shono
Advertisement
Maoists

মাওবাদীরা কোণঠাসা, নেপথ্যে রণকৌশল ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচি

দেশজুড়ে সক্রিয় থাকা মাওবাদী সশস্ত্র আন্দোলনের প্রভাব কার্যত ভেঙে পড়েছে।
Published By: Kishore GhoshPosted: 08:27 PM Oct 21, 2025Updated: 08:27 PM Oct 21, 2025

মাওবাদীদের আধিপত্য এখন কোণঠাসা। এর নেপথ্যে রয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সংবেদনশীল রণকৌশল ও পরিকল্পিত উন্নয়নমূলক কর্মসূচি।

Advertisement

দেশজুড়ে সক্রিয় থাকা মাওবাদী সশস্ত্র আন্দোলনের প্রভাব এখন কার্যত ভেঙে পড়েছে। যে-সংগঠনকে একদা দেশের ‘সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিপদ’ বলা হত, তার উপস্থিতি এখন মাত্র ১১টি জেলায় সীমাবদ্ধ। মূল ঘাঁটি সংকুচিত হয়ে দাঁড়িয়েছে ছত্তিশগড়ের তিনটি অরণ্যবেষ্টিত জেলায়– বিজাপুর, নারায়ণপুর, সুকমা। এই পশ্চাদ্‌পসরণ কেবলমাত্র আধা-সামরিক বাহিনীর সশস্ত্র অভিযানের ফল নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রশাসনিক ও উন্নয়নমূলক প্রচেষ্টার সাফল্যের প্রতিফলন।

নিরাপত্তা বাহিনীগুলি যেমন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এলাকার বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ রণকৌশল নিয়েছে, তেমনই জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে থাকা কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকারগুলি ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে যে উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি চালু করে, তা ক্রমে আদিবাসী অঞ্চলের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনে। বলা বাহুল‌্য, আন্দোলনের পতনটি আসলে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক কৌশলের ফল। যার সূত্রপাত হয়েছিল একদা অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশে। সেখানে প্রশাসন একই ধঁাচে উন্নয়ন ও নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানকে সমান্তরালভাবে চালিয়ে মাওবাদীদের ঘঁাটি দুর্বল করে দেয়। পরে এই সাফল্য মধ্যভারতের অন্য রাজ্যগুলিতেও অনুসৃত হয়।

মাওবাদীরা চেয়েছিল ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, পূর্ব মহারাষ্ট্র, পশ্চিম ওড়িশা ও উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশের দুর্গম অরণ্য অঞ্চলে ‘বেস এরিয়া’ গড়ে তুলে ধীরে-ধীরে শহরগুলিকে ঘিরে ফেলতে। এটি শতাব্দীপ্রাচীন কৌশল, যার মাধ্যমে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি জাতীয়তাবাদীদের পরাজিত করে। কিন্তু ভারতের ভৌগোলিক ও সামাজিক বাস্তবতায় সেই পরিকল্পনা টেকেনি।

শুরুতে মাওবাদীরা আবুজমাড় (দক্ষিণ ছত্তিশগড়), গড়চিরৌলি (মহারাষ্ট্র) বা ওড়িশার কিছু অংশে ‘বিকল্প’ প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলতে পেরেছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে আদিবাসী সমাজের ক্ষোভ বাড়তে থাকে। তারা বুঝতে পারে, ‘সশস্ত্র বিপ্লব’-এর নামে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে রাষ্ট্রবিরোধী যুদ্ধের ‘ঘুঁটি’ হিসাবে। মাওবাদী নেতৃত্ব সশস্ত্র লড়াইকে প্রধান করে তুলেছিল, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রশ্ন ছিল উপেক্ষিত। ফলে মাওবাদীদের প্রতি জনগণের আস্থা ধীরে-ধীরে ক্ষয় পেতে থাকে। এর মধ্যে ২০০০-এর দশকের শেষভাগে ‘সালওয়া জুডুম’ অভিযানের সময় মাওবাদীরা কিছুটা পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল। সে অভিযানে আদিবাসীরা ব্যাপকভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছিল, এবং তাদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকে পার্টিতে নতুন নিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সালওয়া জুডুম ‘নিষিদ্ধ’ হওয়ার পর, যখন রাষ্ট্রের বাহিনী আরও পেশাদার ও সংবেদনশীল কৌশল গ্রহণ করে, তখন আন্দোলনের শক্তি ক্রমে ভেঙে পড়ে।

সম্প্রতি আত্মসমর্পণ করা মাওবাদী শীর্ষ নেতা মাল্লোজুলা বেনুগোপাল রাও স্বীকার করেছেন, ‘ভারতের বাস্তব পরিস্থিতি ও সময়ের পরিবর্তন অনুযায়ী চিন ও রাশিয়ার ডগম্যাটিক পথ পরিত্যাগ করা ছাড়া আর রাস্তা নেই।’ এ স্বীকারোক্তি গুরুত্বপূর্ণ মোড়!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
Advertisement