স্টাফ রিপোর্টার: স্কিলের শৌর্যে ইতালিকে পর্যদুস্ত করে ওঠার পর একটা কথা বলেছেন স্পেন উইঙ্গার নিকো উইলিয়ামস (Nico Williams)। ম্যাচ সেরার পুরস্কার নেওয়ার পর। নিকো বলেছেন যে, ইতালির বিরুদ্ধে পারফরম্যান্স তাঁর মায়ের জন্য সেরা উপহার। ‘‘এত দিন পর মাকে মনের মতো একটা গিফট দিতে পারলাম,’’ বলে দিয়েছেন নিকো।
মা! পৃথিবীর যা সবচেয়ে সুন্দর শব্দ, প্রাণীজীবনের যা সবচেয়ে বড় মায়া। মা মারিয়া না থাকলে একুশ বছরের নিকো শেষ পর্যন্ত ফুটবলার হতে পারতেন কি না কে জানে! মারিয়া উইলিয়ামসও কি একত্রিশ বছর আগে ভাবতে পেরেছিলেন, জীবন-সংগ্রাম নামক এক বন্ধুর সঙ্গে বেড়ে ওঠা তাঁর সন্তান একদিন দিনের আলোর মতো মন ভালো করা ফুটবলার হবেন?
স্পেনের (Spain Football Team) জার্সিতে ইউরো খেললে কী হবে, জন্মসূত্রে নিকো স্পেনের নন। ঘানার। আজ থেকে একত্রিশ বছর আগে জীবনধারা বদলানোর বাসনা নিয়ে ঘানা ছেড়ে স্পেনের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন নিকোর মা মারিয়া উইলিয়ামস। ভাবা যায়, গোটা সাহারা মরুভূমি পেরোতে হয়েছিল মারিয়াকে! মরক্কো হয়ে স্পেন ঢুকতে হয়েছিল। প্রথমে মারিয়া ভেবেছিলেন, ইংল্যান্ড চলে যাবেন। কিন্তু স্পেনে যাপনের খরচ কম বলে স্পেনে যাওয়া ঠিক করেন শেষ পর্যন্ত। স্পেনের বিলবাওয়ে এরপর থাকতে শুরু করে উইলিয়ামস পরিবার। নিকোরা দুই ভাই। ইনাকি আর তিনি, নিকো। দু’জনেই এখন খেলেন স্প্যানিশ ক্লাব অ্যাটলেটিক বিলবাওয়ের হয়ে।
[আরও পড়ুন: শীর্ষে থেকেও স্বস্তিতে নেই দক্ষিণ আফ্রিকা, কোন অঙ্কে সেমিতে যেতে পারে গ্রুপের বাকি তিন দল]
গত কাল ইতালির বিরুদ্ধে ম্যাচের প্রথম দশ মিনিটে ইতালি ডিফেন্ডার ডি’লরেঞ্জোকে বেশ কয়েক বার ড্রিবল করে বেরিয়ে যান নিকো। পেড্রির জন্য একটা হেডারও সেট আপ করে দেন। নিকোকে আটকাতে গিয়ে ডি’লরেঞ্জোর অবস্থা এতটাই করুণ হয় যে, বিরতির পর ক্যাম্বিয়াসোকে নামিয়ে দেন ইতালি কোচ লুসিয়ানো স্পালেত্তি। ডি’লরেঞ্জোকে সাহায্য করতে। কিন্তু সেই দু’জনকে ধরাশায়ী করতে বেরোতে নিকোর লাগে মাত্র ন’মিনিট! ইতালির বিরুদ্ধে তিনি এতটাই ভালো খেলেন যে, ম্যাচ শেষে স্পেন কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে বলে দেন, ‘‘আমরা দেখিয়ে দিলাম, আমাদের প্লেয়াররাই বিশ্বসেরা। কী অসামান্য এক ফুটবল প্রজন্ম এসেছে স্পেনে!’’
[আরও পড়ুন: আজ তুরস্ক চ্যালেঞ্জ, নকআউট যেতে পর্তুগালের ভরসা সেই রোনাল্ডোই]
যা ভুল নয়। এক দিক থেকে ষোলো বছরের লামিন ইয়ামাল। আর একদিক থেকে নিকো উইলিয়ামস। দুই উইং ধরে যে দুই স্পেন প্লেয়ার এখন বিপক্ষকে ধাওয়া করছেন, তা সামলাতে গলদঘর্ম হচ্ছে বিপক্ষ টিমরা। লামিনের সঙ্গে আবার গভীর বন্ধুত্বও রয়েছেন নিকোর। মজা করে তিনি লামিনেকে বলেও থাকেন, ‘‘জাতীয় দলে প্রথম দিন থেকে আমাদের বন্ধুত্ব শুরু। আমি মাঝে মাঝে ওকে মজা করে বলি, আমার থেকে খেলাটা শেখ! তবে আমি নিশ্চিত, আমার মতো দ্রুতই ম্যাচ সেরার পুরস্কার পাবে লামিন।’’
ভালো খেলার পুরস্কারও পাচ্ছেন নিকো। বিশ্বের অন্যতম বড় বড় ক্লাবগুলো তৈরি হচ্ছে নিকোকে কিনতে। যেমন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড। যেমন বার্সেলোনা। যেমন চেলসি। যেমন আর্সেনাল। যা দাঁড়াচ্ছে, তাতে মারিয়া উইলিয়ামসের জন্য এরপর কৃতি সন্তানের থেকে পরের পর ‘গিফট’ আসতে চলেছে। এ তো সবে শুরু!