shono
Advertisement

Breaking News

Dooars

বৃষ্টি শুরু হতেই কাঁঠালের লোভে হাজির 'মহাকাল', তরাই-ডুয়ার্সে অশনি সংকেত, বাড়ছে নজরদারি

এলাকার কোন গাছে কত কাঁঠাল ফলেছে সবই জানে 'মহাকাল'।
Published By: Suchinta Pal ChowdhuryPosted: 05:03 PM May 30, 2024Updated: 05:03 PM May 30, 2024

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: বৃষ্টি শুরু হতেই কাঁঠালের লোভে আনাগোনা বাড়ছে বুনো হাতির। যা তরাই ও ডুয়ার্স এলাকার জঙ্গল লাগোয়া জনপদের জন্য এখন অশনি সংকেত। গাছ ভরেছে কাঁঠালে। এখনও পাকেনি। সবই এঁচোড়। বাজারে দাম ভালো। কয়েকদিন পর পাকলে দাম মিলবে না। কিন্তু বিক্রি করবে সাহস কোথায়! সামান্য কিছু টাকার আশায় এঁচোড় বিক্রি করে বিপদ ডেকে আনতে নারাজ গরুমারা, চাপড়ামারি, টুকুরিয়াঝাড় ও বৈকুন্ঠপুর জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা।

Advertisement

তাঁরা জানিয়েছেন, এলাকার কোন গাছে কত কাঁঠাল ফলেছে সবই জানে 'মহাকাল'। পাকলে খাবে তাই প্রতিদিন নজরে রেখেছে। গাছে কাঁঠাল না পেলে তাণ্ডব চালিয়ে ঘরবাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে দেবে। অদ্ভুত ওই শঙ্কা যে অমূলক নয় স্বীকার করেছেন বনকর্তারাও। জলপাইগুড়ির এডিএফও জয়ন্ত মন্ডল বলেন, "ওই সমস্যার জন্য জঙ্গল সংলগ্ন লোকালয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।"
            
জঙ্গল মহলের বাসিন্দারা ভয়ে বা ভক্তিতে যাদের ‘মহাকাল’ বলেন ওরা আদতে বুনো হাতি। বাড়ির উঠানের পাশে গাছ থেকে কাঁঠাল পেরে খাচ্ছে দেখেও কিছু করবেন এমন সাহস নেই স্থানীয় বাসিন্দাদের। গরুমারার সুরসুতি বনবস্তি এলাকার বাসিন্দা সরমা ওঁরাও কাঠের উঁচু ঘরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মাঝারি মাপের কাঁঠাল গাছ দেখিয়ে জানান, কয়েকদিন আগে সন্ধ্যার পর খচমচ শব্দ শুনে কুপি নিয়ে বাইরে বের হয়েছিলেন। গাছের দিকে তাকাতে চোখ কপালে ওঠে। সরমা বলেন, “গাছতলায় মোটা কাঠের টুকরো রাখা ছিল। একটি দাঁতাল ওই কাঠের টুকরো শুঁড় দিয়ে তুলে গাছের গুড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড় করে সেটার উপরে সামনের দুটি পা তুলে দিয়ে দিব্যি কাঁঠালের গন্ধ শুকছে।” 

[আরও পড়ুন: মাঠে ধান কাটতে গিয়ে সাক্ষাৎ মৃত্যু! কোচবিহারে বজ্রপাতে প্রাণ হারাল কিশোর, আহত কয়েকজন]

কালামাটি বনবস্তির বাসিন্দা তাপস বর্মণ যেমন জানালেন, প্রতিরাতে এলাকায় হাতি আসছে। কাঁঠাল গাছতলায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ফিরে যাচ্ছে। তাপসবাবুর মতো শিলিগুড়ির নকশালবাড়ি, মাটিগাড়া, খড়িবাড়ি, ফাসিদেওয়া ব্লকের বাগডোগরা, বুড়াগঞ্জ, হাতিঘিসা, মণিরাম, কেটুগাবুরজোত, মতিধর, গিরিশচন্দ্র, মানঝা চা বাগান এলাকার অনেকেরই বিশ্বাস, এভাবে মহাকালের দল ঘুরে দেখে যায় গাছের কাঁঠাল ঠিকঠাক আছে কি না। পাকলে বসবে মহাভোজের আসর। স্থানীয়দের কথায়, টুকুরিয়াঝাড় ও বৈকুন্ঠপুর জঙ্গল থেকে এলাকায় হাতি ঢুকছে।

