বিরোধীদের অভিযোগ, মোদির আমলে অ-বিজেপি রাজ্য সরকারগুলিকে চাপে ফেলতে রাজভবনের ব্যবহার হচ্ছে টানা। দ্বন্দ্বের নিরসন কোন পথে?
সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের রায়ের পরেও রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে বিলে স্বাক্ষর করা নিয়ে দ্বন্দ্বের অবসান ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হল না। দুই বিচারপতির বেঞ্চ তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দিলেও সাংবিধানিক বেঞ্চ তা খারিজ করে। সংবিধানে এমন সুযোগ নেই উল্লেখ করে পাঁচ বিচারপতি সর্বসম্মতভাবে জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালের সিদ্ধান্তকে কোর্টে বিচারাধীন নয়।
প্রশ্ন: যদি রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত কোর্টে না আনা যায় তাহলে রাজভবনের সঙ্গে রাজ্য সরকারের দ্বন্দ্বের নিরসন হবে। কীভাবে? আইনসভার পাশ করা বিল রাজ্যপাল ফেলে রাখছেন- এই অভিযোগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল তামিলনাড়ু সরকার। তবে অভিযোগ শুধু তামিলনাড়ুর ডিএমকে সরকারের নয়। একই অভিযোগ বাংলার তৃণমূল সরকার ও কেরলের বামপন্থী সরকারেরও। বস্তুত, গত এগারো বছর ধরে দেশের সবক'টি অ-বিজেপি রাজ্য সরকারকেই রাজ্যপালদের নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে কম-বেশি।
বিজেপি-বিরোধীদের সম্মিলিত অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদির আমলে অ-বিজেপি রাজ্য সরকারগুলিকে চাপে ফেলতেই রাজভবনগুলিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে বাংলা, তামিলনাড়ু, কেরল, তেলেঙ্গনায় মাঝেমধ্যেই রাজভবন ও রাজ্য সরকারের বিরোধ চরমে পৌঁছেছে। বাংলায় প্রত্যেকেই জানে যে নানা ইস্যুতে রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের সংঘাত ধারাবাহিক। রাজ্যপালরা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিভূ হিসাবে রাজ্যে কাজ করেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এটা কখনওই কাম্য নয়।
আমাদের দেশে সংবিধানেই কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতার স্ক্রিন করা আছে। যে-বিষয়গুলি রাজ্যের অধীনে, সেখানে নির্বাচিত রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হওয়া উচিত। কেন্দ্রের অধীনে থাকা বিষয়গুলিতে রাজ্যের হস্তক্ষেপ করার কোনও সুযোগ নেই। কিন্তু রাজ্যের বিষয়গুলিতে কেন্দ্র সর্বদা রাজভবনের মাধ্যমে নাক গলানোর চেষ্টা করে থাকে। মোদি-জমানায় সম্ভবত এই হস্তক্ষেপের পরিমাণ অসম্ভব বেড়ে গিয়েছে। এই রাজ্যের বিশ্ববদ্যালয়গুলির উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে যেমন হচ্ছে। এক্ষেত্রে কেন রাজভবনের বক্তব্য থাকবে তার কোনও যুক্তিসঙ্গত উত্তর নেই।
সুপ্রিম কোর্টের দুই সদস্যের বেঞ্চের রায় যে কেন্দ্রের পছন্দ হয়নি বলা বাহুল্য। সে-কারণেই 'প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্স' হয়। রাষ্ট্রপতি দেশের শীর্ষ আদালতের কাছে মোট ১৪টি প্রশ্ন করেছিলেন। সাংবিধানিক বেঞ্চ এর মধ্যে ১১টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। সাংবিধানিক বেঞ্চের উত্তরের পর রাজ্য ও রাজ্যপালের তথা কেন্দ্রের সংঘাতের মাত্রা তীব্র হতে বাধ্য। সুপ্রিম কোর্ট সময়সীমা না দিলেও বলেছে রাজ্যপাল বিল অনন্তকাল ফেলে রাখতে পারবেন না। কিন্তু রাজ্যপাল যদি বিলে স্বাক্ষর না করেন, তাহলে রাজ্য সরকারের কাছে 'বিকল্প' রাস্তা কী? রাজাকে সেই আদালতেই যেতে হবে। অর্থাৎ, প্রতি পদে মামলা হবে। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পক্ষে তা কি স্বাস্থ্যকর?
