shono
Advertisement

Breaking News

Artistic Freedom

ঘৃণাভাষণের কাদাচার ও শিল্পাচার

শিল্পাচারকে স্বাগত জানাবে না বাঙালি? 
Published By: Kishore GhoshPosted: 05:34 PM Sep 04, 2025Updated: 05:34 PM Sep 04, 2025

ব্যক্তি-আক্রমণ ও ঘৃণাভাষণের কাদাচার সরিয়ে যদি রাজনৈতিক সমালোচনা আসে শিল্পের মোড়কে, তা কি বাঙালি স্বাগত জানাবে না! 

Advertisement

লেখক কে বা কারা? “সবার নয়, এক-দু’জনের নাম জানলেই হবে।” বই কী? ‘আড়েবহরে সমৃদ্ধ এমন এক বস্তু, যার বিষয় যা-খুশি হতে পারে।’ টুপি কী? ‘যা পুরুষ মানুষের মুখাবয়বকে ধাঁচা প্রদান করে।’ লাম্পট্য কী? ‘অবিবাহিতদের সব রোগের উৎস।’ বিবাহবিচ্ছেদ কী? ‘যদি জোসেফিনের সঙ্গে নেপোলিয়নের বিয়ে না-ভাঙত, তিনি এখনও সিংহাসনে অধিষ্ঠিত থাকতেন।’ ডিম কাকে বলব? ‘জীবনের শুরু কীভাবে হয়েছে– তা নিয়ে সব দার্শনিক কূটতর্কের সূত্রপাত ঘটে যেখানে।’ আনন্দ কাকে বলে? ‘সর্বসমক্ষে আলোচনা করা উচিতই নয়। শব্দটি অশ্লীল।’ ফ্যাক্টরির সংজ্ঞা কী? ‘পড়শিদের জিজ্ঞেস করো।’ জিনিয়াস কে? ‘এত আদিখ্যেতার কী আছে! স্নায়ুরোগের ব্যাপারস্যাপার।’ কৃতজ্ঞতা বলতে কী বোঝায়? ‘উল্লেখ করার দরকার নেই!’ এমনভাবে শব্দ ধরে ধরে তাদের নিত্যনতুন সংজ্ঞার্থ তৈরি করেছিলেন ফরাসি ঔপন্যাসিক গু্যস্তাভ ফ্লবের ১৯১১-’১৩ সালের মধ্যে। প্রতিটি শব্দে ঝলসে ওঠে তির্যক ভঙ্গি, কষাঘাতের ধ্বনি, তীব্র শ্লেষ। ‘দ্য ডিকশনারি অফ অ্যাকসেপ্‌টেড আইডিয়াজ’ নামে ইংরেজিতে তা অনূদিত হয়েছে।

সমাজব্যবস্থার প্রচলিত ছককে আঘাত করার বাসনা থেকে যে এমন সংজ্ঞার্থবাহী অভিধান রচনার চেষ্টা, তা নতুন করে বলে দিতে হয় না। তা কখনও ধাবিত হয়েছে সমষ্টির উদ্দেশ্যে তো কখনও দেশ ও স্থায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতি। ‘ইতালি’ সম্বন্ধে যেমন লেখা হয়েছিল– ‘বিয়ের পরে পরেই যাওয়া উচিত। তবে লোকে যত ভাল বলে ততটাও নয়, হতাশা জাগতে পারে।’ আবার ‘সুবিচার’ সম্বন্ধে বলা হয়েছে– ‘অযথা তাড়াতাড়ি করার দরকার নেই।’ অর্থাৎ সুবিচার যে সোনার পাথরবাটির মতোই অলীক ও ধরাছোঁয়ার বাইরে, তা নির্লিপ্তভাবে বলে দেওয়া হল। সবসময় যে শব্দার্থের নব-ব্যাখ্যায় চটজলদি হাসি জাগে এমন নয়, বরং তা আক্রমণ করে খানিক বাদে, ময়াল সাপের মতো সন্তর্পণে। যেমন– ‘আলস্য’ সম্বন্ধে বলা হয়েছে–
‘কিছু কেস রয়েছে যা বহু বছর ধরে স্থায়ী হয়েছিল।’

সমাজের প্রকৃত অবস্থা বোঝার জন্য এমন একটি আয়নার প্রয়োজন হয় বইকি! সম্প্রতি অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য ও তাঁর সঙ্গীরা একযোগে ‘হুলি-গান-ইজম’ ব্যান্ডের পরিবেশনার সূত্রে সমাজমাধ্যমে আলোড়ন তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্য আদ্যন্ত রাজনৈতিক। তাঁদের ‘লক্ষ্য’ রাজনীতির ব্যক্তিত্ববর্গ। কে কীভাবে এই উদ্যাগকে গ্রহণ করবেন, সে বিষয়ে স্বাধীন পরিসর রয়ে যায়। তবে দু’টি বিষয়ের প্রতি নজর দেওয়া দরকার। প্রথমত, এটি শৈল্পিক অভিপ্রকাশ। শিল্পীর নিজস্ব চিন্তা নিরপেক্ষভাবে বিকশিত হবে, প্রত্যাশিত। দ্বিতীয়ত, এখানে হাস্যরসের যে-উদ্ভাস ঘটেছে, তা বাঙালি জীবনের শাশ্বত অঙ্গ। বর্তমানে রাজনীতিতে ব্যক্তি-আক্রমণ ও ঘৃণাভাষের সংস্কৃতি যখন ‘কমন’ অভ্যাস হয়ে উঠছে– তখন শিল্পের মধ্যবর্তিতা মেনে– সমালোচনা করার অনুশীলন তৈরি হলে– তাকে স্বাগত জানানো উচিত বইকি! ফ্লবের তো সে-কারণে এখনও পাঠ্য।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
Advertisement