shono
Advertisement

বাড়ির আউট হাউসকেই স্টুডিও বানিয়ে ফেলেন সৌমিত্র, শেষ জীবনে এঁকেছিলেন একাধিক ছবি

দেখে নিন তাঁর হাতের সৃষ্টি।
Posted: 02:34 PM Nov 15, 2020Updated: 03:17 PM Nov 15, 2020

নির্মল ধর: অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে (Bengali Actor Soumitra Chatterjee) পর্দায় দেখার অভিজ্ঞতা সব বাঙালিরই আছে। তাই স্মৃতির সম্পদ হয়ে আজীবন থেকে যাবে। কিন্তু জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে যে মানুষটা একান্তই নিজের তাগিদে তুলি আর ক্যানভাস নিয়ে বাড়ির আউটহাউসটাকে স্টুডিও বানিয়ে ফেলেছিলেন, সেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ক’জন আর দেখেছেন! 

Advertisement

সৌমিত্রবাবুর “ব্যক্তিগত কবিতার” দু’টি লাইন — কে জাগালো তোকে/পাথরে কে এঁকেছিল চোখ। এই দু’টি লাইনই মনে পড়ে গিয়েছিল তাঁর আঁকা আত্ম-প্রতিকৃতির গুলোর দিলে নজর পরলেই। শিল্পী রবিন মণ্ডল তাঁর বহুদিনের বন্ধু। একমাত্র তিনিই জানতেন সৌমিত্রবাবুর এই গোপন কর্মযজ্ঞের কথা। শুনেছি একদিন তিনিই নাকি আরেক শিল্পী যোগেন চৌধুরীকে (Jogen Chowdhury) খবরটা দিয়েছিলেন। তাঁর বাড়িতে প্রথম গিয়ে যোগেবনবাবু তো অবাক! প্রথাগত কোনও শিক্ষা ছাড়াই, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের তুলির টান, রঙের ব্যবহার চমকে দিয়েছিল তাঁকে। বলেছিলেন,“সৌমিত্রর একটা সংবেদনশীল শিল্পী মন আছে, রয়েছে দেখারও একটা শিল্পী মন। সেটা দিয়েই ও ছবিগুলো আঁকছে। শুধু রং নয়, পরিচিত কোনও অভিনেতা বা অভিনেত্রীর ছবিতেও ওঁর নিজস্ব ভাবনার প্রলেপ ও তুলির টান রয়েছে।”

শিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে প্রথম প্রদর্শনীর আলোয় নিয়ে আসে রবিন মণ্ডলের উৎসাহ এবং কিউরেটর জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যের পরিকল্পনা। শুধু কলকাতার ICCR নয় সৌমিত্রবাবুর ছবির প্রদর্শনী হয়েছে বেঙ্গালুরুতেও। যোগেন চৌধুরীর চেষ্টায় প্রদর্শনী হয় শান্তিনিকেতনেও। সেখানে ছবি দেখতে উপস্থিত হয়েছিলেন মনু এবং মাধবী পারেখ, নীলিমা শেখ, জ্যোতি ভাট, গোলাম মহম্মদের মতো ব্যক্তিত্বরা! প্রভূত প্রশংসা পেয়েছিল সেই প্রদর্শনী। অনেকে বলে থাকেন, রবীন্দ্রনাথের প্রভাব নাকি রয়েছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের তুলি আর রঙে। হতেই পারে। তাঁর অভিনয় জীবন, কবিতার জীবন ঘিরে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি নিজে অবশ্য তেমন কিছু মনে করতেন না। বলতেন, “আমি একাকিত্ব কাটাতে, নিজের মনের আয়নায় ফুটে ওঠা কিছু মুহূর্তকে ক্যানভাসের বুকে ছড়িয়ে দিচ্ছি। সেগুলো শিল্প হল কি হল না, সেটা আমি জানি না, জানতেও চাই না। হ্যাঁ কারও ভালই লাগছে হয়তো, সেটাই আমার পাওনা। আমি একজন হনু শিল্পী, একথা গলা বাজিয়ে বলতে পারিনা।” তবুও তাঁর নিজের আঁকা একটা “আত্ম-প্রতিকৃতি” দেখলে চট করে রবীন্দ্রনাথের কথাই মনে পড়ে যে!।

সৌমিত্রবাবুর ICCR-এর প্রদর্শনীতে দু’দিন গিয়েছিলাম। তাঁর ছবিগুলো দেখতে দেখতে মনে হয়েছিল শিল্পীর দীর্ঘ শিল্পচর্চার মুহূর্তগুলো যেন এক-একটা ফ্রেমে বাঁধানো। প্রতিটি ছবির রং, তুলির টানে আর আলো-ছায়ার খেলাতে ছিল সংবেদনশীল মনের প্রতিরূপ। প্রায়োগিক দক্ষতার চাইতে বড় কথা নান্দনিক হয়ে ওঠা, দর্শকের সঙ্গে একাত্ম হতে পারা। তাই-ই করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

গত ৫৫ বছর ধরে যে দীর্ঘ চেহারার মানুষটি মুখে রং মেখে মুখোশ চড়িয়ে শতাধিক চরিত্রের মান, অভিমান, হাসি, দুঃখ, প্রেম, ভালবাসার জীবন্ত অভিনয় করে গেলেন, তাঁর শেষ জীবনের একান্ত নিজস্ব সৃষ্টিশীল জগৎটাও যথার্থ হয়ে রয়ে গেল শিল্পী মহলের জন্য। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শিল্পী হয়ে ওঠার নেপথ্যে সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Ray) পরোক্ষ অবদান কখনই অস্বীকার করা যাবেনা। তাঁর লেখা চিত্রনাট্যের সেই লাল খেরো খাতা সৌমিত্রবাবু নিশ্চয়ই মন দিয়ে দেখেছিলেন। খাতার মার্জিনে সত্যজিতের আঁকা ছোট্ট ছোট্টো ফ্রেমগুলো তাঁর নজরে পড়েছিল। বলা যায় না কখন কোথা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে পড়ে শিল্পী মন। আসলে সত্যজিৎ পরবর্তী সময়ের একমাত্র বাঙালি আইকন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। যাঁর মধ্যে একই সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ, সত্যজিৎ এবং বাংলার রেনেসাঁর এক প্রতিরূপ দেখতে পাই, হয়তো চাইও!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement