ঋতুপর্ণা সেন, তবে টলিউডে তিনি পরিচিত শুধু ঋ নামেই। আইটেম নম্বরে আটকে থাকা নয়, ভাল কাজের খিদে তাঁকে নিয়ে গিয়েছে মুম্বইতেও। দুটি বিতর্কিত ছবিতে কাজ করা অভিনেত্রীর সাফ কথা, লোকে তাঁকে ভয় পায়। এমনটাই অকপট তিনি।আড্ডায় কোয়েল মুখোপাধ্যায়।
কিছুদিন আগেই কি মুম্বই-গোয়া বেড়াতে গিয়েছিলেন?
ঋতুপর্ণা: বেড়াতে যাইনি। কাজে গিয়েছিলাম। একটা ওয়েব সিরিজের শুটিংয়ের জন্য গোয়ায় গিয়েছিলাম। তার পর ক’দিন ছুটি কাটালাম। মুম্বই ইজ অ্যা ভেরি ওমেন-ফ্রেন্ডলি সিটি।
হুমমম! তা কলকাতা কি আর ভাল লাগছে না?
ঋতুপর্ণা: না। না। কলকাতার জন্যই তো সব কিছু! কলকাতা আমার কাছে খুব স্পেশাল আর তা চিরকালই থাকবে। কিন্তু এই শহরে কাজের দিক থেকে সাংঘাতিক এক্সাইটিং কিছু আমি আর দেখতে পারছি না।
কোন ওয়েব সিরিজে অভিনয়ের জন্য গিয়েছিলেন মুম্বই?
ঋতুপর্ণা: একটা হিন্দি ওয়েব সিরিজ। একটা নতুন অ্যাপ আসতে চলেছে। তার জন্য। কিন্তু এ নিয়ে বিশদে এখন কিছুই জানানো যাবে না। শুধু এটুকু বলতে পারি, গল্পটা এমন একজন মহিলাকে নিয়ে, যার স্বামী ‘মিসিং’। সে তাকে খুঁজতে গোয়া যায়। তার জার্নিটাকে গল্পে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
কলকাতায় ওয়ার্ক ফ্রন্টে কী করছেন?
ঋতুপর্ণা: এই মুহূর্তে কোনও ছবি করছি না। বরং প্রচুর ওয়েব সিরিজ করছি। আগে যখন কাজ করতাম, তখন এত পিআর (প্রচার, জনসংযোগ) প্রেশার ছিল না। ওয়ার্ডস অফ মাউথ-এ কাজ মিলত। কিন্তু সব জায়গাতেই এখন একটা দলবাজির ব্যাপার চলে এসেছে। কলকাতাতেও এসেছে। সবাই নিজের লোকজনদের নিয়ে কাজ করছে। নিজের বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে কাজ করছে। সারভাইভালের ক্ষেত্রে এটা খুব কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রচুর অভিনেতা-অভিনেত্রী এমনকী পরিচালকদের পক্ষেও! আর তাছাড়া কোয়ালিটি অফ ওয়ার্কও ডিটোরিয়েট করেছে। সেটা বাজেটই হোক বা কনটেন্ট। কাজের ভ্যারিয়েশনও তো নেই। হয় টিভি করো, না হয় সিনেমা! নতুন কে বা কারা আসছেন, বলুন তো? কারণ, আসতে দেওয়াই তো হচ্ছে না। ওই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে চার-পাঁচজন লোকই শুধু কাজ করে চলেছে।
এই পরিস্থিতিতে নিজে থেকে কোনও উদ্যোগ নেওয়ার কথা কখনও মাথায় এসেছে? পরিচালক হওয়ার কথা ভেবেছেন?
ঋতুপর্ণা: নিশ্চয়ই এসেছে। আর আমি যদি কোনওদিন পরিচালনায় আসি, আই উড বি অ্যা সুপার ডিরেক্টর। কিন্তু চিত্রনাট্য লিখতে যে সময়টা লাগবে, সেটা এখন আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া ছবি পরিচালনা করা কারও একার পক্ষে অসম্ভব। ইটস অ্যা টিমওয়ার্ক। সেই বিশ্বস্ত টিম যতক্ষণ না তৈরি হচ্ছে, পরিচালনা সম্ভব নয়।
আচ্ছা, অভিনেত্রী না হলে ঋ কী হতেন?
ঋতুপর্ণা: সুপার কুক। অথবা এয়ার হোস্টেস অথবা কস্টিউম ডিজাইনার। আরও আরও অনেক কিছু। এখনও সেই ইচ্ছা আছে।
আপনার ফেসবুক স্টেটাসও তাই বলছে। An Actor, A Chef, A Stylist & A Tripper. প্রথমটি তো আমরা জানি। রাঁধুনি ঋ-এর সঙ্গে একটু পরিচয় করিয়ে দিন।
ঋতুপর্ণা: বাঙালি মানেই তো খাদ্যরসিক! ছোটবেলা থেকেই মাকে দেখেছি রান্না করতে। রান্না করতে আমার দারুণ লাগে। আবার বন্ধু-বান্ধবদের ডেকে খাওয়াতেও ভাল লাগে। আমার চোখে, রান্না করাটা বেশ থেরাপটিক।
নিজের রান্না করা কোন ডিশটার জন্য সবচেয়ে বেশি তারিফ পেয়েছেন?
ঋতুপর্ণা: আমার অনেক বিদেশি বন্ধু আছে। আমার ফরাসি বন্ধুরা আমার রান্নার খুব বড় ফ্যান। (হাসি)। আমি যা রান্না করে দিই, ওরা সব খায়। এমনিতে আমি মাছটা দারুণ রান্না করি। দই মাছই হোক বা গ্রিলড ফিশ, ওরা সব কিছুই খুব তৃপ্তি করে খায়। তবে দই মাছটা সকলের প্রিয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় একবার কোনও এক কমন বন্ধুর মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হয়েছিল আপনাকে। নাম না—জানা কোনও অনুরাগী আপনার উদ্দেশে লিখেছিলেন, “একবার ঋ’দির সঙ্গে আলাপ করিয়ে দাও। আমি তোমার গোলাম হয়ে থাকব এক বছর।” এই ধরনের বার্তা পেলে ঋ-র প্রতিক্রিয়া কী হয়?
ঋতুপর্ণা: আমার তখন রাগ হয়! ফ্যানরা আমাকে এত ভালবাসেন, আমি সত্যিই ওঁদের জন্য আরও ভাল ভাল কাজ করতে চাই। কিন্তু কলকাতায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করে, নতুন কী করছেন? আমি তো নতুন কিছু ‘ইনভেন্ট’ করার জন্য বসে আছি। এটা খুব দুঃখজনক!
কিন্তু এইরকম পরিস্থিতির কারণ কী? আপনার শেয়ার করা একটা পোস্টে দেখলাম, আপনি দাবি করেছেন ‘‘আমার কোনও সুগার ড্যাডি নেই। এই সমাজ কি আমাকে গ্রহণ করবে?” বার্তাটা কার প্রতি?
ঋতুপর্ণা: অফ কোর্স। কেউ যদি আজ আমাকে কিউ-কে (পরিচালক কৌশিক মুখোপাধ্যায়, প্রাক্তন প্রেমিক) নিয়ে খোঁটা দেয়, তাহলে আমি বলব যে হ্যাঁ, যখন আমরা কোলাবরেট করেছিলাম, দারুণ দারুণ কিছু কাজ দর্শকদের উপহার দিতে পেরেছি। আমার মনে হয়, আমি ইন্টারেস্ট দেখালেও বিশ্বাস করে আমাকে কেউ কাজটা দিতে চাইছেন না। তাঁরা তাঁদের কমফর্ট জোনেই থাকতে চাইছেন। কিন্তু অভিনেত্রী হিসাবে আমি চেষ্টা করেই যাব। কলকাতায় না হলে অন্য কোথাও। কিন্তু আই উইল কিপ অন ট্রাইং। আজ যদি কেউ আমাকে ‘গান্ডু’ বা ‘কসমিক সেক্স’-এর জন্য ব্র্যাকেট করে দাও, তাহলে আমার তো কিছু করার নেই! আমি সবরকম কাজই করতে চাই।
‘গান্ডু’ বা ‘কসমিক সেক্স’—এর মতো ছবি করে টাইপকাস্ট হয়ে গিয়েছেন, বলতে চাইছেন?
ঋতুপর্ণা: লোকজনের কাজই হল টাইপকাস্ট করা। কে কী কাজ পাচ্ছে, কোনটা ছাড়ছে–এই সব পলিটিক্স করে কার কী লাভ হয়, জানি না। সেটা ভাবার সময়ও আমার নেই। এটুকু জানি, আমি যে যে কাজ করেছি, তা করার হিম্মত কারও হবে না। হ্যাঁ, এটাও ঠিক যে তার জন্য পরবর্তীকালে আমার হাত থেকে অনেক কাজ চলে গিয়েছে।
এটা তো ঘটনা যে ঋ সেন মানেই একটা বোল্ড ইমেজ, হট বড, উমফ ফ্যাক্টর। সেই ট্যাগটা এনজয় করেন? না খারাপ লাগে?
