shono
Advertisement
Bengali play Dharmabatar

এজলাসের গল্প বলে সায়ক নাট্যগোষ্ঠীর নতুন নাটক 'ধর্মাবতার'

বিচারকের ভূমিকায় মেঘনাদ ভট্টাচার্য।
Published By: Suparna MajumderPosted: 04:14 PM Oct 14, 2024Updated: 08:50 PM Oct 14, 2024

চারুবাক: এজলাসে বিচারক। মাথার উপরে ন্যায়ের তুলাদণ্ড। পক্ষপাতহীন বিচারের প্রতীক! কিন্তু প্রকৃত বিচার কি হয়? এই প্রশ্ন বহুদিনের। 'সায়ক' নাট্যগোষ্ঠীর নতুন নাটক 'ধর্মাবতার'-এর প্রথম দৃশ্যেই দেখানো হল এক সৎ প্রবীণ বিচারক জ্যোতিষবাবুকে। স্বপন নামে অপরাধীর শাস্তি ঘোষণা করেন তিনি। গারদে বসে থাকা সেই স্বপন বিচারককেই শাসানির স্বরে জানিয়ে দিল 'আমি উচ্চ আদালতে নিরপরাধ সাব্যস্ত হয়ে জেল থেকে বেরিয়ে তোর কী অবস্থা করি দেখিস!' এমন ঘটনা তো বাস্তবেও ঘটে।

Advertisement

অপরাধীকে শাস্তি দেবার শপথ নিয়ে বিচারালয়ে উকিলের উর্দি পরা যে মানুষগুলো 'ধর্মাবতার' শব্দ উচ্চারণ করে তর্ক প্রতিতর্ক করেন, তাঁরা অনেকেই অপরাধীর পক্ষ নিয়েই তাঁদের 'নিরপরাধ' প্রমাণ করতে চান। অথচ তাঁরা অন্তর থেকেই জানেন অভিযুক্ত অপরাধী। আইনের মারপ্যাঁচের কানাগলি, কথার ফুলঝুরি ছুটিয়ে তাঁরা অনেক সময়েই জিতে যান এবং সেই খেলায় অর্থ, রাজনীতি ও প্রভাবশালীদের অদৃশ্য কারসাজি থাকে। উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের লেখা নতুন নাটক 'ধর্মাবতার'-এ বিচার ব্যবস্থার এমন দিকই তুলে ধরা হয়েছে।

নাটকের প্রধান চরিত্র প্রবীণ জ্যোতিষবাবু (মেঘনাদ ভট্টাচার্য) দীর্ঘকাল সততার সঙ্গে রায় দিয়ে এসেছেন, কখনও আপস করেননি। কিন্তু তাঁর বড় ছেলে (ঋত্বিক) 'প্রভাবশালী চোরদের' নামী উকিল হয়েছে অর্থের বিনিময়ে বিচারের জাল থেকে তাদের বের করে আনার সুবাদে। ফলে সে গৃহছাড়া। বাবা ও ছেলের সম্পর্ক প্রায় মুখ দেখাদেখি বন্ধ। ছেলের স্ত্রী লীনাও (রূপসা) উকিল, কিন্তু সে শ্বশুরমশাই এর মত সৎ। জ্যোতিষবাবুর অন্য দুই ছেলে -- একজন (গৈরিক) ক্রিকেট খেলতে গিয়ে পঙ্গু, এখন ছোট দোকানদারি করে। ছোটজন(দৌবারিক) অসুস্থ, শখ ছবি তোলা। আছেন অসুস্থ স্ত্রী মনোরমা (রুনা), যিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এদিকে সেই অপরাধী স্বপন (মানস) জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গৈরিকের দোকানের সামনে বসে থাকে।

