নিউ ইয়র্কের মেয়র হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত, জোহরান মামদানি। তাঁর জয় চরম দক্ষিণপন্থী, পুঁজিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে মানুষের রায়। এই জয়, ভাবনাগত পরিবর্তনের লড়াইয়ে অক্সিজেন জোগাবে। যা বিশ্বের পক্ষে মঙ্গলজনক।
বিশ্বের নানা প্রান্তেই সাম্প্রতিক অতীতে চরম দক্ষিণপন্থীদের উত্থান ঘটেছে। বিভিন্ন দেশের ক্ষমতায় তারা। তাদের আচরণে ফ্যাসিস্ট-প্রবণতা স্পষ্ট। কখনও ধর্ম, কখনও জাতি, কখনও ভাষার ভিত্তিতে আধিপত্যবাদ কায়েক করতে তারা সদা সচেষ্ট। নীতি, নৈতিকতার বালাই নেই। ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে, মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ও ভয় দেখিয়ে যেনতেন প্রকারে ক্ষমতা দখল ও টিকে থাকা-ই তাদের লক্ষ্য। এই স্রোতের বিরুদ্ধে পালটা লড়াই চলছে। কিছু ক্ষেত্রে হয়তো সাফল্যও আসছে। কিন্তু তা খুবই সামান্য, বিচ্ছিন্ন। এই আবহে নিউ ইয়র্কের মেয়র পদে জোহরান মামদানির জয় খুব তাৎপর্যপূর্ণ।
ঘৃণা-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক শক্তির ঘুরে দঁাড়ানোর জোরালো বার্তা বলে মনে করলে অত্যুক্তি হবে না। কে নেই বিপক্ষে? স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সরাসরি বিরোধিতা তো করেইছেন, তার সঙ্গে রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে নিউ ইয়র্কের বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এলন মাস্ক, বিল অ্যাকম্যানের মতো কোটিপতি প্রভাবশালীও ছিলেন বিপক্ষে।
অন্যদিকে, সীমিত রসদ-সামর্থ্য নিয়ে লড়াইয়ে নামা মামদানি একে তো ভারতীয় বংশোদ্ভূত, তার উপর মুসলমান। যে-পরিচয় নিয়ে প্রচারপর্বে তঁাকে বারবার আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে। তারপরেও আমেরিকার সবচেয়ে বড় শহরে সংখ্যাগুরু মানুষের সমর্থন আদায় করে নিতে পেরেছেন তিনি। ভেঙে গিয়েছে মার্কিন রাজনীতির চিরকালীন দক্ষিণপন্থা ও মধ্যপন্থার ‘বাইনারি’। কারণ, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হলেও মামদানি আদতে বামপন্থী ‘ডেমোক্র্যাটিক সোশালিস্টস অফ আমেরিকা’ দলের সদস্য। তাই আপাতদৃষ্টিতে তঁার জয় ট্রাম্প-মাস্কদের মতো চরম দক্ষিণপন্থী, পুঁজিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে মানুষের রায় বলে উল্লসিত অনেকেই।
নিউ ইয়র্কে মুসলিম ভোট মাত্র ৯ শতাংশ। তাই মামদানির ধর্মীয় পরিচয় জয়ের ক্ষেত্রে গৌণ। তঁার পরিচিতি ও দিগন্ত আরও বিশাল। তাই তো নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী তঁাকে ‘মেয়র’ হিসোবে বেছে নিয়েছে। কারণ, তিনি নিউ ইয়র্কের সাধারণ সমস্যাবলি বুঝে সেগুলো সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে বাড়ি ভাড়া স্থিতিশীল করা, বিনামূল্যে বাস পরিবহণ পরিষেবা ও শিশুযত্ন পরিষেবার সম্প্রসারণ। তঁার সমস্ত প্রস্তাব বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সাধারণ জনগণের এসব সমস্যা নিয়ে আগে কখনও কেউ ভাবেননি।
নিউ ইয়র্ককে বলা হয় ‘ইহুদিদের শহর’। পৃথিবীর যত নামী ও ধনী ইহুদি আছেন, তঁাদের বেশির ভাগ বাস করেন নিউ ইয়র্ক শহরে। কিন্তু ইহুদিদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ, বিশেষত তরুণ, প্রগতিশীল ও সংস্কারবাদী ইহুদিরাও তঁার সামাজিক ন্যায়বিচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আকৃষ্ট হয়ে তঁাকেই সমর্থন করেছেন। এই জয়, ভাবনাগত পরিবর্তনের লড়াইয়ে অক্সিজেন জোগাবে। যা বিশ্বের পক্ষে মঙ্গলজনক।
