shono
Advertisement
Women

স্ত্রীকে বাজি রেখে পৌরুষ দেখানোর বীরগাথা উত্তরপ্রদেশে

নারীকে 'বস্তু' প্রতিপন্ন করার দর্পিত স্বভাবটি আদৌ বদলাবে?
Published By: Subhodeep MullickPosted: 02:33 PM Nov 19, 2025Updated: 02:33 PM Nov 19, 2025

হেরে যে জেতে, সে নাকি বাজিগর। বিখ্যাত হিন্দি সিনেমার সংলাপ এখানে অচল। স্ত্রীকে বাজি রেখে পৌরুষ দেখানোর বীরগাথা উত্তরপ্রদেশে।

Advertisement

মহাভারতের 'সভাপর্ব'-র ঘটনা। যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞে আমন্ত্রণ পান দূর্যোধন। সেখান থেকে ফিরে এসে তাঁর মনে সুখ নেই। শরীরে ফুর্তি নেই। চোখের কোণে কালির প্রলেপ। অনুক্ষণ মনমরা। প্রথমে ধৃতরাষ্ট্র, পরে শকুনি কথা বলে জানলেন, যুধিষ্ঠিরের সুখ ও ঐশ্বর্য দেখে দুর্যোধন ব্যথিত হয়েছেন। পাণ্ডবরা তাঁর শত্রু। অথচ, সেই শত্রুরা দিন-দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে। তিনি হীন হয়ে যাচ্ছেন। অর্থগৌরবে এঁটে উঠতে পারছেন না। সামাজিক সম্মানেও পিছিয়ে পড়ছেন। আর, এ-কথা যত ভাবছেন, দূর্যোধন ততই কৃশ ও বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছেন। ধৃতরাষ্ট্র এমন কারণ শুনে দুঃখিত হলেন। ছেলেকে বোঝানোর দিকে গেলেন না। শকুনি চটজলদি সমাধান বাতলে দিলেন। বললেন, 'যুধিষ্ঠিরের যে-সমৃদ্ধি দেখে তুমি সন্তপ্ত হচ্ছ তা আমি দ্যূতক্রীড়ায় হরণ করব, তাকে আহ্বান কর। আমি সুদক্ষ দ্যূতজ্ঞ, সেনার সম্মুখীন না হয়ে পাশা খেলেই অজ্ঞ পাণ্ডবদের জয় করব।'

বিদুরের উপর দায়িত্ব বর্তাল। চললেন, পাশাখেলার নিমন্ত্রণ নিয়ে, যুধিষ্ঠিরের কাছে- ইন্দ্রপ্রস্থে। রাজশেখর বসুর 'মহাভারতের সারানুবাদ' জানাচ্ছে, যুধিষ্ঠির এই আমন্ত্রণ পেয়ে খুশি হন, আবার দ্বিধায় পড়েন। খুশি এ কারণে যে, তিনি পাশা খেলতে ভারি ভালবাসেন, যদিও ভাল খেলতে পারেন না। দ্বিধা এ কারণে যে, শকুনি দারুণ পাশা খেলেন, ফলে হয়তো এই নিমন্ত্রণের নেপথ্যে কোনও চাল আছে। দোলাচলে ভুগে যুধিষ্ঠির ক্রমে পরপর ভুল করতে থাকবেন, যার ফলে ঘনাবে মহাভারতের সবচেয়ে করুণ, জটিল ও বীভৎস ঘটনাবলি।

ধৃতরাষ্ট্র মহারাজ, অতএব তাঁর আমন্ত্রণডাক উপেক্ষা করতে না-পেরে যুধিষ্ঠির গেলেন। প্রথম ভুল। তারপর পরপর সম্পত্তি হারতে থাকলেন, তাও খেলা থামালেন না। দ্বিতীয় ভুল। এক সময় সব সম্পত্তি হারিয়ে ভাইদের বাজি রাখলেন এক-এক করে, এবং হারলেন। বীর, গুণী ভাইদের হারালেন। তারপর নিজেকে বাজি রাখলেন, হেরে ভৃত্য হলেন। এরপর করে বসলেন তৃতীয় ভুল, বিষম ভুল, বাজি রাখলেন স্ত্রী পাঞ্চালীকে। যিনি তখন একবস্ত্রা, রজস্বলা, গৃহবন্দি। ভীম চিৎকার করে উঠলেন, দাদা যুধিষ্ঠিরের হাত পুড়িয়ে ফেলবেন। সবার গণ্যমান্যরা হাহাকার তুলল। তাও সম্বিত পেল না 'দুর্যোধন অ্যান্ড কোং'। দুঃশাসন চুল ধরে টেনে আনল দ্রৌপদীকে ভরা রাজসভায়। দ্রৌপদী তুললেন দার্শনিক তর্ক। যুধিষ্ঠির যদি আগে নিজেকে হেরে থাকেন, তাহলে স্বামীর অধিকার আগেই হারিয়েছেন, কাজেই কোন মালিকানায় দ্রৌপদীকে স্ত্রী রূপে বাজি রাখতে পারেন? এই দ্যূতপর্বেই কার্যত রোপিত হয়ে গেল ভবিষ্যতের ভয়ানক কুরু-পাণ্ডব যুদ্ধের বীজ, 'জাজমেন্ট ডে'-র সম্ভাব্যতা।

সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের একজন ব্যক্তি মদ্যপ হয়ে জুয়াখেলায় বাজি রেখেছিলেন স্ত্রীকে। জাতীয় স্তরে এ-খবর ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনা প্রমাণ করে, স্ত্রীকে 'ব্যক্তিগত সম্পত্তি' মনে করার পুরুষতান্ত্রিক প্রবণতাটি এখনও দেশের নানা অংশে, সামাজিক স্রোতের উপাদান রূপেই বহমান। মহাভারতীয় প্রেক্ষিতটি কালধর্মে হয়তো বদলেছে, ঔচিত্যবোধের নিরিখে বদলায়নি। নারীকে 'বস্তু' প্রতিপন্ন করার দর্পিত স্বভাবটি আদৌ বদলাবে?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের একজন ব্যক্তি মদ্যপ হয়ে জুয়াখেলায় বাজি রেখেছিলেন স্ত্রীকে।
  • জাতীয় স্তরে এ-খবর ছড়িয়ে পড়েছে।
  • এই ঘটনা প্রমাণ করে, স্ত্রীকে 'ব্যক্তিগত সম্পত্তি' মনে করার পুরুষতান্ত্রিক প্রবণতাটি এখনও দেশের নানা অংশে, সামাজিক স্রোতের উপাদান রূপেই বহমান।
Advertisement