১১ নভেম্বর পালিত হল 'সিঙ্গলস’ ডে'। আর্থিক স্বনির্ভরতার ক্রমবৃদ্ধি আশা দেখালেও এই মনোভাব কি মানুষকে আরও স্বার্থপর করবে না?
১১ নভেম্বর বিশ্বজুড়ে “সিঙ্গলস ডে” উদ্যাপিত হল। সেই উদ্যাপনের হলকা ভারতেও এসেছে। সিঙ্গলস’ ডে-র আঁচ লাগছে বাঙালির মনেও। বিশেষ করে বাঙালির দিনভর শপিংয়ে। এই কেনাকাটা পরিবারের জন্য নয়। নয় প্রেমিক বা প্রেমিকার জন্য। এর হিড়িক শুধুমাত্র নিজের জন্য। নিজেকে ভালবেসে। এবং ভাল রাখার জন্য। এ এক নতুন জীবনাদর্শ। নিজের জন্য বেঁচে থাকা।
১৯৯৩ সালে চিনের নানজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা “সিঙ্গলস’ ডে” ভাবনার উদ্যাপনের ধারণাটি প্রথম প্রচারে নিয়ে আসে। সেটি ২০০৯ সালে ই-কর্মাস দানব ‘আলিবাবা’-র মদতে ফুলেফেঁপে ওঠে বাণিজ্যে। ২৪ ঘণ্টা একটানা কেনাকাটার নেশাই হয়ে দাঁড়ায় সিঙ্গলস’ ডে-র বাণিজ্যিক হিড়িক। কী ধরনের কেনাকাটা? যা নিজের ভাল লাগবে, যা কিনতে নিজের ইচ্ছে, যা নিজের কাজে লাগবে, খাবারদাবার, পোশাক, প্রসাধনী, বই, শখের জিনিস থেকে ইলেকট্রনিক গেজেট– একটানা কেনাকাটার উদ্যাপন। ফলে সারা বিশ্বে এখন সিঙ্গলস’ ডে-র কেনাকাটা কয়েকশো বিনিয়ন ডলারের বাণিজ্য করছে। ক্রমে ক্রমে দেখা দিয়েছে “সেলিব্রেট সিঙ্গলস’ ডে”-র বিভিন্ন ক্ষেত্র, ভিন্ন নামে চিহ্নিত হয়ে পড়েছে। যেমন, ‘সেল্ফকেয়ার গোল্স’, ‘প্যাম্পার ইয়োরসেল্ফ’, ‘মি টাইম অ্যাক্টিভিটি’।
এই নিজস্ব স্বাধীনতা উদ্যাপনের আড়াল থেকে অন্য এক আর্থ-সামাজিক সত্যও মাথাচাড়া দিয়ে দেখা দিচ্ছে। এখনও বাঙালিদের মধ্যে অনেকেই ‘একা আমি’-তে প্রত্যয়ী হয়ে উঠেছে। বিয়ে-থা করে সংসারী হওয়ার ঝামেলায় না-গিয়ে একলা নিজের ইচ্ছামতো জীবন কাটাতেই তারা ইচ্ছুক। সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে নাকি ২৫ থেকে ৪৪ বছরে বয়সি মহিলাদের ৪৫ শতাংশই অবিবাহিত থাকবেন, এবং মহানন্দে একা জীবন কাটাবেন। পুরুষহীন জীবন হয়তো নয়। পার্টনার থাকতেই পারে। অধিকাংশ মহিলাই নিজের জীবন কাটাতে চাইবেন নিজের শর্তে। পুরুষদের মধ্যেও বিয়ে-বিদ্বেষ ক্রমবর্ধমান। তাদের মুখেও ক্রমশ উঠছে ‘প্যাম্পার ইয়োরসেল্ফ’ স্লোগান। তবে কারও-কারও মতে সিঙ্গলস’ ডে পালন স্বার্থপরতার উদ্যাপন। সবাই যদি শুধু নিজেকে ভাল রাখার কথা ভাবে, আর অন্যের কথা ভুলে যায়, তাতে সমাজের মঙ্গল হতে পারে কি?
আর্থিক আত্মনির্ভরতা ছাড়া তো সিঙ্গলস’ ডে পালন করাও কি সম্ভব? যে-সমাজে স্ত্রী-পুরুষ প্রত্যেকে পৌঁছতে পেরেছে আর্থিক আত্মনির্ভরতায়, সেই সমাজের যে উন্নতি হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। মার্কিন লেখিকা-দার্শনিক আয়ান র্যান্ড তাঁর দু’টি উপন্যাস ‘ফাউন্টেন হেড’ ও ‘দ্য অ্যাটলাস শ্রাগ্ড’-এ এমনই আপাত-স্বার্থপর ও আত্মনির্ভরশীল সমাজের কথা ভেবেছেন, যেখানে প্রত্যেক স্বনির্ভর হয়ে সৎপথে চলে নিজেকে সুখে রাখবে। এই মনোভাবের চরম অবস্থা অনেককে ‘মনোগ্যামাস’ করে তুলতেও পারে। তথ্য বলছে, মনোগ্যামি নারী-পুরুষের সংখ্যা বাড়ছে! তা ভাল কি মন্দ, সেটি বিচারের সময় হয়তো এখনও আসেনি।
