shono
Advertisement
Natural Calamities

প্রকৃতির ক্রোধবারি, মানুষের পরাভব!

বাড়তি দুশ্চিন্তা, পাড়ায়-পাড়ায় পুজোর প্যান্ডেল।
Published By: Kishore GhoshPosted: 09:06 PM Sep 24, 2025Updated: 09:14 PM Sep 24, 2025

এক শরৎ রাতে ধারাপাতের আদিম শক্তি ও খেয়ালিপনায় দম্ভে আক্রান্ত মানুষের পরাভব। বাড়তি দুশ্চিন্তা, পাড়ায়-পাড়ায় পুজোর প‌্যান্ডেল।

Advertisement

শরৎকালের প্রকৃতির চেনা চেহারাটা ভারি মধুর, ঠান্ডা মেজাজের। রবীন্দ্রনাথ বড় ভালবাসতেন শরতের মনের কথা শুনতে শিউলিসুরভি রাতে, বিকশিত জ্যোৎস্নাতে। কিন্তু প্রকৃতির মিঠে রূপের আবরণ চুরমার করে কখন যে তার দজ্জাল অন্তর-অবয়ব প্রকাশিত হবে, কোনও ঠিক নেই। এবং প্রকৃতির এই আকস্মিক বিধ্বংসী দজ্জালতা সামলানোর ক্ষমতা যে আমাদের আয়ত্তে আসেনি, শরতের এক রাতের অবিশ্রান্ত বৃষ্টি কুলকিনারা ভাসিয়ে, সারা কলকাতাকে ডুবিয়ে, হয়তো বলা যায়, সারা বাংলাকেই প্লাবিত করে, বুঝিয়ে দিয়ে গেল।

প্রকৃতির লাবণ‌্য, সৌন্দর্য, মিষ্টি রূপ নিয়ে ওয়ার্ডসওয়ার্থের মতো রোম‌ান্টিক কবির আদিখে‌্যতাকে বিদ্রুপ করে অল্ডাস হাক্সলি লিখেছিলেন তাঁর অনন‌্য প্রবন্ধ ‘ওয়ার্ডসওয়ার্থ ইন দ‌্য ট্রপিক্‌স’। এই প্রবন্ধে তিনি বলছেন, উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের প্রকৃতি প্রেমের মেকি আবেগ তো শুধুমাত্র মানবসভ‌্যতা নিয়ন্ত্রিত ‘ইংলিশ লেক ডিসট্রিক্ট’-এর মধুর, ঘরোয়া আরামের সৌন্দর্যের স্তুতিতে আবদ্ধ। হাক্সলির ভাষায় ওয়ার্ডসওয়ার্থ প্রকৃতির যে-রূপ নিয়ে ‘আহা মরি’ করেছেন, তা হল তাঁর চারপাশের চেনা পোষমানা প্রকৃতির ‘Cozy sublimity’. কিন্তু দয়া করে কেউ এই কবিকে নামিয়ে দিয়ে আসুন ট্রপিকাল অরণ্যের সর্বনেশে ভয়ংকর বাস্তবের মধ্যে। তখন দেখবেন এই কবির সহজ ‘প‌্যানথেইজম্‌’, প্রকৃতির মধ্যে বিস্তারিত মহিমায় প্রত‌্যয় কোথায় পালায়।

সূর্যহীন ট্রপিকাল অরণ্যের ভয়াবহ স্য়াঁতসেঁতে আঁধারে কয়েক ঘণ্টাও কাটানোর প্রয়োজন নেই প্রকৃতি কত অসহনীয় আতঙ্কের তা উপলব্ধির জন‌্য– কলকাতার শরতে রাতভর অবিশ্রান্ত ধারাপাত তা বুঝিয়ে দিয়ে গেল। কলকাতা জলবন্দি। জীবনের স্বাভাবিক গতি বিঘ্নিত। বহু এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন। রাস্তায়-রাস্তায় এত জল, যে, কোনও দূরত্বই কাছের নয়। এই জল কবে কীভাবে নামবে, দেবতারও অজানা! খাবারবাহী বাইকবাহিনী, এই মুহূর্তের এই প্লাবিত কলকাতায় প্রায় অচল।

জলে ভাসা কলকাতার রাস্তা ভাগ্যের মতোই অনিশ্চিত। পায়ের নিচে কোথায় গভীর গর্ত আর কোথায় বিদ্যুতের তার জানার উপায় নেই। এই মুহূর্তে কলকাতার এক বাড়তি দুশ্চিন্তা, পাড়ায়-পাড়ায় পুজোর প‌্যান্ডেল। এক রাতের প্লাবনে তাদের দশা খুব সুখকর নয়।

এবার আসা যাক কলকাতার ফুটপাতে। পুজোর বাজারে শহেরর সমস্ত ফুটপাত আচ্ছন্ন। একহঁাটু জলের মধ্যে যেমন পুজো-বাজারের ভবিষ‌্যৎ হাবুডুবু খাচ্ছে, ঠিক তেমনই দশা যঁারা কোনও না কোনওভাবে ফুটপাথ-আশ্রয়ী, তাঁদেরও। এবার ভাবুন কোনওরকম এমারজেন্সি ও অসুখের কথা। ডাক্তার, হাসপাতাল, বন্ধু– সবাই জলমগ্ন নির্বাসনে! এবং বিস্তারিত অসহায়তা শহরবাসীর শুধুমাত্র একটি শরৎ রাতে জ্যোৎস্নার বদলে বৃষ্টির ফলে।

প্রকৃতির এই আদিম শক্তি ও খেয়ালিপনার কাছে আধুনিকতার দম্ভে আক্রান্ত মানুষের পরাভব এখনও ক্রমান্বিত। মানুষের এই অসহায় পরাজয়ের শেষ নেই। যেমন শেষ নেই তার মানস-শক্তির, জেদ এবং কোমর বেঁধে নতুন নির্মাণে নেমে পড়ার।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • জলে ভাসা কলকাতার রাস্তা ভাগ্যের মতোই অনিশ্চিত।
  • এবার আসা যাক কলকাতার ফুটপাতে।
Advertisement