গত বছরের জুন মাসের রাতে চোখে দেখা অবাক করা কাণ্ড ভোলেননি চটুয়া বনবস্তির ফাগু ওঁরাও। তাঁর কথায়, রাতে ডাল ভাঙার শব্দ শুনে জানালা খুলে টর্চের আলো ফেলতে দেখেন গাছতলায় তিনটি হাতি দাঁড়িয়ে। একটি হাতি বাড়ির পাশে ডাই করে রাখা বাঁশের স্তুপ থেকে একটি বাঁশ শুঁড়ে তুলে খোঁচা দিয়ে কাঁঠাল নামানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “পাকা চালতা ও কাঁঠালের গন্ধ মাদকের নেশার মতো হাতিকে টানে। কাঁঠালের লোভে এখন থেকে ওদের আনাগোনা, নজরদারি শুরু হয়েছে। এঁচোড় বিক্রি করে দিলে আর থাকতে হবে না।"

চটুয়া বনবস্তির প্রবীণ বাসিন্দা টুকরু ওঁরাও জানান, এবার তীব্র গরমে জঙ্গলের ঢাড্ডা, পুরুন্ডির মতো ঘাসের জঙ্গল শুকিয়েছে। সেখানে খাবার মিলছে না। কয়েকদিনের মধ্যে কাঁঠাল পাকবে মহাকাল জানে। তাই জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। কখনও একা। আবার কখনও সপরিবারে দল বেঁধে ছানাপোনা নিয়ে। রাতভর এক বস্তি থেকে অন্য বস্তি ঘুরে কাঁঠাল দেখে যাচ্ছে। এর পর গাছে ফল না থাকলেই বিপদ। খেপে গিয়ে ঘরদোর ভেঙবে। নষ্ট করবে ধানের বীজতলা। ওই ভয়ে বনবস্তি এলাকার বাসিন্দারা কাঁঠাল বিক্রি না করে গাছেই রেখে দিয়েছেন।

লাটাগুড়ির বিচাভাঙ্গা বনবস্তির বাসিন্দা জয়রাম কোড়ার বক্তব্য, বস্তির গাছে কাঁঠাল পাকলে রক্ষা নেই। সন্ধ্যা হতে না-হতে হাতি ঢুকবে। এলাকায় এসে প্রথমে চারদিকে ঘুরে যে গাছে পাকা কাঁঠাল আছে সেটা খুঁজে বের করবে। সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে শুঁড় তুলে গন্ধ নিয়ে জেনে নেবে ঠিক কোন কাঁঠালটি পেকেছে। এর পর শুঁড় দিয়ে সেটা নামিয়ে চেটেপুটে খেয়ে দুলকি চালে অন্য গাছের খোঁজ শুরু করবে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • সামান্য কিছু টাকার আশায় এঁচোড় বিক্রি করে বিপদ ডেকে আনতে নারাজ গরুমারা, চাপড়ামারি, টুকুরিয়াঝাড় ও বৈকুন্ঠপুর জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা।
  • তাঁরা জানিয়েছেন, এলাকার কোন গাছে কত কাঁঠাল ফলেছে সবই জানে 'মহাকাল'। পাকলে খাবে তাই প্রতিদিন নজরে রেখেছে। গাছে কাঁঠাল না পেলে তাণ্ডব চালিয়ে ঘরবাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে দেবে।
  • চটুয়া বনবস্তির প্রবীণ বাসিন্দা টুকরু ওঁরাও জানান, এবার তীব্র গরমে জঙ্গলের ঢাড্ডা, পুরুন্ডির মতো ঘাসের জঙ্গল শুকিয়েছে। সেখানে খাবার মিলছে না। কয়েকদিনের মধ্যে কাঁঠাল পাকবে মহাকাল জানে।
Advertisement