সুকুমার, সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশে (Bangladesh) করোনা পরিস্থিতি দিনদিন ভয়ংকর আকার নিচ্ছে। এই অবস্থায় সব নির্বাচন স্থগিত করা হল। আগামী ১১ এপ্রিল ইউনিয়ন পরিষদ ও লক্ষ্মীপুর-২ আসনে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। নির্বাচন কমিশনের সভা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা সাংবাদিকদের এই কথা জানান। তিনি বলেন, ”করোনার কারণে এটা কমিশনের নীতিগত সিদ্ধান্ত। এর আগে গত ২৯ মার্চ করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার কারণে আগামী ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।” ১১ এপ্রিল প্রথম ধাপের দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ – ইউপি ভোটের সঙ্গে পৌর নির্বাচনের ষষ্ঠ ধাপে ৯টি পৌরসভার ভোটও গ্রহণ করার কথা ছিল। কিন্তু আপাতত সব স্থগিত করা হয়েছে।
দেশে গত বছর জুন-জুলাই মাসে করোনা সংক্রমণের প্রথম ঢেউ ছিল বেশ তীব্র। এ বছর মার্চে শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে এবার সংক্রমণ বেশি তীব্র। টিকাগ্রহণের দুই মাসেরও বেশি সময় পর করোনায় আক্রান্ত হলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। বৃহস্পতিবার মাঝরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে নিজে করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর জানিয়েছেন তিনি।
[আরও পড়ুন: লজ্জা! বাংলাদেশে মৌলবাদীদের তাণ্ডবে পুড়ল উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র সংগীত প্রতিষ্ঠান]
এদিকে, করোনা ভাইরাসের (Coronavirus)দাপট বেড়ে যাওয়ায় কড়া হাতে দমনের পদক্ষেপ নিল প্রশাসন। ইংল্যান্ড বাদে গোটা ইউরোপ ও ১২টি দেশ থেকে বাংলাদেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়েছে অসামরিক বিমান মন্ত্রণালয়। ১২টি দেশের মধ্যে রয়েছে – আর্জেন্টিনা, বাহরাইন, ব্রাজিল, চিলি, জর্ডন, কুয়েত, লেবানন, পেরু, কাতার, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক ও উরুগুয়ে। যেসব দেশ থেকে বাংলাদেশে আসার বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই সেসব দেশের যাত্রীদেরও প্রত্যেকের করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকতে হবে। এছাড়া চার দিন বাধ্যতামূলক প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে জনগণের সহায়তা চেয়েছেন। পাশাপাশি শেখ হাসিনা জনসাধারণকে পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ”নাকে গরম জল পান করতে ও গরম জলের ভাপ নেবেন। কেউ মানুষের সঙ্গে মিশবেন বা দোকানে যাবেন, মার্কেটে যাবেন বা মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন, ঘরে ফিরে একটু গরম জলের ভাপ নেবেন। এগুলো করলে ভাইরাস দুর্বল হয়ে যাবে।” দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। গত ২৪ ঘণ্টায় এই মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ১০৫ জন।একই সময়ে নতুন শনাক্ত হয়েছেন আরও ছ হাজার ৪৬৯ জন। এ নিয়ে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ছ’ লক্ষ ১৭ হাজার ৭৬৪ জন।
[আরও পড়ুন: হেফাজতের সাত মামলায় কাঠগড়ায় সাড়ে ৮ হাজার, পরিস্থিতি সামলাতে কড়া শাসকদল]
আরও কয়েকটি নিয়ম জারি করা হয়েছে বাংলাদেশের তরফে। ইংল্যান্ড বাদে করোনার লক্ষণ থাকলে নিজ খরচে সরকার নির্ধারিত জায়গায় ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। কেউ যদি কোভিড-১৯ সার্টিফিকেট না নিয়ে আসেন, তাহলে ৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন শেষে নিজ খরচে পরীক্ষার পর ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ড থেকে সিলেটে আসলেন আরও ৮৩ জন লন্ডন প্রবাসী। বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তারা হিথরো বিমানবন্দর থেকে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে পৌঁছন। এরপর তাঁদের শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষার পর সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সেনাবাহিনী এবং পুলিশের তত্ত্বাবধানে সকল যাত্রীদেরকে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়।