২০২৬ সালের কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার থিম: আর্জেন্টিনা। মারাদোনা-মেসিতে আকণ্ঠ নিমগ্ন বাঙালি কতটা চিনতে চাইবে বোর্হেসকে?
সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচিত হল ৪৯তম কলকাতা বইমেলার ‘লোগো’ ও আসন্ন বইমেলার থিম কান্ট্রি– ‘আর্জেন্টিনা’। এই প্রথম কলকাতা বইমেলার প্রধান বিষয় হিসাবে আর্জেন্টিনা, আমবাঙালির কাছে যে-দেশের সঙ্গে জড়িয়ে মারাদোনা-মেসি। অধিকাংশ বাঙালির বুক ছলাৎ করে ওঠে নাম দু’টি উচ্চারিত হলেই। তেমনভাবে কিন্তু সাধারণ বাঙালি পরিচিত নন বিপুল বিখ্যাত আর্জেন্টিনিয়ান সাহিত্যিক হর্হে লুই বোর্হেসের নামের সঙ্গে। যারা দলে দলে বইমেলায় ঢুকে মেলা সার্থক করে তুলবে, তাদের মধ্যেই-বা ক’জন বোর্হেস পড়েছে?
বইমেলার উদ্বোধন ২১ জানুয়ারি। গত বছর নাকি ২৭ লক্ষ লোকের পা পড়েছিল। ২৩ কোটি টাকার বই-বাণিজ্য হয়েছিল। এই বছর ভিড় হবে আরও বেশি বলে অনুমান। তার একটি কারণ ২৩ ও ২৬ জানুয়ারির ছুটি পড়ছে বইমেলার মধে্যই। এছাড়া আরও একটি কারণ বইমেলা জমজমাট হওয়ার, হাওড়া পর্যন্ত সরাসরি মেট্রোয় জুড়ে যাওয়া। কিন্তু সাধারণ বাঙালি, বইমেলায় যাদের অনেকেই আসে মেলার হিড়িকে সাড়া দিয়ে, তাদের ক’জন উৎসাহিত হবে বোর্হেসের ছোটগল্পের শৌভিক বাস্তব এবং প্রসারিত নির্জনতা এবং একাকিত্বের আহ্বানে?
তাঁর বই সহজে কলকাতায় তো পাওয়াই যায় না! সারা বছর বাংলার বইবাজারে বোর্হেসের বইবাণিজ্য কতটুকু? ক’জন বাঙালি হুলিও কোর্তাসারের সাহিত্য ও জীবনদর্শনের সঙ্গে পরিচিত? নিদেন নামটুকু শুনেছে ফার্নান্দো সোলানাসের মতো আর্জেন্টিনীয় চলচ্চিত্র পরিচালকের? বোর্হেসের ‘ল্যাবারিন্থস’ নিয়ে তেমন চর্চা বাঙালি মহলে দেখেছি কি? কিংবা বোর্হেসের অবিকল্প গোয়েন্দাগিরি মেটাফিজিকাল অসীমে? মারিয়ানা এনরিকেসের মতো উত্তর-আধুনিক উপন্যাসিকের ‘দ্য ডেঞ্জার্স অফ স্মোকিং ইন বেড’-এর মতো বই কি কলকাতার বইয়ের দোকানে সহজে পাওয়া যাবে? আর শুধু বই কেন? অার্জেন্টিনার বিখ্যাত সুরা, ‘ম্যালবেক’, তার ঘন ফলের ম্যাজিক গন্ধ ও মোহ নিয়ে, কিংবা আঙুরের সুবাস ছড়িয়ে আর্জেন্টিনার ‘ক্যাবারনে সভিগ্নন’ কি কলকাতার পানশালায় এখনও এসে পৌঁছেছে? আমরা কি এখনও স্বাদ পেয়েছি আর্জেন্টিনার সংস্কৃতির আরও এক অসামান্য অবদান ‘ট্যাংগো’ নাচের? বাঙালি আর্জেন্টিনা বলতে বোঝে, একমাত্র মারাদোনা আর মেসি।
বইমেলায় ‘থিম’ আর্জেন্টিনার সূত্রে অনেকের মনে পড়বে, ১৯২৪ সালের ৬ নভেম্বর ৬৩ বছরের অসুস্থ রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আন্দেজ জাহাজ পৌঁছল আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনোস অাইরেসে। সেখানে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠল আর্জেন্টিনার ইন্টেলেকচুয়াল যুবতী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর। তাঁর নাম রাখলেন রবীন্দ্রনাথ ‘বিজয়া’। লিখলেন, ‘হে বিদেশী ফুল, যবে আমি পুছিলাম কী তোমার নাম,/ হাসিয়া দুলালে মাথা, বুঝিলাম তবে/ নামেতে কি হবে।’ হয়তো এই বইমেলার সূত্রে রবীন্দ্র-ভিক্টোরিয়া চর্চা আরও নিবিড় ও প্রসারিত হবে বঙ্গে! এই প্রেমের গল্পের আরও নতুন উন্মোচন ঘটবে!
