সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জীবদ্দশাতে সবাইকে হাসিয়েছেন। কিন্তু শেষযাত্রাতে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন কৌতুকশিল্পী রাজু শ্রীবাস্তব (Raju Srivastav)। বুধবার দিল্লিতে শেষকৃত্য সম্পন্ন হল জনপ্রিয় কমেডিয়ানের। রাজু শ্রীবাস্তবের ভাই করলেন মুখাগ্নি। শেষযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন তাঁর আত্মীয়পরিজন ও অসংখ্য অনুরাগীরা। রাজুকে শেষ বিদায় জানাতে হাজির ছিলেন উত্তরপ্রদেশের পর্যটনমন্ত্রী, রাজুর বন্ধু ও কমেডিয়ান সুনীল পাল, মধুর ভান্ডারকরের মতো ব্যক্তিত্বরা।
২ দিন। অর্থাৎ প্রায় দেড় মাস। এই দীর্ঘ সময় তিনি ছিলেন জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে এক নিষ্ঠুর দড়ি টানাটানির মধ্যে। অবশেষে হার মানতে হল তাঁকে। যাঁকে দেখলেই সকলে নড়েচড়ে বসতেন তাজা হাসির অক্সিজেনে ফুসফুস ভরিয়ে নেবেন বলে, আজ তাঁর ছবি দেখে মনখারাপ। মাত্র ৫৮ বছর বয়সেই মঞ্চে নেমে এল পর্দা। চলে গেলেন রাজু শ্রীবাস্তব (Raju Srivastav)।
[আরও পড়ুন: ‘উজ্জ্বল হাসির দিনগুলো চলে গেল’, রাজু শ্রীবাস্তবের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ মোদি-শাহদের ]
নিদা ফজলির বিখ্যাত পঙক্তিই হয়তো ছিল রাজুর জীবনের মন্ত্র, ‘ঘর সে মসজিদ হ্যায় দূর, চলো ইয়ু করলে/ কিসি রোতে হুয়ে বাচ্চে কো হাসায়া যায়ে।’ বুড়ো থেকে বাচ্চা, সকলকে নির্মল হাসিতে ভরিয়ে দিতে জুড়ি ছিল না রাজুর। স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান তিনি। কথার সঙ্গে কথা জুড়ে তৈরি করতেন অনর্গল হাসির ফুলঝুরি। মনে হত, এর চেয়ে সহজ কাজ বুঝি আর হয় না। অথচ কে না জানে কারও মুখে হাসি ফোটানোই এই নিষ্ঠুর সভ্যতায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
এরপর ১৯৮২ সালে বোম্বে চলে আসা। শুরু হয় স্ট্রাগল। দিন গুজরানের জন্য অটো চালাতে শুরু করেন। পরে আটের দশকের একেবারে শেষে এসে ‘তেজাব’ ছবিতে ছোট্ট একটা ভূমিকায় বলিউডে হাতেখড়ি। একে একে ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’, ‘বাজিগরে’র মতো সুপারহিট ছবিতেও দেখা গেল তাঁকে। যদিও বড় ব্রেক তখনও তাঁর অধরা। সেই দীর্ঘ স্ট্রাগলেও নিজের স্বপ্ন, নিজের জেদকে ছাড়তে রাজি ছিলেন না রাজু।
অবশেষে ২০০৫ সালে ‘দ্য গ্রেট লাফটার শো’ বদলে দিল জীবন। যদিও প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। তবু এই শো থেকেই রাতারাতি কমেডি কিং হয়ে উঠলেন রাজু শ্রীবাস্তব। আমজনতার ড্রয়িংরুমের এক সদস্য হয়ে উঠল গজোদর ভাইয়া!
রাজু যেন ছিলেন হ্যামলিনের সেই বাঁশিওয়ালা, যিনি একসঙ্গে বহু মানুষকে সম্মোহিত করতে পারতেন। এবং কী আশ্চর্য ‘ননভেজ’ জোকসের অশ্লীলতা ছা়ড়াই! কিন্তু একদিন যেমন বাঁশিওয়ালা বিদায় নিয়েছিল, রাজুও অতর্কিতে অন্তর্হিত হলেন। ষাট না পেরোতেই। রয়ে গেল তাঁর স্মৃতি। তাঁর বলে যাওয়া অসংখ্য জোক। সেগুলিই না হয় ঘিরে থাকুক আমাদের। এই কঠিন সময়ে নিরলস আনন্দের সেই সব খনিকে কে আর হাতছাড়া করবে! রাজু থেকে যাবেন এভাবেই। সাময়িক বিষণ্ণতা ও বিয়োগব্যথা পেরিয়ে চিরকালীন ফুরফুরে আনন্দের শনশন বাতাসের মধ্যে।