শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: বিশ্বকর্মা পুজো সেরে ফেরার পথে জলের স্রোতে তলিয়ে মৃত্যু হল পুরোহিতের। চোখের সামনে বাবাকে ভেসে যেতে দেখলেন ছেলে। মৃতের নাম দিলীপ হড়। বয়স ৭৫। ঘাটাল শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে গড় প্রতাপ নগরের বাসিন্দা তিনি।
শুক্রবার ছিল বিশ্বকর্মা পুজো। ঘাটালের বিদ্যুৎ দপ্তরের পুজোর বরাত পেয়েছিলেন দিলীপ হড়। সেই পুজো করতেই গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী অনিমা হড় ও ছেলে রাজকুমার হড়। পুজো ভালভাবেই সম্পন্ন হয়। সন্ধে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেন দিলীপবাবু।
বন্যা পরিস্থিতিতে এলাকার নানা জায়গায় জল জমে রয়েছে।বাঁধের রাস্তায় প্রায় গলা পর্যন্ত জমে ছিল। সেখান দিয়ে যেতে গিয়েই ঘটে বিপত্তি। রাজকুমার হড় সবার আগে যাচ্ছিলেন। তাঁর পিছনেই ছিলেন দিলীপবাবু। ছেলে ও স্বামীর পিছনে জল ভেঙে এগোচ্ছিলেন অনিমা হড়। প্রত্যেকের মাঝে মাত্র একহাত মতো তফাত ছিল।
[আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কোয়ার্টারে উদ্ধার মহিলা চিকিৎসকের পচাগলা দেহ, পরকীয়ার জেরেই খুন? তদন্তে পুলিশ]
আচমকা রাজকুমার দেখতে পান বাবা ভেসে অনেকটা দূর চলে গিয়েছেন। ততক্ষণে চারপাশে এলাকায় অন্ধকার ছেয়ে গিয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই জলের স্রোতে ভেসে যাওয়া বাবাকে ধরতে এগিয়ে যান রাজকুমার। অনেক কষ্টে দিলীপবাবুর নাগাল পান তিনি। কিন্তু ততক্ষণে বৃদ্ধ পুরোহিত জ্ঞান হারিয়েছেন। কোনওক্রমে বাবাকে উঁচু জায়গায় নিয়ে আসেন রাজকুমার। তারপর স্থানীয়দের সাহায্যে ঘাটাল মহকুমার হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ৭৫ বছরের বৃদ্ধকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। অনেক চেষ্টা করেও বাবাকে বাঁচাতে পারলেন না, আক্ষেপ রাজকুমারের।
টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত ঘাটাল। শিলাবতী নদীর জল উপচে পড়েছে। এমন অবস্থায় আবার বঙ্গোপসাগরের জোরাল হয়েছে ঘূর্ণাবর্ত। তার জেরে রবি ও সোমবার একাধিক জেলায় ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হয়েছে। দুই মেদিনীপুরেও বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন ঘাটালবাসী। ডিভিসি থেকে জল ছাড়াও সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আর তাহলে বেশ বিপাকে পড়বেন ঘাটালের বাসিন্দারা। এদিকে কালনার ভাগীরথী নদীতে তলিয়ে যাওয়া ছাত্রের দেহ শনিবার উদ্ধার করা হয়। সেখানেও নদীর জলস্তর বাড়ছে বলে খবর।