দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার ঘোষণা- তাঁর সরকার দিল্লির স্কুল শিক্ষাক্রমে ব্যাপক রদবদল আনতে চলেছে। সিলেবাস ফ্রেমিং সম্পূর্ণ। গভর্ন্যান্স, গণতন্ত্র, অংশগ্রহণমূলক নাগরিকত্বের পাঠদানের পাশাপাশি 'রাষ্ট্রনীতি' সিলেবাসে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে পড়ানো হবে 'রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ'-র শতবর্ষে ইতিহাস। কিন্তু সেই ইতিহাস কি উদারবাদী, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যে আস্থাশীল? না কি রাষ্ট্রসর্বস্ব, ফ্যাসিস্ট? লিখছেন অর্ণব সাহা।
শুরুটা হয়েছিল ১৮ সেপ্টেম্বর, দিল্লির ‘ভারত মণ্ডপম’-এ, ‘নমো বিদ্যা উৎসব’-এর উদ্বোধনে, যখন দিল্লির নবনির্বাচিত বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা ঘোষণা করলেন, তাঁর সরকার দিল্লির স্কুল শিক্ষাক্রমে ব্যাপক রদবদল আনতে চলেছে। বিশেষত পূর্ববর্তী ‘আপ’ সরকার প্রবর্তিত সিলেবাস ও স্কুল কারিকুলামের সম্পূর্ণ পরিবর্তনই তাঁদের ‘লক্ষ্য’।
কেজরিওয়াল প্রশাসনের ‘দেশভক্তি প্রোগ্রাম’ (২০২১), ‘হ্যাপিনেস কারিকুলাম’ (২০১৮) এবং ‘অন্ত্রেপ্রেনরশিপ মাইন্ডসেট’ প্রোগ্রাম বাতিল হয়েছে। অক্টোবরের গোড়ায় দিল্লি সরকারের শিক্ষামন্ত্রী আশিস সুদ সাংবাদিক সম্মেলনে জানালেন, ক্লাস ওয়ান থেকে শুরু করে ক্লাস টুয়েলভ অবদি ছাত্রছাত্রীদের ভিতর নাগরিক সচেতনতা, প্রশাসনিক নৈতিকতা এবং জাতীয়তাবাদী গৌরবের সঞ্চার ঘটানোর লক্ষ্যে তাঁরা ‘রাষ্ট্রনীতি’ পাঠ্যক্রম ঢেলে সাজাচ্ছেন।
সিলেবাস ফ্রেমিং সম্পূর্ণ। গভর্ন্যান্স, গণতন্ত্র, অংশগ্রহণমূলক নাগরিকত্বের পাঠদানের পাশাপাশি, শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘রাষ্ট্রনীতি’ সিলেবাসে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে পড়ানো হবে ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ’-র ১০০ বছরের ইতিহাস। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ‘আরএসএস’-এর ভূমিকা, এই সংগঠনের মৌলিক দর্শন এবং বিবিধ সামাজিক সেবামূলক কার্যক্রমের খুঁটিনাটি। বিশেষভাবে জোর দেওয়া হবে এই সংগঠনের নীতিমালায়, সামাজিক দায়বদ্ধতায়। ভারতীয় সমাজের বিভিন্ন অংশে সংঘ সম্পর্কে যে বিভিন্নরকম বিভ্রান্তি ছড়ানো রয়েছে সেগুলো দূর করার জন্যই বিশেষভাবে ‘আরএসএস@১০০’ শীর্ষক অধ্যায় যুক্ত হতে চলেছে। এতে থাকবে সংঘের প্রতিষ্ঠাতা কেশব বালিরাম হেডগেওয়ার, সাভারকার, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-সহ সুভাষচন্দ্র বসু ও সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের বিস্তারিত