shono
Advertisement

Breaking News

Sanjay Dutt

গুরুত্বপূর্ণ কোনও মামলার ফল ও তার সামাজিক প্রতিক্রিয়ার পর্যালোচনায় মিডিয়ার ভূমিকা কেমন?

১৯৯৩ সালে মুম্বইয়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ঘটনায় ধরা পড়েন সঞ্জয়।
Published By: Subhodeep MullickPosted: 06:51 PM Dec 15, 2025Updated: 10:16 PM Dec 15, 2025

গুরুত্বপূর্ণ কোনও মামলার ফল ও তার সামাজিক প্রতিক্রিয়ার পর্যালোচনায় মিডিয়ার ভূমিকা কেমন? হালে দৃশ্য-শ্রাব্যের সঙ্গে ডিজিটাল মিডিয়া যোগ দিয়েছে প্রতিক্রিয়াকে দ্রুতসঞ্চারী ও সুলভ করে তুলতে। সুগ্রীব দোসর সোশ্যাল মিডিয়া। কিন্তু যখন ‘প্রেস’ বলতে মুখ্যত বোঝাত সংবাদপত্রকে, তখন কেমন ছিল মামলানির্ভর সামাজিক প্রতিক্রিয়ার ধারাটি? মানুষ কেমন করে আন্দোলিত হত? লিখছেন সৌরভ দত্ত

Advertisement

কাওয়াস মানেকশ নানাবতী। নৌসেনার তরুণ অফিসার। ডিউটিতে বাইরে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরে তো তাজ্জব! স্ত্রী সিলভিয়ার যে রীতিমতো নয়া প্রেমের আবেশে উড়ছেন! সেই প্রেমিক আর কেউ নন, কাওয়াসেরই ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ বলে পরিচিত প্রেম আহুজা। না, কিছু লুকোননি সিলভিয়া।

স্বামী জবাবদিহি চাইতেই তিনি অকপট। আর এতেই চটে লাল কাওয়াস। সটান জাহাজে ফিরে রিভলভার বের করে সোজা ‘বন্ধু’ প্রেমের ডেরায়। বচসা থেকে তর্কাতর্কি তুঙ্গে, এবং অবশেষে কাওয়াসের গুলিতে মৃতু‌্য প্রেম আহুজার। নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন কাওয়াস।

খবরের কাগজে এই খবর বেরতেই তোলপাড়। কাওয়াস যখন বিচারের কাঠগড়ায়, তত দিনে জনমতের অধিকাংশই তঁার পক্ষে! যুক্তি: স্বামীকে ঠকিয়ে স্ত্রীর অমন প্রেমলীলা ব‌্যভিচার তো বটেই, ঘোর অন‌্যায়। আর, তর্কাতর্কির মাঝে গুলিতে মৃতু‌্য, তার দায় শুধু কাওয়াসেরই হবে কেন?

কী আশ্চর্য, মুম্বইয়ের (তৎকালীন বোম্বে) দায়রা আদালতের জুরিরাও সায় দিলেন সেই যুক্তিতেই! বেকসুর খালাস পেলেন কাওয়াস। ভাগি‌্যস, আদালতের বিচারক বোম্বে হাই কোর্টে সমগ্র বিষয়টি জানালেন। শেষমেশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুনের মামলায় কাওয়াসকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিল হাই কোর্ট।

১৯৫৯ সালের এই মামলা দেশের উল্লেখযোগ‌্য মামলাগুলির তালিকায় এখনও এক মাইলফলক। কারণ, এই মামলার ফল বিতর্ক উসকে দিয়েছিল– সামাজিক প্রতিক্রিয়া কি তবে প্রভাবিত করে মামলার ফল? না কি সামাজিক প্রতিক্রিয়া এড়িয়ে আইনি প্রতিবিধান মেনে বিচারই দস্তুর?

সমাজবিজ্ঞানের তত্ত্ব অনুযায়ী, সামাজিক পরিকাঠামো সচল রাখার চালিকাশক্তি যদি হয় প্রশাসন, তো সেই সমাজে শৃঙ্খলা ও অনুশাসন বহাল রাখার দায় বিচার বিভাগের। সেই নিরিখে কোনও ঘটনা বা অপরাধের ‘সামাজিক প্রতিক্রিয়া’ উপেক্ষা করে তার বিচার বাস্তবসম্মত নয়। এবং সেই প্রতিক্রিয়া মেলে ধরে গণমাধ‌্যম বা হালের পরিভাষায় ‘মিডিয়া’। কিন্তু আইন বলে, যুক্তি এবং প্রমাণ এই দুয়ের নির্ভেজাল যুগলবন্দি মেনেই বিচারের রায় হওয়া বাঞ্ছনীয়।
মনে রাখতে হবে, কে. এম. নানাবতী মামলার সময়কালে ‘মিডিয়া’ বলতে খবরের কাগজই এক এবং অদ্বিতীয়। তো, সেই কাগজের খবরেই জনমত জোরালো হয়েছিল। জুরিরা তাতে সতি‌্যই প্রভাবিত হয়েছিলেন কি না, বিতর্কের বিষয়। কিন্তু তারপর ওই জুরি প্রথাই বাতিল করে বিচার বিভাগকে তথাকথিত সঠিক দিশায় চালিত করার বন্দোবস্ত করে সরকার। গুরুত্বপূর্ণ কোনও মামলার ফল ও তার সামাজিক প্রতিক্রিয়ার পর্যালোচনার চলতি আবহ অবশ‌্য অনেকটাই অন‌্যরকম। খবরের কাগজ থেকে অডিও-ভিজুয়াল ছুঁয়ে মিডিয়া এখন ডিজিটাল। অত‌্যন্ত দ্রুতসঞ্চারী, নিমেষে সুলভ প্রতিক্রিয়াও। কাজেই প্রেক্ষিতের বদলে প্রভাবেও হেরফের হয়েছে বইকি!

ফিরে দেখা যাক আরও একবার। সাতের দশকে কেশবানন্দ ভারতী বনাম কেরল সরকারের মামলা সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে আইনসভার গণ্ডি বেঁধে দিয়েছিল। আদালতের রায়ে নির্ধারিত হয়ে যায় যে, সংবিধানের মূল স্পিরিট ক্ষুণ্ণ করে সংশোধন কখনই বৈধ নয়। তথ‌্য বলছে, খবরের কাগজের রিপোর্টের প্রতিক্রিয়া এক্ষেত্রেও প্রভাব যে ফেলেছিল, তা অনস্বীকার্য। আবার, আটের দশকে নিউজ প্রিন্টের মূল‌্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকারের ‘অবিবেচক’ পদক্ষেপও আদালতেই থমকে গিয়েছিল সামাজিক প্রতিক্রিয়াতেই। কারণ, ওই মূল‌্যবৃদ্ধিকে ‘গণমাধ‌্যমের কণ্ঠরোধ’-এর প্রয়াস বলে তুলে ধরেছিলেন প্রতিবাদীরা।

এমন সাড়াজাগানো মামলার ফলের নজির বড় কম নয়। কিন্তু চোখে পড়ার মতো বিষয়টি হল, ‘গণমাধ‌্যম’ বলতে যখন শুধুই সংবাদপত্র, সাত-আটের দশকের সেই সময়েও মামলার খবরাখবর আঞ্চলিক কাগজে জায়গা পেত নামমাত্র। সাধারণ খবরের পাশে ‘আইন-আদালত’ বা ওই ধরনের নির্ধারিত কলমে। সর্বভারতীয় ইংরেজি কাগজগুলিতে অবশ‌্য সেই কভারেজ থাকত বিস্তারিত। ফলে অমন মামলার ফল ঘিরে প্রতিক্রিয়া সমাজের শিক্ষিত এবং নির্দিষ্ট একটি অংশেরই বক্তবে‌্যর প্রতিফলন হিসাবে উঠে আসত। দু’-একটি ক্ষেত্র বাদ দিলে সেই প্রতিক্রিয়ায় সর্বজনীনতার ছেঁায়া থাকত নেহাতই কম। নয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে কম-বেশি প্রভাব ফেলতে শুরু করে অডিও-ভিজুয়াল মিডিয়া। তারপর দিন যতই এগিয়েছে, বাংলা তথা সারা ভারতে খবরের কাগজ ও ‘দৃশ‌্য-শ্রাব‌্য’ মিডিয়ার বাড়বাড়ন্তে খবরের অনুষঙ্গের মতো মামলার ফলের প্রতিক্রিয়াও বদলাতে শুরু করে আমূল।

