আর. জি. কর ধর্ষণের এফআইআরে ঘটনার ব্যাখ্যা ‘উইলফুল রেপ’ হিসাবে নথিভুক্ত। অথচ, আইনে এমন শব্দবন্ধের অস্তিত্বই নেই!
খবর: আর. জি. কর হাসপাতালের সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনাটিকে টালা থানার এফআইআর নম্বর ৫২-তে এইভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে: ‘আননোন মিসক্রিয়েন্ট্স কমিটেড উইলফুল রেপ উইথ মার্ডার’, ‘উইলফুল’ শব্দটি থমকে দেয়, জাগায় বিভ্রান্তি এবং প্রশ্ন। প্রথম যে-প্রশ্ন চমকে ওঠে মনের মধে্য: ‘উইল-লেস’ রেপ বলে কি কিছু হয়, বা আদৌ সম্ভব? অক্সফোর্ড রেফারেন্স ইংলিশ ডিকশনারিতে ‘উইল-লেস’ শব্দটির পৃথক এনট্রি আছে। কিন্তু তার কোনও অর্থ-ব্যাখ্যা নেই। ধরে নেওয়া যায়, যা কিছু লক্ষ্যহীন, এলোমেলো,
তা-ই ‘উইল-লেস’। ‘উইলফুল’ শব্দটির প্রতিও ব্যাখ্যায় এবং সংজ্ঞায় আকীর্ণ অভিধানটি বিশেষভাবে উদাসীন।
মজার ব্যাপার, এই ব্রিটিশ অভিধানে পৃথক এন্ট্রির গৌরবে ‘উইলফুল’ শব্দটি এসেছে এই বানানে: ‘willful’। এবং পাশে লেখা হয়েছে, ইউএস ভ্যারিয়্যান্ট অফ ‘wilful’। কৌতূহল জাগে, পুলিশকর্তা কোন বানানে এফআইআর-এ ‘উইলফুল রেপ’ লিখেছেন। কারণ, মার্কিন বানানে এই শব্দের অর্থ দু’রকম। এক, ‘ডান ডেলিবারেটলি অলদো দ্য পার্সন ডুইং ইট নোজ দ্যাট ইট ইজ রং’। দুই, ‘ডুইং এক্স্যাক্টলি হোয়াট ইউ ওয়ান্ট নো ম্যাটার হোয়াট আদার পিপল থিঙ্ক অর সে’। অর্থাৎ খুব তেজি একটি বিশেষণ, যার ঝঁাজ উপেক্ষা করার উপায় নেই। যারা এই ‘উইলফুল রেপ’ করেছে, তারা জানে এই কাজ কত দূর ঘৃণ্য ও অন্যায়, কিন্তু তাদের কিচ্ছু এসে-যায় না কে কী ভাবল, তারা বিসর্জন দিল তাদের সব অন্যায় বোধ।
[আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের মধ্যে NIA আধিকারিকের মেয়ের রহস্যমৃত্যু! চাঞ্চল্য যোগীরাজ্যে]
তারা বেপরোয়া বুড়ো আঙুল দেখাল আইনকে। তবু আইনের ভাষায়, এ-দেশে এবং সম্ভবত ব্রিটেনেও নাকি শব্দটির তেমন কোনও জুতসই প্রয়োগ নেই। এ-দেশের আইনজ্ঞরা নাকি বলেছেন, আইনের পরিভাষায় ‘উইলফুল রেপ’ বলে কিছু নেই! আর এ-কথাও ঠিক, অনিচ্ছাকৃত ধর্ষণও সোনার পাথরবাটি! সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, ‘অনিচ্ছাকৃত ধর্ষণ’ যখন একটি অসম্ভব ঘটনা, ‘ইচ্ছাকৃত ধর্ষণ’ শব্দবন্ধের সতি্যই তেমন তাৎপর্য অনুভূত হয় না। এখানে ‘ইচ্ছাকৃত’ শব্দটি বিঘ্নিত বিশেষণ। অপপ্রয়োগের দুর্বলতায় অস্পষ্ট। পৃথিবীতে প্রতিদিন যেখানে যত ধর্ষণ ঘটছে, প্রতিটি ধর্ষণের মধে্য পুরুষের জবরদস্তি, বেআইনি বলপ্রয়োগ, যৌন-জুলুম এবং বিকারগ্রস্ত বাসনা থাকছেই থাকছে। সমস্ত ভায়োলেন্স-ই বিকট ইচ্ছার দান। আর ধর্ষণ তো ভায়োলেন্সের শেষ কথা। সুতরাং তাকে শুধুমাত্র ‘উইলফুল’ বললে বোধহয় তার ভিতরের বেআইনি ভায়োলেন্সটাকে কিছুটা আবছাই করে দেওয়া হয়।
[আরও পড়ুন: শান্তিচুক্তির এক মাসের মধ্যে ফের রক্তাক্ত মণিপুর! মেয়ের সামনেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু মায়ের]
সংস্কৃত শব্দ ধর্ষণের মধে্যই লুকিয়ে আছে আর একটি শব্দ: ‘ধর্ষকাম’। যে-শব্দের অর্থ পীড়নের কামনামূলক, বা ইচ্ছাপ্রসূত বিকৃতি। উইল বা ইচ্ছাই সমস্ত পীড়নের গোড়া। ‘অলিপ্সু ধর্ষণ’– এই ভাবনাটাই বিরোধাভাসের চূড়ান্ত নিদর্শন। সব ধর্ষণই লিপ্সু। সুতরাং ‘উইলফুল’ সেই গালফোলানো বিশ্লেষণ, যা কিছুই বলে না। এবং ‘উইলফুল রেপ’ এই কারণেই আইনের পরিভাষায় স্থান পায়নি।