shono
Advertisement

Kakababur Protyaborton Review: মাসাইমারার জঙ্গলে প্রসেনজিতের অ্যাডভেঞ্চার, কতটা জমল সৃজিতের ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’?

ছবিতে ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করেছেন পরিচালক সৃজিতও।
Posted: 10:59 AM Feb 05, 2022Updated: 10:42 PM Feb 05, 2022

নির্মল ধর: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কিশোর মনের অ্যাডভেঞ্চার এই কাকাবাবু সিরিজ। সুপাঠ্য তাঁর কলমের এবং রসবোধের গুণে। বাড়তি আকর্ষণ কাকাবাবু ও ভাইপো সন্তুর যৌথ প্রয়াসে রহস্য এবং অ্যাডভেঞ্চারের রসায়ন। কাকাবাবু সিরিজের পাঠ্যসুখ যেভাবে পাঠককে আকর্ষণ করে, সেটা ভিজুয়ালি পর্দায় দেখার জন্য প্রয়োজন বাড়তি দর্শনধারী হয়ে ওঠার। সৃজিত মুখোপাধ্যায় (Srijit Mukherji) এই সিরিজের আগের দু’টি ছবিতে সেই দৃশ্যসুখ দর্শকের চোখের সামনে উপস্থিত করেছিলেন গল্পের গতির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।

Advertisement

এই নতুন গল্পে রয়েছে আফ্রিকার বিখ্যাত মাসাইমারা জঙ্গলের বুনো সৌন্দর্য, যেখানে হরিণ, জেব্রা, হাতি, বাঘ, সিংহ, এক শিংয়ের গন্ডার, কুমির, বিষাক্ত সাপ (যেটিকে সাহসী কাকাবাবুও ভয় করেন), নেকড়ে, হিংস্র বন্য মহিষেরও কত কীই না! দর্শকের মন এবং চোখ ওইসব দেখেই মজে যায়! শমীক হালদারের ড্রোন ক্যামেরার সাহায্য নিয়ে বিশাল জঙ্গলের ভয়ংকর চেহারাটাকে ‘দর্শনীয়’ করেই হাজির করেছে। পরিচালক সৃজিতের কাজ অনেকটাই সহজ করে দিয়েছেন শমীক। এটা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন সৃজিত নিজেও। বাকি রইল কাকাবাবুর মসাইমারা জঙ্গল ভ্রমণের পেছনে রহস্যের গল্পটুকু। সেটা অধিকাংশ দর্শক পাঠক জানেন।

জঙ্গলের মাঝখানে হোটেলের মালিকানা নিয়ে ঝামেলা, দুই বিদেশি পর্যটকের উধাও হওয়ার কাহিনি, এবং কাকাবাবুর সামনে রাইনো, পেছনে হাতির আক্রমণ থেকে বেরিয়ে আসা কিংবা চিতার থাবা থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া বা বিষাক্ত সাপের কামড় খেয়েও দু’জনের প্রাণ ফিরে পাওয়ার ঘটনাগুলো সাজানো এবং পরিবেশনায় সৃজিত যথেষ্ট সিনেম্যাটিক হয়েও নাটকীয়তার অংশটিও সুন্দর বজায় রেখেছেন। ফলে, নাটকীয় ঘটনায় সত্যিই তেমন নাটক না থাকলেও সৃজিতের সৃজন কৌশলে সাসপেন্স তৈরি করে। এটাই ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ (Kakababur Protyaborton) ছবির ইউএসপি।

এই কাজে ক্যামেরাম্যান শমীকের পাশে সুসংগত করে গিয়েছেন সুরকার ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। “সাহসী গাছ নড়ে …” এবং “শত্রুরা থাকুক পেছনে, সামনে আছে জয়…” গান দু’টির ব্যবহার বেশ নাটকীয়। ফলে অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় দর্শক অন্তত একবার হলমুখী হবেনই। এটাই কিশোর অ্যাডভেঞ্চার গল্প নিয়ে ছবি বানানোর সাফল্য।