প্রসঙ্গও। পাঠ্যসূচির পূর্ণাঙ্গ রূপদান শেষ, সারা দিল্লি জুড়ে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই নির্দিষ্ট ‘রাষ্ট্রনীতি’-সংক্রান্ত পাঠদান-প্রক্রিয়া নিয়ে একাধিক ওয়ার্কশপও সারা। এবার বিষয়টি কেবল চালু হওয়ার অপেক্ষায়। ‘স্টেট কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং’ এই পুরো কর্মকাণ্ডের দায়িত্বে রয়েছে।
‘এনইপি ২০২০’-র জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসরণে ‘নিউ ইরা অফ অন্তারপ্রেনিয়ল ইকোসিস্টেম অ্যান্ড ভিশন’ (NEEEV) চালু হতে চলেছে, যার মধ্যে দিয়ে ‘আদর্শ ভারতীয় নাগরিক’ গড়ে তোলার যে ‘লক্ষ্য’, তা আদতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের চোখে প্রবল পরাক্রমশালী জাতিরাষ্ট্র গঠনের এক সুদূরপ্রসারী অ্যাজেন্ডা ছাড়া অন্য কিছুই নয়।
যাঁরা এখনও বিজেপিকে ভারতের আর-পাঁচটি রাজনৈতিক দলের মধ্যেই একটি বলে গণ্য করেন, তাঁরা বোঝেনই না, বিজেপির উদ্দেশ্য কেবল ভোটে জিতে সরকার দখল নয়। বিজেপির বকলমে এটি আসলে সংঘের ‘সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং স্কিম’-এর এক শতবর্ষব্যাপী প্রোজেক্ট। নিজেদের ভারতীয়ত্বের খঁাটি দাবিদার এবং আদর্শ সনাতন হিন্দু ধর্মের ধারক-বাহক বলে প্রচার করলেও সংঘের কর্মপদ্ধতির সঙ্গে সমগ্র মধ্যযুগব্যাপী চলে-আসা আবহমান ভারতীয় সহিষ্ণুতা, সম্প্রীতি, উদার ভাবধারার কোনও মিল নেই।
উনিশ শতকের শেষার্ধে ইউরোপে যে কট্টর জাতিরাষ্ট্রবাদের জন্ম হয়েছিল, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ আসলে সেই সামরিক জাতিরাষ্ট্রবাদকেই প্রাচীন হিন্দু ধর্মের মোড়কে পরিবেশন করতে চায়। তাদের বুকের উপর আড়াআড়ি হাত রেখে অভিবাদনের ভঙ্গি, সাদা জামাও খাকি হাফপ্যান্ট (এখন অবশ্য ফুলপ্যান্ট), মাথার কালো টুপি কোনওটাই ভারতীয়ত্বের চিহ্ন বহন করে না। ‘আদর্শ ভারতীয় নাগরিক’ বলতে তারা কোনও সার্বিক খোলামেলা গণতান্ত্রিক অধিকারসম্পন্ন, মতপ্রকাশের অবাধ স্বাধীনতাযুক্ত, ‘ডিসেন্ট’ বা মতবিরোধ প্রকাশের ক্ষমতাসম্পন্ন সর্বার্থে ‘আধুনিক নাগরিক’কে বোঝে না। তাদের রাজনৈতিক ‘হিন্দুত্ব’-র ধারণায় দীক্ষিত ভারতীয় নাগরিক আসলে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের আজ্ঞা নির্দ্বিধায় অক্ষরে অক্ষরে পালন
করা এবং সেই অ্যাজেন্ডাকে যে কোনও মূল্যে কার্যকর করার জন্য সার্বিক বলপ্রয়োগের মানসিকতাসম্পন্ন একবগ্গা, একমাত্রিক, প্রশ্ন করতে অক্ষম, বিনা বাক্যব্যয়ে আজ্ঞাপালনে ঝাঁপিয়ে-পড়া এক চিরঅনুগত লেঠেলবাহিনী, যারা গড়ে তুলতে চায় এক নিরন্ধ্র ‘ভিজিল্যান্ট’ সমাজ ও রাষ্ট্রকাঠামো, যার স্থায়িত্বের প্রধানতম শর্তই হল ডায়ালগের অনুপস্থিতি এবং
