কিছু পেশা আসলে পেশাগত চিহ্ন ও পরিধিকে ছাপিয়ে যায়। যেমন, পুলিশের পোশাক। সেনার। ডাক্তারের। পোশাকবিচ্যুতি বিপদ ডেকে আনে।
রাজপথে অ্যাম্বুলেন্সের পাগলপারা ধ্বনি শুনে রাস্তা ছেড়ে দেওয়া হবে– এই তো গ্রাহ্য নিয়ম। অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে প্রাণরক্ষার সুতোটি বাঁধা। সে বন্ধন ভারি নাজুক। সময়ের সামান্য হেরফেরে ছিঁড়ে যেতে কতক্ষণ! অ্যাম্বুলেন্স তাই অন্য মর্যাদায় আসীন। তার জন্য লাল বাতি নিছক আলো। চাইলে, রোগীর প্রাণের দায়ে, অ্যাম্বুলেন্স অগ্রাহ্য করতে পারে লাল আলোর বারণসংকেত। কিন্তু এহেন অ্যাম্বুলেন্সও কলঙ্কিত হয়ে পড়ে মুম্বইয়ের মাফিয়া-রাজের সৌজন্যে।
অ্যাম্বুলেন্স করে পাচার করা হতে থাকে বহুমূল্যের চোরাই সম্পদ। পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়া গেল, সাধারণের দৃষ্টির মধ্যে থেকেও অধরা হওয়া গেল, আর এড়িয়ে যাওয়া গেল সন্দেহের সম্ভাবনা। গোবলয়ের কোনও কোনও রাজ্যে যখন অপহরণ করা হয় বড় মাপের ব্যক্তিত্বকে, যার প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া যাবে মোটা অঙ্কের অর্থ, তখনও সাহায্য নেওয়া হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সের। প্রকাশ ঝা-র সিনেমা আমাদের তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সের যখন এমন শ্রীহীন দশা, কৌলীন্যের এমন অবনমন, তখন ডাক্তারি পোশাকই-বা বাদ থাকে কেন?
ডাক্তারের পোশাকে হসপিটালের নিরাপত্তা ভেদ করে ঢুকে পড়েছে আততায়ী ও ঘটাতে চাইছে প্রাণঘাতী হামলা– হিন্দি সিনেমার দৌলতে এ দৃশ্য আমরা দেখেছি কতই না! হালের ওটিটি-তে আবার দেখা গিয়েছে বিপরীত দৃশ্য। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে ও অপরাধীকে ঢিট করতে ডাক্তারের পোশাককে ‘ছদ্মবেশ’ বানিয়ে হসপিটালে প্রবেশ করছে গোয়েন্দা বিভাগের অফিসারেরা!
কিছু পেশা আসলে পেশাগত চিহ্ন ও পরিধিকে ছাপিয়ে যায়। যেমন, পুলিশের পোশাক। তা যেন গণ-আশ্বাসের প্রতীক। ভরসা ও আস্থার যুগ্মক। তাই ‘ইউনিফর্ম’-কে কলঙ্কিত করার আগে দু’বার ভাবতে হবে– কী কাজ করছি– এমন দীক্ষা দেওয়া হয়। ‘ইউনিফর্ম’ ধারণ করে বাড়তি উদ্দীপনা। একই কথা সত্য সেনার জলপাই রঙের পোশাক ও ডাক্তারের সাদা অ্যাপ্রনের বেলাতেও। স্কুলের ইউনিফর্ম পরে স্কুল থেকে পালানো, বা পালিয়ে সিনেমা দেখতে যাওয়াকে এ কারণেই খুব বড় ধরনের বিচ্যুতি বলে ভাবা হত, হয়। কারণ, এখানে স্কুলের ইউনিফর্মের সঙ্গে সংলিপ্ত ‘চেতনা’-র হানি ঘটছে, যা আসলে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবমাননা।
সম্প্রতি রাজ্যের একটি ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীকে ডাক্তারের পোশাকে দেখে ভিকটিম বিভ্রান্ত হয়েছিল। তাই তার কথা শোনে। পুলিশি তৎপরতায় অপরাধী দ্রুত জালে পড়েছে– এ যদি আখ্যানের আলোকময় উদ্ভাস হয়, তাহলে কী করে অপরাধীর হাতে ডাক্তারের পোশাক গিয়ে পড়ল, বা কী করে সেই পোশাক পরে সে হসপিটালে ঘোরাফেরা করতে পারল, তা দুশ্চিন্তার। একইরকমের দুশ্চিন্তা জাগে, যখন বিদেশি দুই ক্রিকেটারকে এই দেশের মাটিতে যৌন নিগ্রহের খবর পাই আমরা। অতিথিকে ‘দেবোপম’ উচ্চতায় স্থাপন করা এই দেশে ক্রিকেটকে স্নায়ুতন্ত্র ভাবা হয়। কিন্তু তা যে কেবল পুরুষ-ক্রিকেটের বেলায়, সেটি স্পষ্টতর হল। মেয়ে– ক্রিকেটার হোক বা রোগী– নেহাত ‘অবজেক্ট’– ভোগ্য ও পণ্য।
