অভিষেক চৌধুরী, কালনা: ‘শোলে’ (Sholay) সিনেমায় ‘বাসন্তী’কে পেতে মদের বোতল নিয়ে জলের ট্যাঙ্কের মাথায় উঠেছিল ‘বীরু’। পণ করেছিল বাসন্তীর সঙ্গে বিয়ের প্রতিশ্রুতি না মিললে তিনি ওই জল ট্যাঙ্কের মাথা থেকে ঝাঁপ দেবেন। আর এবার প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে পূর্ব বর্ধমানের (Purba Bardhaman) নাদনঘাটের এক যুবককে দেখা গেল এভাবেই উঁচু মোবাইল টাওয়ারের মগডালে চড়ে বসতে। মদের বোতল হাতে নিয়ে প্রেমিকাকে না পেয়ে বীরুর মত একের পর এক ডায়লগ দিতেও শোনা যায় খোকন দাস নামে ওই যুবককে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এমনই এক ঘটনা দেখে রীতিমতো অবাক হয়ে যান স্থানীয়রা। কারণ সাময়িকভাবে তারা বুঝেই উঠতে পারেননি এটা কি কোনও সিনেমা নাকি বাস্তব। অনেকেই ভয়ও পেয়ে যান। কারণ উপর থেকে পড়লেই ওই যুবকের নিশ্চিত মৃত্যু। এমনই কথা ভেবে বহু চেষ্টা করেও বন্ধুরা তাঁকে নামানোর চেষ্টা করেও নামাতে পারেননি। স্বাভাবিক কারণেই এই অবস্থায় তাঁরা কি করবেন বুঝেও উঠতে পারছিলেন না। তার মধ্যেই আবার ওই যুবক ডায়ালগ দিতে-দিতেই কখনও একেবারে উঁচুতে উঠতে, আবার কখনও কিছুটা নিচে নামতে থাকেন। তা দেখেই আঁতকে ওঠেন অনেকেই। কিন্তু যুবককে তো বাঁচাতে হবে। তাই শেষপর্যন্ত তাঁরা নাদনঘাট থানার পুলিশকে ঘটনার কথা জানান। তড়িঘড়ি ওসি সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায়ের তৎপরতায় ওই টাওয়ারের নিচে চলে যায় বিশাল পুলিশবাহিনী। দ্রুততার সঙ্গে মাছ ধরবার টানা জাল ওই মোবাইল টাওয়ারের নিচে রেখে পুরো এলাকাকে ঘিরে ফেলা হয়।পাশাপাশি তাঁকে বুঝিয়ে ওপর থেকে নামাতে পুলিশ নিচে থেকে মাইকিংও শুরু করে।
[আরও পড়ুন: ‘এভাবে চলে যাবে ভাবিনি’, চিরঘুমের দেশে পাড়ি দেওয়া ছেলের শোকস্তব্ধ জামবনি]
কিন্তু তাতে কি! খোকন ওরফে মন্টে তখন প্রেমিকাকে না পাওয়ার যন্ত্রনার কথা ডায়ালগের সুরে বলতে থাকেন। আর তখনই সকলের মনে পড়ে শোলে সিনেমার বীরু-বাসন্তীর প্রেমকাহিনীর সেই চিত্রনাট্য। এরপরেই স্থানীয়দের সঙ্গে পুলিশ কথা বলে জানতে পারে নাদনঘাটের বাসিন্দা খোকন নামে ওই যুবকের কাছে একটি মোবাইলও রয়েছে। এরপরেই সেই নম্বর জোগাড় করে পুলিশ তাঁর মা নমিতা দাসকে দিয়ে ফোন করিয়ে তাঁকে বেশ কয়েক ঘন্টা ধরে বোঝাতে থাকে। তাতেও সে নাছোড়বান্দা। কারণ এক পেট মদ খেয়ে সে তখন বিরহ যন্ত্রনায় কাতর। তিন ঘন্টার প্রচেষ্টায় শেষপর্যন্ত এদিন বিকাল ৫টা নাগাদ তার বন্ধুদের সহযোগিতায় পুলিশ ওই মোবাইল টাওয়ার থেকে নামায়। এরপরেই সে পুলিশকে জানায়, যে তিনি অবিবাহিত। গাড়ি চালিয়ে রোজগার করে। কিন্তু তাঁর প্রেমিকা ছেড়ে চলে যাওয়ার যন্ত্রনাই তিনি আর ভুলতে পারছেন না। তাই এমন ঘটনা তিনি ঘটিয়ে ফেলেছেন। টাওয়াররে নিচে থাকা কয়েকশো মানুষ তখন বাস্তবের মাটিতে থাকা এই নায়ককে এক ঝলক দেখতে ভিড় জমিয়েছে। শেষপর্যন্ত পুলিশ অবশ্য তাঁকে থানায় নিয়ে যায়।