বাংলাদেশের বর্তমান চালিকাশক্তি ‘মুক্তিযুদ্ধ’-র প্রতীকগুলি ধ্বংস করে দেশটাকে পাক-হস্তান্তরিত করতে চায়, ফের প্রমাণিত। বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক শক্তির যেটুকু অস্তিত্ব এখনও রয়েছে এরা তাকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইছে।
ফের জ্বলছে বাংলাদেশ। প্রথমেই বলা উচিত, সেখানকার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক হত্যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কিন্তু সেই হত্যাকে সামনে রেখে যেভাবে মৌলবাদী শক্তি সে-দেশের গণতন্ত্র ও সাংস্কৃতিক প্রতীকগুলির উপর হামলা শুরু করেছে তা ভীষণই উদ্বেগজনক। এই ঘটনায় সংখ্যালঘু-সহ একাধিক সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। বাংলাদেশ যে কার্যত পাকিস্তানের মদতপুষ্ট একদল সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গিয়েছে, তা এবারের ঘটনা থেকে অারও স্পষ্ট। দেখা যাচ্ছে, এই সন্ত্রাসীরা অাফগানিস্তানের তালিবানি শক্তির চেয়েও ভয়াবহ। বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক শক্তির যেটুকু অস্তিত্ব এখনও রয়েছে এরা তাকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইছে।
মৌলবাদীদের নিশানায় এসেছে ‘ছায়ানট’, ‘উদীচী’-এর মতো সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। এদের অাক্রমণের কেন্দ্রে নিয়ে অাসার মধে্য এটা পরিষ্কার: ঢাকার মৌলবাদী শক্তি অসাম্প্রদায়িক ও উদারপন্থীদের শিকড়-সহ উপড়ে ফেলতে চায়। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমের দপ্তর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। খুলনায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে একজন সাংবাদিককে। রাজনৈতিক হত্যার বদলা নিতে কেন অাক্রান্ত হবে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং দেশের অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য? এর আগে জুলাই আন্দোলনের সময় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে মৌলবাদীরা বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতার দখল নেয়। ফ্যাসিবাদ-বিরোধিতার কথা বলে তারা সমস্ত মুক্তমনা ও প্রগতিশীলদের মুখ বন্ধ করেছে। তথাকথিত জুলাই ‘অভু্যত্থান’-এর মধ্য দিয়ে শুধু প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং তাঁকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করাই হয়নি, হাসিনা দেশত্যাগ করার পর গত দেড় বছরে বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে হত্যা করা হয়েছে সংখ্যালঘুদের এবং কারাবন্দি করা হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ মুক্তমনাদের।
‘ছায়ানট’ অবশ্য আগেও মৌলবাদী আগ্রাসনের শিকার হয়েছে। বাংলা নববর্ষে তারা ঢাকার রমনার বটমূলে যে অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে, সেখানে একবার বোমা ছুড়ে হত্যালীলা চালায় সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ‘হুজি’। অথচ এই ‘ছায়ানট’ হল বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি অগ্রণী প্রতিষ্ঠান। ছয়ের দশকে পাক শাসকদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে সদ্যপ্রয়াত সনজীদা খাতুন রবীন্দ্রনাথের আদর্শে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ছায়ানট’। সেই ‘ছায়ানট’ ভাঙচুরের ঘটনায় আবারও প্রমাণিত, যে-শক্তি এখন বাংলাদেশকে পরিচালনা করতে চাইছে তারা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতীকগুলিকে ধ্বংস করে দেশটা অাবার পাকিস্তানের হাতে তুলে দিতে চায়। জুলাই অভ্যুত্থানে যেভাবে বঙ্গবন্ধু মুজিবের মূর্তি ভেঙে মৌলবাদীরা বার্তা দিয়েছে, ঠিক সেই ধারাবাহিকতাতেই বাংলাদেশে ফের আগুন লাগানো হচ্ছে। সেখানে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। মৌলবাদী শক্তি অাসলে অশান্তি পাকিয়ে এই নির্বাচনকেই বানচাল করতে চাইছে বলে মনে হচ্ছে।