ঋতুপর্ণা: না, আমার খারাপও লাগে না, ভালও লাগে না। আমার একটা পার্সোনালিটি আছে, লোকে তাকে হট ভাবতে পারে, সেক্সি ভাবতে পারে। তাতে আমার কোনও অসুবিধা নেই। তাঁরা আমাকে ভালবাসেন। কিন্তু জাজ করলে খারাপ লাগে। এখন, লোকেরা তো জাজ করবেনই। তবে ওইভাবে আমাকে ভাঙা যাবে না। আই অ্যাম এ ভেরি টাফ কুকি টু ক্র্যাক। ‘আগে যা করেছি, সব ভুল করেছি’ ভেবে কোনওদিন ডিপ্রেশনে চলে যাব না।
কিন্তু অভিনয়ের জন্য আপনি তো অান্তর্জাতিক স্তরে পুরস্কৃতও হয়েছেন? সেটা ভেবে কি কখনও মনে হয়, কলকাতা আপনাকে আপনার প্রাপ্যটুকু দিল না?
ঋতুপর্ণা: কলকাতার লোকে কখনও কলকাতার লোককে দাম দেয় না। আজ যদি আমি মুম্বইয়ে একটা ছবিতে কাজ করে আসি কিংবা একটা ভোজপুরি ছবিতে নেচে আসি, তাহলে হাউ হাউ করে শোরগোল বাধাবে! শুধু আমার বেলায় নয়। সবার বেলায়। তাই তো, সকলে চলে যাচ্ছেন। লালদা (সুমন মুখোপাধ্যায়) শিফট করে গিয়েছেন। সংগীতে শমিত, নীল অধিকারীরা চলে গিয়েছেন। এটা কিন্তু মুম্বইয়ে দেখিনি। আমি কলকাতায় সকলের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কিন্তু তঁাদেরও তো আমাকে নিয়ে কাজ করার ইচ্ছেটা থাকতে হবে!
আপনাকে অন্য ধারার বাংলা ছবির অভিনেত্রী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। কেন? আপনি যেমন ‘গান্ডু’ বা ‘কসমিক সেক্স’ করেছেন, তেমনই ‘মেঘনাদবধরহস্য’ কিংবা ‘কখগঘ’ও তো করেছেন? তাহলে কেন বাংলা বাণিজ্যক ছবিতে আপনাকে বেশি দেখা যায় না?
ঋতুপর্ণা: কারণ লোকে হ্যান্ডল করতে পারে না আমাকে? ভয় পায় আমাকে! পরিষ্কার কথা! ওই যে বললাম, লোকেরা জাজ করে। আমার সম্পর্কে একটা পারসেপশন সকলের মনে আছে যে আচ্ছা ছবিতে ঋ-কে নেব? তাহলে একটা আইটেম নম্বরে নিতে হবে। কিন্তু এটাও সত্যি যে আমার লুকটাও তো সেই ছাপোষা টাইপের নয়!
ঋ-এর নিজের চোখে তাঁর বেস্ট পারফরম্যান্স কোনটা?
ঋতুপর্ণা: সব কাজই আমি পরিশ্রম করে করি। সততার সঙ্গে করি। তাই, যা করি, যেটুকু করি, সেটাই আমার বেস্ট পারফরম্যান্স।
কারও কাজ অ্যাডমায়ার করেন?
ঋতুপর্ণা: আজকাল শর্ট ফিল্মগুলো দারুণ হচ্ছে! অন্যরকম সব কনটেন্ট নিয়ে কাজ হচ্ছে।
ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও প্রিয় বন্ধু আছে?
ঋতুপর্ণা: না। দ্য লোনসাম ইন্ডাস্ট্রি টু হ্যাভ এ ফ্রেন্ড ইস ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, যেখানে বন্ধু তৈরি করা কিংবা বন্ধু বলে কাউকে বিশ্বাস করাটা কঠিন। তবে অন্য ইন্ডাস্ট্রি থেকে আমার প্রচুর ভাল বন্ধু আছে।
আর রিলেশনশিপ স্টেটাস কী বলছে? আপনি কি এখন সিঙ্গল?
ঋতুপর্ণা: হ্যাপিলি সিঙ্গল! (হাসি)
‘বিগ বস’—এর মতো রিয়েলিটি শোয়ের অফার পেলে আবার হ্যাঁ বলবেন?
ঋতুপর্ণা: অবশ্যই। ‘বিগ বস’ থেকে অনেক কিছু শিখেছি।
ঋ, আপনি অবসর সময় কীভাবে কাটান?
ঋতুপর্ণা: ঘুমোই, রান্না করি, বন্ধু-বান্ধদের সঙ্গে আড্ডা মারি আর প্রচুর হাঁটি।
ছবি সৌজন্য : টুইটার
The post ‘আমি যা যা কাজ করেছি, তা করার হিম্মত কারও হবে না’ appeared first on Sangbad Pratidin.