নিষ্ঠুর বলপ্রয়োগ।
তারা এম. এস. গোলওয়ালকারের ‘বাঞ্চ অফ থট্স’ অনুসরণে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শত্রু রূপে মুসলমান, খ্রিষ্টান ও কমিউনিস্টদের (এই মুহূর্তে বাম-লিবেরাল) চিহ্নিত করলেও আসলে তাদের কল্পিত জাতিরাষ্ট্রের লক্ষ্য সমগ্র হিন্দু সমাজ, বিশেষত আশিভাগ দলিত, পিছড়েবর্গ, আদিবাসীরা। নিরঙ্কুশ ক্ষমতার এক অটুট সামাজিক থাকবন্দের মধ্য দিয়ে এক উচ্চবর্ণবাদী, ‘অখণ্ড হিন্দুত্বের মোড়ক’-এ সেই পুরনো বর্ণাশ্রম প্রথার মতোই এক অনড়-অটল ব্যবস্থা গড়ে তোলাই তাদের উদ্দেশ্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রক্তকরবী’ নাটকের মতোই যে রাষ্ট্রের ‘রাজা’ নামক ক্ষমতাকেন্দ্রটি থাকবে অদৃশ্য আর মাথা-নীচু-করা ‘রাজার এঁটো’রা বেঁচে থাকবে ‘৬৯-এর ঙ’ হয়ে। কেবল চতুর ‘গোঁসাই’-রা নজর রাখবে: “দন্ত্য-ন পাড়া যদিও এখনো নড়্নড়্ করছে, মূর্ধণ্য-ণরা ইদানীং অনেকটা মধুর রসে মজেছে... তবু আরো কটা মাস পাড়ায় ফৌজ রাখা ভালো... ফৌজের চাপে অহংকারটার দমন হয়, তার পরে আমাদের পালা।’ শুধু রঞ্জনের মৃতদেহ দেখে কোনও নন্দিনী বলে উঠবে না– ‘এই আমার ধ্বজা, আমি ভেঙে ফেলি ওর দণ্ড, তুমি ছিঁড়ে ফেলো ওর কেতন’।
১৯৩১ সালের ১৫ থেকে ২৫ মার্চ আরএসএসের প্রথম প্রজন্মের অন্যতম প্রধান তাত্ত্বিক বি. এস. মুঞ্জে ইতালি যান ও খোদ মুসোলিনির সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে তিনি মুসোলিনির ফ্যাসিস্ত রাষ্ট্র ও মিলিটারি কলেজ, ‘সেন্ট্রাল মিলিটারি স্কুল অফ ফিজিকাল এডুকেশন’, ‘ফ্যাসিস্ত আকাদেমি অফ ফিজিক্যাল এডুকেশন’, ‘বালিয়া’ ও ‘আভানগার্দিস্তি’ এসব সংগঠনের কার্যক্রম দেখে মুগ্ধ হন, এবং ভারতেও অবিকল একই ধঁাচে সামরিক হিন্দুরাষ্ট্র গড়ে তোলার শপথ নেন। দিল্লির সদ্য-ক্ষমতায় আসা বিজেপি সরকারের সিলেবাসে ‘রাষ্ট্রনীতি’-র শিক্ষা আসলে বিগত শতাব্দীর ইতালীয় ফ্যাসিস্ত রাষ্ট্রের অনুগত নাগরিক গড়ে তোলার এক একুশ শতকীয় রূপরেখা মাত্র।
এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে মনে রাখা দরকার, জিওভানি জেন্টাইল ও বেনিতো মুসোলিনি রচিত ‘দ্য ডক্ট্রিন অফ ফ্যাসিজম’ বইটির কথা। যা পরে পৃথিবীর দেশে-দেশে চরম কর্তৃত্ববাদী, টোটালিটারিয়ান, একনায়কতন্ত্রী রাষ্ট্রের ‘বাইবেল’ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। এই বইটির প্রথমাংশ জিওভানি জেন্টাইলের লেখা, যদিও ১৯৩৫ সালে মুসোলিনির নামে যে ‘দ্য ডক্ট্রিন অফ ফ্যাসিজম’ বইটি প্রচারিত হয়, তাতে জিওভানির অংশটি বর্জিত হয়েছিল। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই প্রথমাংশের উপরই ভিত্তি করে রচিত হয়েছে মুসোলিনির রচনা। জিওভানির লেখা থেকে সামান্য একটি অংশ উদ্ধৃত করলেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ‘রাষ্ট্রনীতি’-র নির্যাসটি পরিস্ফুট হবে: ‘ফ্যাসিবাদী মতাদর্শের মূল ভিত্তিই হল রাষ্ট্র– রাষ্ট্রের নির্যাস ও লক্ষ্য সম্পর্কে তার ধারণা। ফ্যাসিবাদের কাছে রাষ্ট্রই চূড়ান্ত– ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী আপেক্ষিক। ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর ততক্ষণই স্বীকৃতি রয়েছে যতক্ষণ তা রাষ্ট্রের মধ্যে... উদারনীতিবাদের অর্থ যদি হয় ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, ফ্যাসিবাদের অর্থ হল সরকার। (উদারনীতিবাদ হল) অনুশাসন, শৃঙ্খলা, দেশপ্রেমের নৈতিক আদর্শের প্রতি আজ্ঞানুবর্তিতার অভাব।’
ইদানীং মূলধারার সংবাদমাধ্যমে দেখবেন প্রায় সমস্ত টক শো-তেই প্রাক্তন সামরিক পদাধিকারী, সেনাকর্তা ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্তারা এসে অবাধ জ্ঞান বিতরণ করছেন। তাঁদের বক্তব্যের মূল কাঠামোটি হল– রাষ্ট্রের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ববাচক ভূমিকাকে আরও বেশি উৎসাহিত করা। যেন তাঁরা কোনওরকম তুচ্ছ, ছোটখাট সামাজিক বিশৃঙ্খলাকেও বরদাস্ত করতে রাজি নন। এটি হল গণমাধ্যমের সহায়তায় রাষ্ট্রের প্রায় অবিসংবাদী প্রভুত্বের ধারণাটিকে বৈধতা দেওয়ার এক মরিয়া চেষ্টা। ২০২৫ সালের একনায়কতন্ত্রী রাষ্ট্রনীতি তার সাম্প্রতিক কৃৎকৌশলগুলোকেই ব্যবহার করবে, এটাই স্বাভাবিক। বেনিতো মুসোলিনির বইয়ের মূল সংস্করণে খুব স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল– ‘Fascism is definitely and absolutely opposed to the doctrines of liberalism, both in the political and the economic sphere’. (The Doctrine of Fascism, Benito Mussolini, New York edition 2006, pp.23) এখনকার একুশ শতকে দাঁড়িয়ে এ-ধরনের আধিপত্যবাদী, মুক্তচিন্তাবিরোধী, বহুত্ববাদকে অস্বীকার-করা কথাবার্তা প্রকাশ্যে বলা বিপজ্জনক। তাই চরম স্বৈরতন্ত্রীকেও এখন গণতন্ত্রের মুখোশ পরতে হয়। পরমত-সহিষ্ণু হবার ভেক ধরতে হয়।
আরও একটি অনিবার্য ভেক ধরা বিজেপির এই নয়া-শিক্ষানীতির অভ্যন্তরীণ অঙ্গ। তা হল ‘বি-উপনিবেশায়ন’-এর নাম করে, ভারতীয় সংস্কৃতির শিকড়ে ফিরে যাওয়ার নাম করে ‘আধুনিকতা’, ‘প্রগতি’, ‘মানবাধিকার’-এর যে প্রায় দুশো বছরের সাম্প্রতিক ইতিহাস– তার উল্টোদিকে হঁাটাকেই ‘জায়েজ’ বলে চিহ্নিত করা। এর ফলে অত্যন্ত সুচারু কৌশলে মিথ্যা গালগল্পকেও ‘ইতিহাস’ বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে। নিজেদের বর্তমান রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূরণের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা যাবে এই হাস্যকর ফ্যাব্রিকেটেড ইতিহাসের পাঠ্যক্রম। যে আরএসএস ও হিন্দু মহাসভা ভারতের সারা স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ না নেওয়া আর বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া অন্য কিছু করেনি, তাদের ব্রিটিশবিরোধী সদর্থক ভূমিকার ইতিহাস পড়ানোর প্রকল্প আসলে আমজনতার মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির চাষবাসকেই সরকারিভাবে মান্যতা দেওয়া।
সংঘের ইতিহাসতাত্ত্বিক সীতারাম গোয়েলের লেখা ‘হিরোইক হিন্দু রেজিস্ট্যান্স টু মুসলিম ইনভেডার্স’ অথবা ‘দ্য স্টোরি অফ ইসলামিক ইম্পিরিয়ালিজম ইন ইন্ডিয়া’ জাতীয় বই ওই হোয়াটসঅ্যাপ বিশ্ববিদ্যালয়েরই উন্নততর সংস্করণ। এই ভদ্রলোক আদৌ যদি জানতেন ‘ইম্পিরিয়ালিজম’ শব্দের আধুনিকতম ব্যাখ্যা, তাহলে ‘ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদ’ কথাটা আদৌ ব্যবহারই করতেন না! ইতিহাসবিদের কাজ যদি হয় ঘৃণা, বিদ্বেষের বিষ ছড়ানো, তবে তঁাকে শিক্ষাবিদ বলতে আপত্তি থাকবেই।
১৯ মার্চ, ২০২২ হরিদ্বার দেব সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ পিস অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন’-এর উদ্বোধনী ভাষণ দিতে গিয়ে বিজেপির তৎকালীন সহ-সভাপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু ‘ইতিহাসের গৈরিকীকরণ’-এর পক্ষে প্রকাশ্য সওয়াল করেছিলেন। সেখানেও সেই একই কৌশল প্রযুক্ত হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন– ‘আমরা প্রাচীন হিন্দু ভারতের গৌরব নতুন করে লিখতে চাই। যারা এই কাজে বাধা দিচ্ছে, তারা সকলেই মেকলের সন্তান।’ ভারতের যুক্তিবাদী, তথ্যনিষ্ঠ, বিজ্ঞানভিত্তিক ইতিহাসচর্চার ধারাটি এখন চরম আক্রান্ত এই রাজনৈতিক হিন্দুত্ববাদী ইতিহাস-লেখকদের হাতে। তাই রোমিলা থাপার সংস্কৃত জানেন না, ইরফান হাবিব আসলে মুসলিম-পক্ষপাতদুষ্ট, ডি. এন. ঝা-র মাপের ঐতিহাসিক ‘হিন্দুবিরোধী’ ইত্যাদি বলার স্পর্ধা হয় এঁদের।
শিক্ষার সামগ্রিক লক্ষ্য পরিবর্তনের এই অ্যাজেন্ডা আসলে সংঘের দীর্ঘদিনের প্রোজেক্ট। দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা নিজেদের পরিচালনাধীন হাজার হাজার স্কুলের মাধ্যমে তারা শিশুদের মগজধোলাইয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। দিল্লির সরকারি স্কুল-সিলেবাসে ‘রাষ্ট্রনীতি’-র অনুপ্রবেশ সেই সংঘী অ্যাজেন্ডাকেই মান্যতা দিচ্ছে।