জ্যোতিষ গাড়িতে ধাক্কা খায় মানসিক ভারসাম্যহীন স্বপন। মৃত্যু হয় তার। এবার খোদ বিচারক কাঠগড়ায়। জ্যোতিষ কিছুতেই উকিল বড় ছেলের সাহায্য নেবেন না। এগিয়ে আসে পুত্রবধূ লীনা। কিন্তু অপ্রকৃতিস্থ জ্যোতিষ আসামীর আসনে দাঁড়িয়ে স্বীকার করেন 'স্বপন জঘন্যতম অপরাধী, ওর বাঁচার অধিকার নেই। আমি তাকে মারলেও মারতে পারি!' তাঁর এমন স্বীকারোক্তির পেছনে কারণটা কী? তা জানে একমাত্র বড় ছেলে। বাবাকে নিশ্চিত শাস্তির ফাঁস থেকে বাঁচাতে ঋত্বিক এগিয়ে আসে। জয় হয় সত্যের! এবং বড় ছেলে উপলব্ধি করে বিচারালয়ে সততার মূল্য সবার ওপরে।

উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বিচার ব্যবস্থার এই আলো-আঁধারির দিকটায় যতটা নজর দিয়েছেন, তার চাইতে বেশি জোর পড়েছে বিচারক পরিবারের পারস্পরিক সম্পর্কের জটিলতায়, সমীকরণে। ফলে আজকের বিচারালয়ে বিচারের নামে যে অবিচারের 'খেলা' চলে সেটা কিছুটা তরলায়িত হয়ে গেল কি? দুর্নীতির সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা ঋত্বিকের মানসিক পরিবর্তন কি এত সহজে হতে পারে? নাটকের বিভিন্ন সংলাপে, ঘটনার গতিতে আজকের যে ছবি দেখতে পেলাম, সেখানে এমন হৃদয় পরিবর্তন অনেকটাই যেন ইচ্ছাপূরণের মত। এমনটি হলে কেমন হয়? এই আর কি!

তবে হ্যাঁ, সায়ক দলের অতীত প্রযোজনার গুণমানে 'ধর্মাবতার' বাড়তি কোনও পালক হচ্ছে না। খুবই সাধারণ এবং পরিচ্ছন্ন এটুকু বলতেই হবে। উত্তম দে-র একমাত্রিক মঞ্চ সাধারণ হয়েও অসাধারণ। মঞ্চের মাঝখানে বিচারকের আসনটির সারাক্ষণ উপস্থিতি চোখে পড়ার মত। মেঘনাদ ভট্টাচার্যর নির্দেশনায় চিরকালই নিপাট সারল্য ও সহ্জপনাই নাট্যগুণ হয়ে ধরা দেয়। বাহ্যিক আড়ম্বরে তিনি বিশ্বাস করেন না। এখানেও সেই সারল্যের উপস্থিতি দর্শকের কাছে আন্তরিক আবেদন রাখে। আর যে কারণে 'ধর্মাবতার' দেখতে হয় - সেটা শুধু মেঘনাদ ভট্টাচার্যর একার অভিনয়ের জন্য নয়, প্রতিটি চরিত্রের শিল্পীরা সমান তালে সঙ্গত দিয়ে গিয়েছেন মেঘনাদকে। তিন সন্তানের ভূমিকায় ধূর্যটি দে (গৈরিক), প্রসেনজিৎ কুণ্ডু (ঋত্বিক), গৌতম সেন (দৌবারিক) এবং পুত্রবধূ লীনার চরিত্রে রূপসা ভট্টাচার্য চরিত্রের সঙ্গে মিলেমিশে সত্যিই চরিত্র হয়ে উঠেছেন। ভালো লাগে ময়নার ছোট্ট চরিত্রে ইন্দ্রজিতা, সরকারি উকিলরূপী সুব্রত ভাওয়াল এবং স্ত্রী মনোরমা চরিত্রে রুনা মুখোপাধ্যায়কে। অন্যান্য চরিত্রের শিল্পীরাও সহজোগিতার হাত বাড়িয়েছেন, নইলে এমন উপভোগ্য উপস্থাপনা হয় না।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • সায়ক দলের অতীত প্রযোজনার গুণমানে 'ধর্মাবতার' বাড়তি কোনও পালক হচ্ছে না। খুবই সাধারণ এবং পরিচ্ছন্ন এটুকু বলতেই হবে।
  • উত্তম দে-র একমাত্রিক মঞ্চ সাধারণ হয়েও অসাধারণ। মঞ্চের মাঝখানে বিচারকের আসনটির সারাক্ষণ উপস্থিতি চোখে পড়ার মত।
Advertisement