সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পহেলাজ নিহালানির জমানায় বেশ কিছুদিন ধরেই অস্বস্তিতে ভুগছিলেন পরিচালকরা৷ সেন্সরের কাঁচির দৌরাত্মে নাজেহাল হচ্ছিলেন একের পর এক শিল্পী৷ শেষমেশ ‘উড়তা পাঞ্জাব’-এ এসে দেখা গেল বিস্ফোরণ৷ সেন্সর-রাজের বিরুদ্ধে এককাট্টা হল বলিপাড়া৷
ছবিকে ছাড়পত্র দেওয়ার দায়িত্ব দিয়ে যে সেন্সর বোর্ডের জন্ম, কার্যত তা শিল্পীদের নিয়ামক সংস্থায় পরিণত হয়েছে৷ পহেলাজ নিহালানির জমানায় তা চরমে পৌঁছেছে৷ এমনকী বন্ডের ছবি থেকে বাদ পড়েছে চুমুর দৃশ্য৷ যে ‘দ্য জঙ্গল বুক’ দেখে বেড়ে উঠেছে কয়েক প্রজন্ম, তাইই যখন সিনেমা হিসেবে মুক্তি পেতে গেল, তখন পেয়েছিল ‘ইউএ’ সার্টিফিকেট৷ অন্যদিকে ‘মস্তিজাদে’ বা ‘ক্যায়া কুল হ্যায় হাম থ্রি’-র মতো ছবি মুক্তি পেয়েছিল কোন কাটছাঁট ছাড়াই৷ সেন্সরের এই দ্বৈততায় বলিপাড়ায় বেশ অসন্তোষ জমা হয়েছিল৷ যার চূড়ান্ত বিস্ফোরণ দেখা গেল ‘উড়তা পাঞ্জাব’কে কেন্দ্র করে৷
সেন্সরের কাজকর্ম খতিয়ে দেখতে শ্যাম বেনেগালের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছিল কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক৷ সে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, সেন্সরে কাঁচিকে অব্যাহতি দেওয়ারই কথা ছিল৷ বেনেগালের প্রস্তাব ছিল, সিনেমায় শিল্পীর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করে বরং বয়স অনুযায়ী আরও নানা ক্যাটোগোরিতে ভাগ করে দেওয়া হোক৷ কিন্তু এখনও এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়নি৷ এরই মধ্যে উড়তা পাঞ্জাবে প্রায় ৭৯ টি দৃশ্যে আপত্তি তোলে সেন্সর৷ ছবির নামে ‘পঞ্জাব’ শব্দ নিয়ে আপত্তি তো ছিলই, এমনকী ছবি থেকে পাঞ্জাবের পটভূমিকা মুছে ফেলারও নির্দেশ দেওয়া হয়৷ এই বিধান মেনে নিতে পারেননি ছবির প্রয়োজক অনুরাগ কাশ্যপ৷ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বম্বে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি৷ সেখানে সেন্সরের ভূমিকাই তীব্র সমালোচিত হয়৷
এই ‘উড়তা পাঞ্জাব’ প্রসঙ্গেই প্রায় এককাট্টা হয়েছে বলিউড৷ কলকাতায় নিজের ছবির প্রচারে এসে অমিতাভ বচ্চন জানিয়েছেন, ‘সেন্সর যেন কোনওভাবেই সৃজনশীলতার প্রতিবন্ধক না হয়ে ওঠে৷’ একই মত আমির খানেরও৷ তিনি জানিয়েছেন, ‘চলচ্চিত্রকারের কণ্ঠস্বর কোনওভাবেই দমিয়ে রাখা উচিত নয়৷’ এই মুহূর্তে বলিউড ছাড়িয়ে যে নায়িকার উড়ান হলিউডে, সেই প্রিয়াঙ্কা চোপড়াই কিন্তু এই ইস্যুতে বলিউডের পাশে৷ তাঁর মত, গণতান্ত্রিক দেশে এভাবে সৃষ্টিকে স্তব্ধ করে দেওয়া যায় না৷ সেন্সরের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন জাতীয় পুরস্কার জয়ী অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউতও৷ অনুপম খেরের মতো বর্ষীয়ান অভিনেতাও সেন্সরের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছেন৷ জানিয়েছেন, ‘সিনেমা তো সমাজের প্রতিচ্ছবি৷ তাকে আটকানো কোনওভাবেই উচিত নয়৷’ বলিউডের এই একজোট হওয়াতে গর্বিত হৃতিক রোশনও৷ জানিয়েছেন, ‘উড়তা পাঞ্জাব সিনে-ইন্ডাস্ট্রির অস্বস্তিকর দিকটি সামনে এনেছে৷ তবে তার বিরুদ্ধে যে মাথা তুলে দাঁড়ানো যায় সেটাও দেখা গেল৷’
বস্তুত উড়তা পাঞ্জাব গোটা দেশের সিনে-ইন্ডাস্ট্রিকেই একজোট করেছে৷ সেন্সর ব্যবস্থা যে ব্যারিকেড তৈরি করেছে শিল্পীদের সামনে তার বিরুদ্ধে সরব গোটা দেশই৷ তবে ব্যারিকেড ভেঙে নতুন রাস্তাও তৈরি হয়৷ ‘উড়তা পাঞ্জাব’ থেকেই সেই রাস্তার সূচনা হয় কি না, সেটাই দেখার৷
The post ‘উড়তা পাঞ্জাব’ বিতর্কে সেন্সরের বিরুদ্ধে এককাট্টা বলিউড appeared first on Sangbad Pratidin.