গোয়ায় ফিডে চেস ওয়ার্ল্ড কাপ খেলতে এসে ইয়ান নেপোমনিয়াচির অভিযোগ, খাবারের বৈচিত্র নেই। ভারতীয় খাবারে বৈচিত্র নেই!
‘চিকেন বাটার মশালা’। ভারতীয় খাবার বলতে বিদেশের মানুষজন এই পদটিকে বিশেষভাবে চেনে এখন। কাছাকাছি আরও একটি পদ বিখ্যাত– ‘চিকেন টিক্কা কাবাব’। কিন্তু এই একটি-দু’টি পদ যে সর্বভারতীয় খাবারের বিপুল বৈচিত্রের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না, তা বিদেশিরা বুঝলে তো! ‘বিদেশি’ বলতে আমেরিকা রয়েছে। ইউরোপও রয়েছে কিয়দংশে। আবার অস্ট্রেলিয়া ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জকেও ধরা যায়। চিকেন বাটার মশালা বা চিকেন টিক্কা কাবাবের অনেকখানি গৌরব বৃদ্ধি করেছে ‘আইপিএল’।
কত দেশের ক্রিকেটার এই উপলক্ষে ভারতে সমবেত হন, থাকেন, চেখে দেখেন এখানকার খাদ্যাবলি। আবার শাহরুখ খানের সবচেয়ে পছন্দের খাবার চিকেন টিক্কা কাবাব। কিং খানের সুবাদেও এ পদটি পরিচিত অর্জন করতে পারে। অবস্থা এখন এমন, বিদেশের অনেক ভারতীয় রেস্তোরাঁকে বিজ্ঞপ্তি দিতে হয় যে, চিকেন বাটার মশালা ছাড়াও অন্য ভারতীয় খাবার সেখানে পাওয়া যায়।
ভাষাগত বিস্তৃতির মতো এই দেশের খাবারের বিপুল বৈচিত্র অন্য দেশের মানুষের পক্ষে উপলব্ধি করা সত্যি দুষ্কর। কেননা, ভারতের এক প্রদেশের মানুষই এখনও অন্য প্রদেশের খাদ্যাবলি পুরোপুরি আবিষ্কার করতে পারেনি।
আ-ভারতকে গণ্য করলে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ আমিষভোজনের পক্ষে। ‘শুদ্ধ শাকাহারী’ নিরামিষভোজন পরিসংখ্যানে পিছিয়ে থাকলেও স্বাদে ও চমৎকারিত্বের ব্যাপকতায় লা-জবাব। কাজেই এমন একটি দেশের খাদ্যসম্ভার নিয়ে যদি কোনও বিদেশি অতিথি প্রশ্ন তোলেন, সন্দেহ হয় বইকি! সেই সন্দেহ আরও বৃদ্ধি পায়, যখন আমরা সেই বিদেশি অতিথির নাম জানতে পারি, এবং জানতে পারি কেন তিনি এ-দেশে এসেছেন।
ভদ্রলোকের নাম ইয়ান নেপোমনিয়াচি। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দাবাড়ু, ‘এলিট’ বর্গে তাঁর ঠাঁই। ২০২৫ সালের ফিডে চেস ওয়ার্ল্ড কাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভারতের গোয়ায়। বিশ্বের প্রাক্তন দু’-নম্বর রুশ নাগরিক ইয়ান এসেছিলেন এই প্রতিযোগিতার বিশিষ্ট প্রতিনিধি রূপে। তাঁর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থার প্রতি আয়োজকদের যে কড়া নজর থাকবে, বলা বাহুল্য। তবে দাবার এই ওয়ার্ল্ড কাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে তিনি হেরে যান ভারতের দীপ্তায়ন ঘোষের কাছে।
আক্ষরিক অর্থেই ইন্দ্রপতন। এবং হেরে, দ্রুত হোটেল থেকে চেক আউট করার সপক্ষে নেপো যেসব কারণ দেখিয়েছেন, তার অন্যতম– খাবার নাকি খুব খারাপ! বেশি ধরনের মাংসের ব্যবস্থা ছিল না। ফল ছিল। কিন্তু কাঁহাতক ফল খাওয়া যায়! ব্রেকফাস্টে অমলেট পাওয়া যেত বটে, তবে মনে হত, বিরাট ভাগ্যি। বিদিত গুজরাতি, এই প্রতিযোগিতার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী, ইতোমধ্যে তিনিও বিদায় নিয়েছেন হেরে, পাল্টা যুক্তিতে বিঁধেছেন নেপোকে।
বলেছেন, হেরে গেলে নেপো এমন কুযুক্তি আগেও দিয়েছেন। নন-ভেজ মানুষজনের তো সুযোগ আছে ভেজ খাওয়ার, কিন্তু ভেজ-নির্ভর যাঁরা, তাঁরা সেই সুযোগ পান না। বাইরে তাঁকে রান্না করেও খেতে হয়েছে। ফলে, বলার আগে ভাবুন নেপো স্যর– কোন দেশের নামে কী বলছেন!
