝেঁাক ‘নিষিদ্ধ’ বাজির প্রতি। যত দামি বাজি, ততই বেশি তার হুঙ্কার। আর এ-দেশে অন্তত বাজিতে বাজিমাত করতে চাই শব্দের তাণ্ডব। বিদেশের আকাশে যে-বাজির রং আর আলোর মধুর বিস্তার আমাদের মুগ্ধ করে, সেই মাধুর্য শব্দহীন। হাজার-হাজার মানুষ নদীর তীরে কিংবা সরোবরের ধারে দঁাড়িয়ে উপভোগ করে দীর্ঘ সময় ধরে আকাশের গায়ে বাজির নিঃশব্দ অলীক আলপনা। মনে হয়, আকাশের ক‌্যানভাসে শব্দহীন, বারুদের-গন্ধহীন, সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত রং তুলির কান্তিময় শিল্পিত প্রকাশ!

এ-দেশে দীপাবলির রাত মানেই আতঙ্ক। এই শব্দতাণ্ডবের অসহ‌্য আতঙ্ক শুধু তো মানুষের নয়। শহরের সমস্ত কুকুর, বেড়াল, পাখি– সব প্রাণীর মধে‌্যই ছড়িয়ে পড়ে সহে‌্যর মাত্রাছাড়ানো শব্দের ভীতি ও যন্ত্রণা। প্রতি বছরেই কালীপুজোর রাতের গায়ে সেঁটে দেওয়া হয় এই সরকারি ঘোষণা, মনে রাখবেন শুধুমাত্র সবুজ বাজিতেই আবদ্ধ থাকা আবশি‌্যক। সবুজ বাজি ছাড়া অন‌্য সব বাজি ‘নিষিদ্ধ’।

এবং নিষিদ্ধ বাজি ফাটিয়ে চত্বরকঁাপানো বাজিমাত দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রশ্ন হল, ‘নিষিদ্ধ’ বাজির প্রাবলে‌্য যারা নিজেদের অর্থশক্তি, সামাজিক দাপট, রাজনৈতিক প্রতাপ এবং মস্তানির অতিভূমি দেখাতে চায়, তাদের কাছে নিষিদ্ধ বাজির টান নিষিদ্ধ প্রেমের টানের মতোই। নিষিদ্ধ বাজি ফাটানোর পরমানন্দে তারা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে তোয়াক্কাহীন
হয়ে ওঠে।

একমাত্র দূষণহীন সবুজ বাজিই ফাটবে– এই সরকারি আদেশে তেমন জোর কি থাকে? খবরে প্রকাশ, বহুতল আবাসনগুলির ধারেপাশে রাতারাতি গজিয়ে উঠেছে বাজির দোকান। এবং কোন বাজি দূষণমুক্ত আর কোন বাজির মধে‌্য নিহিত শব্দতাণ্ডবের বারুদ-বিপদ, সাধারণ মানুষ বুঝবেই বা কী করে? তাছাড়া বাজির বাজারে সবথেকে বেশি আধিপত‌্য তো বেপরোয়া শব্দবাজিরই। যেসব বাজিকে সহজেই চেনা যেতে পারে ‘সবুজ’ বা ‘দূষণমুক্ত’ বাজি বলে, তাদের গায়েও কিন্তু ‘এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স’ বা ‘একিউআই’ কোডের আব‌্যশিক সার্টিফিকেট থাকে না। কিংবা নিষিদ্ধ বাজির গায়ে লাগানো থাকে নকল কোড! সুতরাং শহরে দীপাবলির ক’দিন নিষিদ্ধ বাজির পর্যাপ্তি, হুঙ্কার এবং দানবিকতা চলতে থাকবে। ধরপাকড়ও কিছু হবে নিশ্চিত।

কিন্তু নিষিদ্ধ বাজির উল্লাস ও মাতোয়ারার টান থেকে মুক্তির পথ শুধুমাত্র সরকারি নিষেধ ও পুলিশি শাসন কি দেখাতে পারবে, কোনও দিন? হয়তো বেশিরভাগ মানুষই প্রবল শব্দ বিস্ফোরণের উল্লাসকে পৈশাচিকই মনে করে। কিন্তু বারুদের দূষণ আর শব্দের বিস্ফোরণে ডুবে যায় লক্ষ-লক্ষ মানুষের যন্ত্রণার ভীত প্রতিবাস। তার সঙ্গে আছে বারুদে বিষাক্ত হয়ে ওঠে শহরের বাতাস। ইতিমধে‌্যই ৩০০ পেরিয়েছে কলকাতার বাতাসে ‘একিউআই’, যা থাকা উচিত ৫০-এর নীচে। কালীপুজোর রাতের শহরের বাতাসদূষণ কোন পরোয়াহীন মাত্রাছাড়া উচ্চতায় পৌঁছবে, ভাবতে পারছেন? সেই বিষাক্ত বায়ু বুকে টেনে নিতে বাধ‌্য হবে কত হার্ট এবং ফুসফুসের রোগী, কত শ্বাসের ক্রনিক কষ্টে ভোগা মানুষ, কত সদে‌্যাজাত শিশু!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • এ-দেশে দীপাবলির রাত মানেই আতঙ্ক।
  • একমাত্র দূষণহীন সবুজ বাজিই ফাটবে– এই সরকারি আদেশে তেমন জোর কি থাকে?
Advertisement