এই ছবির প্রোডাকশন ভ্যালু আগের দু’টি ছবির চাইতে ঝুঁকি নেবার দিক থেকে অনেকটাই বেশি, সেটার জন্যই সাফল্য স্বাভাবিক। যদিও ছবি বানানোর ঝক্কি ও ঝামেলা সামলাতে গিয়ে বেশ কিছু জায়গায় সমঝোতা করতেই হয়েছে পুরো ইউনিটকে।

[আরও পড়ুন:স্নেহ-ভালবাসার মিশেলে তৈরি ‘বাবা, বেবি ও…’, মন জয় করতে পারল যিশু-শোলাঙ্কি জুটি?]

সন্তু ও কাকাবাবুর সঙ্গে এবার অমলের বেশে অনির্বাণ চক্রবর্তী সত্যিই ছবির বাড়তি আকর্ষণ। অনির্বাণের চেহারার সঙ্গে সন্তোষ দত্তর মিল থাকায় জটায়ু, ফেলুদা, তোপসেকে নিয়ে চিত্রনাট্যের মাঝে মাঝে যে মজা করা হয়েছে, সেটাও দর্শক উপভোগ করবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অমলের চরিত্রের পরিণতি দর্শককে হতাশ করতে পারে। অবশ্য, বন্য মহিষদের পালে পালে দুরন্ত বেগে তানজানিয়ার সীমান্ত ডিঙিয়ে চলে যাওয়ার দৃশ্যের চিত্রগ্রহণ ছবির সেরা দৃশ্য। মাসাইমারার জঙ্গলে বন্যপ্রাণীদের নিয়ে চোরাই ব্যবসা, বিনা কারণে মাসাই উপজাতির ওপর দোষারোপ করার প্রতিবাদ দেখিয়ে এই ছবি আজকের এক জ্বলন্ত সমস্যার দিকেই আঙ্গুল তুলেছে।

অভিনয়ে কাকাবাবুর চরিত্রে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের (Prosenjit Chatterjee) আগের দু’টি ছবির মতোই স্বাভাবিক, স্বচ্ছন্দ। সন্তুর ভূমিকায় আরিয়ানের করণীয় কিছুই নেই, শুধু সঙ্গ দেওয়া ছাড়া। অনির্বাণ চক্রবর্তী তাঁর ‘সন্তোষ দত্ত ইমেজ’ ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছেন বলেই দর্শকদের নজর কাড়বেন। ছবির আরেকটি বাড়তি আকর্ষণ হল পরিচালক সৃজিতের মি: সহায় নামের একটি চরিত্রে ক্ষণিকের আবির্ভাব। প্রথমটায় সন্দেহজনক মনে হলেও, শেষ পর্যন্ত এই সহায়ই প্রকৃত সহায় হয়ে কাকাবাবুদের পাশে এসে দাঁড়ান। ছোট্ট চরিত্র, কিন্তু সৃজিতের উজ্জ্বল এবং চটকদার উপস্থিতি বেশ ভালই লাগে।

আসলে এই ছবির আসল নায়ক মাসাইমারার চোখ জুড়ানো এবং মন ভোলানো লোকেশন। গল্পপ্রিয় দর্শক জানেন, দেখতে যাবেন আফ্রিকার বুনো সৌন্দর্য। সেখানে কোনও ফাঁক বা ফাঁকি রাখেননি সৃজিত। তবুও প্রশ্ন একটাই – যে সৃজিত সিনেমায় যাত্রা শুরু করেছিলেন ‘অটোগ্রাফ’ দিয়ে, পরে ‘নির্বাক’, ‘জাতিস্মর’ বা ‘চতুষ্কোণ’ করেছেন, তিনি এবার ব্যবসায়িক চিন্তার বাইরে একটু মন ও চোখকে সরাবেন না কেন?

[আরও পড়ুন: ফুটবলের ময়দানে স্বাধীনতার লড়াই, কেমন হল ঋত্বিক-দিতিপ্রিয়া-অর্জুনের ‘মুক্তি’? ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement