আমেরিকান তরুণদের স্বপ্নচুরি করছে ভারতীয়রা! এ কেমন নালিশ ট্রাম্পের? অভিবাসী হটিয়ে আমেরিকাকে ‘শ্রেষ্ঠ’ বানাতে পারবেন?
সম্প্রতি, ভারতীয়দের বিরুদ্ধে এক বিপুল নালিশ হেনেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, আমেরিকান তরুণদের স্বপ্নচুরিতে শীর্ষে ভারতীয়রা। আমেরিকানদের চোখে ভারত এখনও ‘তৃতীয় বিশ্ব’! সেই দেশের মানুষ আমেরিকায় গিয়ে আমেরিকানদের স্বপ্নচুরি করছে এবং এই কাজে তারা শীর্ষস্থান অধিকার করেছে, এহেন বেমক্কা অভিযোগ অধিকাংশ ভারতীয়কে ঘাবড়ে দেবে, সন্দেহ নেই।
ট্রাম্প দ্বিতীয়বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন যে স্বপ্ন-দেখানো স্লোগান এবং প্রচারের জোরে, তা হল– ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’। কী করে সহজেই আমেরিকাকে আবার মহান করা যাবে? মাত্র দু’টি শব্দে এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ট্রাম্প– ‘অভিবাসী হটাও’। অভিবাসী, অর্থাৎ বিদেশিরা আমেরিকায় ‘এইচ ১ বি’ ভিসায় এসে নানা সংস্থায় কাজ করছে। তার ফলে মার্কিন তরুণরা কাজ পাচ্ছে না। তাদের জীবনস্বপ্ন অভিবাসীরাই কেড়ে নিচ্ছে, যার মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। মার্কিন তরুণ-তরুণীদের ভাল চাকরি পাওয়ার স্বপ্ন যারা চুরি করছে, তাদের মধ্যে ভারতীয়রাই শীর্ষে!
৫১ মিনিটের একটি বিজ্ঞাপনী প্রচার ভিডিও বাজারে ছেড়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সেই ভিডিও অনুসারে ‘এইচ ১ বি’ ভিসার জোরে আমেরিকায় ভাল চাকরি পাওয়ার স্বপ্নচুরিতে ভারত অন্য দেশগুলির তুলনায় ৭২ শতাংশ এগিয়ে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চিন (১২ শতাংশ)। এখানেই থেমে থাকেনি ট্রাম্প প্রশাসন। তারা এই ঘোষণাও করেছে, ভারতীয় অভিবাসীদের আমেরিকা থেকে তাড়িয়ে চুরি যাওয়া চাকরি আমেরিকান তরুণ-তরুণীদের হাতেই ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এবং
যেসব সংস্থা সস্তায় অভিবাসীদের চাকরি দিয়েছে তাদের জবাবদিহি করতে বাধ্য করা হবে।
এবং যদি কোনও বিদেশি-কর্মী নিয়োগ করা হয়, তার বিশেষ দক্ষতার জন্য, তাহলে সেই সংস্থা ট্রাম্প সরকারকে নিয়োগ-পিছু এক লক্ষ ডলার অর্থাৎ ৮৮ লক্ষ টাকা দিতে বাধ্য হবে। এবং তার সঙ্গে এও প্রমাণ করতে হবে, সম-যোগ্যতার কোনও আমেরিকান নেই। বোঝা যাচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন দেশে অভিবাসীদেরই স্বপ্নচুরি ও চুরমার করে আমেরিকাকে মহান করতে বদ্ধপরিকর। এবং যেভাবে, যে পদ্ধতিতে ট্রাম্প তা করতে চলেছেন, তার মধ্যে কোথাও যেন নিশ্চিতভাবে ফুটে উঠছে আমেরিকান গণতন্ত্রের মধ্যে স্বৈরাচারের হুমকি, একনায়কতন্ত্রের জুলুম। যে-বিদেশিরা নিজের যোগ্যতার জোরে আমেরিকায় চাকরি করছেন, এবং নিরাপদ বোধ করছেন– তা আদপে মার্কিন গণতন্ত্রের ছত্রছায়া। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই হুমকি কি হাজার-হাজার ‘বৈধ’ অভিবাসীর স্বপ্নচুরি করছে না ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’– এই সোনালি স্বপ্ন দেখানো স্লোগানের আড়াল টেনে?
সবচেয়ে বড় আমেরিকান স্বপ্ন হল, আমেরিকার গণতন্ত্র। সিমন দ্য বোভোয়ার তঁার ‘আমেরিকা ডে বাই ডে’ বইয়ে বলেছেন– সবথেকে বড় তঞ্চকতা, ‘হোক্স’, ‘ডিসেপশন’ তো মার্কিন গণতন্ত্রের মধ্যেই। আমেরিকান গণতন্ত্র ঢেকে রেখেছে ‘দ্য বার্থ অফ আ কাইন্ড অফ ফ্যাসিজম’। কথাটা কি ক্রমশ সত্যি মনে হচ্ছে না?