বলিউডের তারকা সঞ্জয় দত্তর কথাই ধরা যাক। ১৯৯৩ সালে মুম্বইয়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ঘটনায় ধরা পড়েন সঞ্জয়। তাঁর হেফাজতে একে-৫৬ আগ্নেয়াস্ত্র মেলার পর তঁার সঙ্গে আন্ডারওয়ার্ল্ডের যোগাযোগ প্রকাশে‌্য আসে। সঞ্জয় নিজে কবুলও করেন সেসব। তত দিনে প্রচারের আলো ছুঁয়ে তিনি এমনকী ‘উগ্রপন্থী’ তকমায় সমাজের কুনজরে। বিচারপর্বে কারাদণ্ড হয় সঞ্জয়ের। শীর্ষ আদালতের সেই দণ্ডের মেয়াদ কমে একসময় জেলের বাইরেও আসেন ‘সঞ্জুবাবা’। কিন্তু তত দিনে তঁার অপরাধের বৃত্তান্ত আদালতের শুনানি ও মামলার ফলের আলোচনার নিরিখে এমন পর্বে পৌঁছয় যে, সার্বিকভাবে বিপুল অস্বস্তির মুখে পড়ে তাঁর পুরো পরিবার। সুখের কথা যে, মামলার ফলের সেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কাটিয়ে আবার সাফল্যের আলো দেখেছেন সঞ্জয়।

আবার, তোলপাড় ফেলে দেওয়া জেসিকা লাল মামলার পরিণতি তুলে ধরে সামাজিক প্রতিক্রিয়ায় এক বিরল ছবি। সাদা বাংলায় যাকে বলে পানশালার বিক্রেতা, পেশাগতভাবে সেই কাজ করতেন জেসিকা। মাঝরাতে তঁার কর্মস্থল পানশালায় হাজির হয়েছিলেন ‘প্রভাবশালী’
মনু শর্মা। যে-সে লোক নন, হরিয়ানার তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের মন্ত্রী বিনোদ শর্মার ছেলে।

মনুর দাবি মোতাবেক মদ দিতে রাজি না হওয়াতেই বাধল বিপত্তি। সটান গুলি চালিয়ে ‘বেয়াদপ’ জেসিকাকে মেরেই ফেললেন মনু। ক্ষমতার অলিন্দে বিচরণকারীরা যা করে থাকেন, সেভাবেই মন্ত্রীমশাই ছেলেকে বঁাচানোর চেষ্টায় কসুর করেননি। নিম্ন আদালতের বেকসুর হয়েও যান মনু।

কিন্তু মিডিয়ায় সেই বৃত্তান্তের ধারাবাহিক কভারেজে জনমত তত দিনে উদ্বেল, জোরালোও। ফলে নতুন করে ওই মামলা শুনতে হয় আদালতকে। এবং এবার আর বিচারের বাণী নীরবে কাঁদেনি। যাবজ্জীবন সাজা হয় মনু শর্মার।

অযোধ‌্যার সেই একচিলতে জমি নাকি রামের জন্মভূমি। এই ধুয়ো তুলেই মসজিদ ভাঙার জেরে অশান্তির স্মৃতি এখনও দেশবাসীর মনে অমলিন। ওই জমির হকদার কে, তা নিয়ে তারপর মোকদ্দমা কম হয়নি। নিম্ন আদালতের রায়ে বিতর্ক বেড়েছে। এবং সেই গণমাধ‌্যম ও তারই হাত ধরে জনমতের প্রতিক্রিয়ায় আরও, আরও ছানবিন চালাতে বিচারপর্ব দীর্ঘায়িত হয়েছে। আর, সেসবের ভিত্তিতেই অবশেষে ১৮ বছর পর শীর্ষ আদালত ওই জমির মালিকানা নিয়ে যে-রায় শুনিয়েছে, তা কিন্তু এককথায় সর্বজনগ্রাহ‌্য।

মিডিয়ার ইতিবাচক ভূমিকায় সামাজিক প্রতিক্রিয়ার আর-একটি বেনজির প্রতিফলন সাম্প্রতিক অতীতের ‘নির্ভয়া কাণ্ড’। রাজধানীর পথে রাতের বাসযাত্রী তরুণী ও তাঁর প্রেমিক দুষ্কৃতীদের গ্রাসে। নারকীয় নির্যাতনের শিকার সেই তরুণীর মৃতু‌্যর প্রতিবাদে পুরো দেশ উত্তাল দিনের-পর-দিন। অভিযুক্ত ছ’জনের সাজার দাবি বারবার আছড়ে পড়েছে বিচারালয়ে। আর তারই অভিঘাতে দোষীদের সাজা তো হয়েছেই, এমনকী ‘নাবালক’ বলে এক অভিযুক্তের সাজা এড়ানোর পথও রুদ্ধ করে দিয়ে জুভেনাইল অ‌্যাক্টের প্রতিবিধান রীতিমতো বদলে দিয়ে ওই নরাধমের সাজাও নিশ্চিত করেছে আদালত। জনমতের প্রভাবে সাড়া ফেলা মামলার তালিকায় হাথরস, উন্নাওয়ের নারী নির্যাতনের ঘটনাও সামিল। বিচারের কষাঘাতে দোষীরা প্রত‌্যাশামাফিকই এখন কারান্তরালে।

খবরের কাগজ থেকে অডিও-ভিজুয়াল, তারও গণ্ডি পেরিয়ে মিডিয়ার ডানায় এখন নয়া পালক। একদিকে ডিজিটাল, আর একদিকে সোশ‌্যাল– এই দুই মিডিয়ার দাপটে খবরের প্রতিক্রিয়ার ধরন বদলেছে, প্রভাবও। কোনও বড় অঘটন এবং তার জেরে মামলার ক্ষেত্রও ব‌্যতিক্রম নয়। একটা সময় ছিল, যখন মামলার ফলাফলের বিশ্লেষণ যতই হোক, আদালতের দিকে আঙুল তোলার চল বড় একটা ছিল না। বিচারব‌্যবস্থা বা আদালত সবার উপরে এই ধারনার প্রভাবেই হোক, কিংবা প্রচলিত সম্ভ্রমেও। কিন্তু ‘ডিজিটাল’ এবং ‘সোশ‌্যাল মিডিয়া’-য় খবর যখন অতি দ্রুতগামী, তখন আবহটাই বদলে গিয়েছে। কোর্ট রুমে যুক্তি-তক্কোর লড়াই এখন মুঠো ফোনে হাতের নাগালে। কাজেই প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিক। আর শুনানি স্বচক্ষে দেখার সুযোগ যখন নাগালেই, তখন গণমাধ‌্যম মেলে ধরুক না-ধরুক, তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া সর্বজনীন এবং অকপটও বটে। সেই প্রতিক্রিয়া অপরাধী, অভিযুক্তকে তো নিশানা করছেই, এমনকী বিচারককেও ছুঁয়ে যাচ্ছে হামেশাই। ফলে আইনজীবীদের একাংশের মতে, মামলার বিচারের ক্ষেত্রে বিচারপতিরাও এখন যুক্তি-তর্কের বিশ্লেষণে এবং চূড়ান্ত রায়দানে অনেক বেশি সতর্ক।

