বিচারের দাবি 'ওয়ার্কপ্লেস হ্যারাসমেন্ট'-এর জন্য মহিলা আইনজীবীরা কোন আইনের দ্বারস্থ হবেন? বম্বে হাই কোর্টের সাম্প্রতিক রায় নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
২০১৩ সালের 'প্রিভেনশন অফ সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট' ('পিওএসএইচ') আইনের আওতায় মহিলা আইনজীবীরা কি সুরক্ষা পাবেন, না কি পেশাগত 'মিসকন্ডাক্ট'-এর সাধারণ ধারাতেই সেই অভিযোগ শোনা হবে? প্রশ্নটি আবারও নাড়া দিচ্ছে, কারণ জবাব শুধু আদালত নয়, সমগ্র আইনজীবী সমাজের আত্মসম্মানের সঙ্গে যুক্ত। গত ৭ জুলাই বম্বে হাই কোর্টের দেওয়া রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে দাখিল হওয়া আবেদনটি শুধু আইনগত ব্যাখ্যার প্রশ্নও নয়, এটি দেশের বিচারব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাব্য নৈতিক সংকটকে সামনে এনেছে। 'পিওএসএইচ' আইন সুস্পষ্টভাবে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের যৌন হেনস্তা থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য প্রণয়ন হয়েছিল। আদালত, চেম্বার, ল ফার্ম, বার অ্যাসোসিয়েশন- সবই মহিলা আইনজীবীদের বিস্তৃত কর্মস্থল। সেখানে যদি কোনও হেনস্তার ঘটনা ঘটে, তাহলে সেটি যে 'ওয়ার্কপ্লেস হ্যারাসমেন্ট'- এ নিয়ে সন্দেহই থাকা উচিত নয়। কিন্তু বম্বে হাই কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, বার কাউন্সিল কোনও কর্মস্থল নয়, তাই 'পিওএসএইচ' আইনের এক্তিয়ার এখানে নেই। অভিযোগ জানাতে হলে যেতে হবে অ্যাডভোকেট্স অ্যাক্টের সেকশন ৩৫-এর অধীনে, যা পেশাগত অসদাচরণ বা 'প্রফেশনাল মিসকন্ডাক্ট'-এর বিচার করে। এই যুক্তির সমস্যা হল, যৌন হেনস্তা কোনওভাবেই সাধারণ পেশাগত অসদাচরণ নয়। এটি ক্ষমতার অপব্যবহার, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা লঙ্ঘন, এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার স্পষ্ট উদাহরণ। যে-আইনের উদ্দেশ্যই ছিল কর্মক্ষেত্রে নারীদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা রক্ষা, সেখানে নারী আইনজীবীদের বাদ দেওয়ার চেষ্টা শুধু অযৌক্তিক নয়, ন্যায়বিচারের দর্শনের বিরুদ্ধও।
বম্বে হাই কোর্টের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে এখন শীর্ষ আদালতের শরণ নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট 'উইমেন লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন'। তাদের আবেদন যথোপযুক্ত। অভিযোগ- হাই কোর্টের রায় যে মহিলা আইনজীবীদের প্রতিকারহীন অবস্থায় ফেলে দিয়েছে, তা একেবারেই অমূলক নয়। বার কাউন্সিলের শাস্তিমূলক প্রক্রিয়া দীর্ঘ, মন্থর এবং তা মূলত পেশাগত আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি। সেখানে যৌন হেনস্তার মতো গুরুতর অপরাধের নিষ্পত্তি হওয়া বাস্তবসম্মত নয়। আরও বড় কথা, 'পিওএসএইচ' আইন যে দ্রুততার সঙ্গে অভিযোগ নিষ্পত্তির উপর জোর দেয়, বার কাউন্সিলের কাঠামো তার ধারে-কাছেও নেই।
আদালত, যেখানে নারীর ন্যায়বিচারের দাবি শোনার কথা, সেখানে যদি কোনও মহিলার পেশাগত নিরাপত্তাই সুনিশ্চিত না হয়, তাহলে তা শুধু একটি আইনি ব্যর্থতা নয়, বিচারব্যবস্থার নৈতিক কর্তৃত্বকেও দুর্বল করে। এখন সময় এসেছে সুস্পষ্ট বিধান তৈরির। বার কাউন্সিল যদি সত্যিই 'পিওএসএইচ' আইনের আওতায় না পড়ে, তাহলে ভিন্ন ও স্বচ্ছ 'প্রিভেনশন অফ সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট মেকানিজম' তৈরি করা জরুরি। এটি সময়ের দাবি। মহিলা আইনজীবীদের সুরক্ষা কোনও বিশেষ সুবিধা দেওয়া নয়, এটি তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার।
