shono
Advertisement
United States

আমেরিকায় বন্ধ হল পেনি মুদ্রণ

এখনকার পৃথিবীতে ক্রমশ মুদ্রা এবং নোটের ব্যবহারও কমছে।
Published By: Subhodeep MullickPosted: 05:43 PM Nov 16, 2025Updated: 05:43 PM Nov 16, 2025

২৩২ বছর পর অবশেষে পেনি মুদ্রণ বন্ধ হল আমেরিকায়। কারণ পেনির কোনও মূল্য নেই। কিন্তু স্মৃতির মূল্য?

Advertisement

২৩২ বছর পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত দেহত্যাগ করতে বাধ্য হল আমেরিকান পেনি। ১৭৯৩ সালে শুরু হয়েছিল পেনির যাত্রা আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ার টাকশালে। গত বুধবার সেই একই টাকশালে শেষবারের মতো মুদ্রিত হল পেনি। শেষ পেনির মুদ্রণ-বোতাম টেপার আগে আমেরিকার অর্থসচিব ব্র্যান্ডন ব্রিচ বললেন, পেনির উৎপাদন বন্ধ করে আমরা কর দাতাদের প্রায় ৫৬ মিলিয়ন ডলার বাঁচালাম। কপার-কোটেড জিঙ্কের এক সেন্ট মূল্যের ছোট্ট 'কয়েন' পেনি। যার ওপরে আব্রাহাম লিঙ্কনের ছবি। ১০০ পেনিতে হয় ১ ডলার। যেমন- ব্রিটেনে ১০০ পেনিতে হয় ১ পাউন্ড। আমেরিকার বাজারে আজকের দরে ১ পেনিতে আর কিছুই কেনা যায় না।

পেনি-মুদ্রণের বোতাম শেষবারের জন্য টেপার আগে একটা সমীক্ষাও করা হয়েছিল। প্রশ্ন ছিল, রাস্তায় ১ পেনি পড়ে থাকলে তুলে নেবেন কি? শতকরা ৬৫ জন জানিয়েছেন, না, পেনির কোনও মুল্য নেই। কিন্তু কিছু বৃদ্ধর স্মৃতিতে আজও বেঁচে আছে এই রূপকথা- রাস্তায় পড়ে থাকা একটি পেনি সম্বন্ধে: 'ইট মে বি আ পেনি ফ্রম হেভেন/ দ্যাট অ্যান এঞ্জেল হ্যাজ টস্ড টু ইউ'- কুড়িয়ে নাও ওই সামান্য পেনি, অবহেলায় পথে ফেলে যেও না তাকে, হয়তো তোমারই জন্য স্বর্গ থেকে কোনও অপ্সরা ছুড়ে দিয়েছে ওই আপাত সামান্য দান! পেনি কিন্তু মরেও মরবে না। বেঁচে থাকবে সামান্যর অসামান্য হয়ে ওঠার রূপকথায়। বেঁচে থাকবে কপর্দকহীন বা 'পেনিলেস' হয়ে যাওয়ার করুণ গল্পে। এবং বেঁচে থাকবে জেফ্রি আর্চারের প্রতিশোধের কড়ায়-গণ্ডায়, 'নট আ পেনি মোর, নট আ পেনি লেস' বুঝে-নেওয়ার উপন্যাসে। কারও কারও এই প্রসঙ্গে মনে পড়তে পারে ব্রেটল্ট ব্রেষ্ট রচিত 'থ্রি-পেনি অপেরা', যা বাংলায় মঞ্চ মাতিয়েছিল 'তিন পয়সার পালা' নামে। এক সময় অন্তত তিন পয়সার দাম ছিল। একটা পালা তো দেখা যেত তিন পয়সায়। তিন পয়সা কেন, একটা তামার ফুটো পয়সারও দাম ছিল ভারতে। এমন মানুষ বাঙালিদের মধ্যেও এখনও আছে, যাদের স্মৃতিতে ফুটো পয়সা নিয়ে সামান্য কিছু সওদার মনকেমন দগদগ করছে। সেই মাঝখানে ফুটো পয়সা, তারপর ২ পয়সা, ৫ পয়সা- এসব একে একে মরল। তারা এখনকার বাজারে অচল। কোনও পণ্যই আর তাদের নাগালের মধ্যে থাকল না।

তাছাড়া এখনকার পৃথিবীতে তো ক্রমশ মুদ্রা এবং নোটের ব্যবহারও কমছে। চালু হয়ে গিয়েছে ব্যাপ্ত অনলাইন লেনদেনের ব্যবস্থা। ফোনপে বা গুগলপে-র তৎপর ক্যাশলেস কেনাকাটার যুগ। আক্ষরিক অর্থেই পকেটে পেনিলেস বা কপর্দকশূন্য হয়ে, শুধু একটা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড বহন করে, হাজার-হাজার টাকার বাজার করা যায়। বাংলা ভাষার 'পয়সাকড়ি' হারাবে না। 'কড়ি দিয়ে কিনলাম'- এই বাংলা এখন ধূসর পাণ্ডুলিপি। কিন্তু পয়সাকড়ির তৃষ্ণা ও মেদুরতা থেকে মানুষের কি মুক্তি আছে? কান টানলে যেমন মাথা আসে, 'পয়সা' বললে কোন সুদূর আবছা অতীত থেকে ভেসে আসে কড়ি! এবং এখনও সংসার পাতার আগে বাঙালি বর-কনে কড়ি খেলে। মা লক্ষ্মীর দয়া যেন সংসারে বর্ষিত হয়, এই আশায়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ২৩২ বছর পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত দেহত্যাগ করতে বাধ্য হল আমেরিকান পেনি।
  • ১৭৯৩ সালে শুরু হয়েছিল পেনির যাত্রা আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ার টাকশালে।
  • গত বুধবার সেই একই টাকশালে শেষবারের মতো মুদ্রিত হল পেনি।
Advertisement