আবার যে কোনও রায় নিয়েই খুল্লামখুল্লা আলোচনার প্লাটফর্ম এসে যাওয়ায় ভাবনার নয়া দিগন্তও খুলেছে সন্দেহ নেই। যা আখেরে বিচার প্রক্রিয়াকেই সহায়তা করছে। জনমতের এই প্রবাহ যে বিচারকে ছুঁয়ে যাচ্ছে, তার প্রমাণ হালের পথকুকুর মামলা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, পথকুকুরদের নির্দিষ্ট আশ্রয়ে রাখা সুনিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি তাদের প্রতিপালনেও নির্দিষ্ট কিছু বিধিনিষেধও আরোপ করেছিল আদালত। প্রতিক্রিয়ায় সরব হন পশুপ্রেমীরা। অমন নির্দেশের বাস্তবতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে ঝড় ওঠে সোশ‌্যাল মিডিয়ায়। গণমাধ‌্যমেও প্রশ্ন তোলা হয়। নিট ফল, বিষয়টি পুনর্বিবেচনার পথে হেঁটেছে আদালত।
কিন্তু বিপরীত ছবিও দুর্লভ নয়। ঘটনার যেটুকু বাহ‌্য তা মেলে ধরেই প্রচার ইদানীং দুরন্ত গতিময়। যুক্তি, তথ‌্য, তত্ত্ব কোনও কিছুরই তোয়াক্কা না-করে সেই প্রচার চলছে লাগাতার। যা জনমানসে যে প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে, তা সবসময় আদৌ সঠিক খাতে বইছে না। সাম্প্রতিক অতীতের আর. জি. কর কাণ্ডই ধরা যাক। ঘটনার পরই ধরা পড়ল দোষী। কিন্তু তাকে দোষী মানতে নারাজ মৃতার পরিবার। আর সেই তালে তাল দিয়েই সমাজের কিছু অংশের প্রতিক্রিয়া এমনভাবে উঠে এল গতিময় ওই মিডিয়ায়, যা আদৌ সঠিক নয়। তদন্তে নামল কেন্দ্রীয় সংস্থা, মামলা গড়াল শীর্ষ আদালতে। কিন্তু মামলার ফল বদল হল কই! যে দোষীকে চিহ্নিত করে পাকড়াও করেছিল পুলিশ, যাকে ইতিমধে‌্যই সাজা দিয়েছে আদালত, তার বাইরে তথাকথিত ‘অন‌্য দোষীদের’ তো হদিশই পাওয়া গেল না। অথচ কাঠগড়ায় তুলে নির্মম হেনস্তা ও বদনাম করা হল কিছু ব‌্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে।

মামলার ফলে সরাসরি না হোক, এমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কি আদৌ কাম‌্য? হালের সবচেয়ে সাড়া জাগানো নিয়োগ দুর্নীতি মামলার ফল ছুঁয়েও কোথাও যেন একই ছবি। বলে নেওয়া ভাল, বিভিন্নভাবে উঠে আসা একাধিক নিয়োগ মামলার অনেকগুলিই এখনও অমীমাংসিত। তবে যে-রায় ঘোষিত, তাতে ইতিমধে‌্যই চাকরি খোয়াতে বসেছেন কম-বেশি ২৬ হাজার শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী। সেই মামলা হাই কোর্ট ছুঁয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সবার কথা শোনা হয়নি বলেই সরব ভুক্তভোগীরা। তঁাদের দাবির সঙ্গে এক সুরে সুর মিলিয়ে মিডিয়ায় আওয়াজ উঠেছে ‘একতরফা রায়’ নিয়ে। প্রশ্ন উঠেছে, বিচার কি মানবিকতা-বিবর্জিত হওয়াই বাঞ্ছনীয়?

এই চাপানউতোরে অবশ‌্য চিড়ে ভেজেনি। ইতিমধে‌্য সেই শিক্ষককুল, যঁাদের মধে‌্য অনেকেই হয়তো ষোলো আনা যোগ‌্য, তাঁদের কত দফাতেই না বিচার হয়ে গিয়েছে মিডিয়ার একাংশের আতসকাচে! তবে আলোর দিশাও আছে বইকি! প্রায় একই পঙ্‌ক্তিতে এনে ফেলে প্রাথমিকের ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি খারিজের নিদানও একসময় দিয়েছিল আদালত। কিন্তু পুনর্বিবেচনায় সেই রায় খারিজ করে ওই শিক্ষকদের চাকরি বহাল রাখার নির্দেশ সম্প্রতি দিয়েছে হাই কোর্ট।

কী আশ্চর্য সমাপতন! যে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির আর্জি এসএসসির চাকরিহারা শিক্ষকদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে পারেনি, প্রাথমিকের ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি ফেরানোর রায়ে আইনি যুক্তির পাশাপাশি অন‌্যতম ঢাল হয়ে দঁাড়িয়েছে সেই মানবিকতাই! রায়ে তা উল্লেখও করেছেন বিচারপতিরা। অতিরঞ্জনবর্জিত সতে‌্যর প্রতিফলনের মিডিয়াবাহী সামাজিক প্রতিক্রিয়া এবং যুক্তিনিষ্ঠ বিচারের ধারাবাহিকতা অটুট থাকলে মামলার ফল ঘিরে অঘটন বা বিরূপতার প্রশ্নই ওঠে না। বরং ইতিবাচক প্রভাবে সুগম হতে পারে আগামীর পথ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
Advertisement