স্টাফ রিপোর্টার: জন্মান্তরে বিশ্বাস করতেন না। আত্মার অস্তিত্বও মানতেন না। প্রতুল মুখোপাধ্যায় বিশ্বাস করতেন একটাই জীবনে। শেষ সময়ে যে কারণে বলেছিলেন, 'ফিরে যদি না-ও আসি, আক্ষেপ নেই। আই লিভড মাই লাইফ ফুললি!' কিন্তু শ্রদ্ধায়-স্মরণে তাঁকে দ্বিতীয় জীবন দিল তাঁর প্রিয় শহর কলকাতা। তাঁর স্ত্রী সর্বাণী মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে শনিবার শিশির মঞ্চে এই স্মরণ-আসরের আয়োজন করেছিল দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ।

আত্মীয়-বন্ধুদের পরিসরে শ্রদ্ধা জানিয়ে যান দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও ইন্দ্রনীল সেন। শিশির মঞ্চের আবহে তখন প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের রিনরিনে গলায় বেজে চলেছে একের পর এক গান। শ্রদ্ধা জানাতে এসে গায়কের স্ত্রীকে সমবেদনা জানিয়ে যান ডাক্তার দীপ্তেন্দ্র সরকার, যিনি প্রতুলবাবুর অস্ত্রোপচার করেছিলেন। উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী খবর নিয়েছেন সব সময়। সব চেষ্টার পরও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। বিধাতাকে স্মরণ করে সর্বাণীদেবীর আক্ষেপ, ‘ওই যেখানে কিছু করার থাকে না, সেখানেই উপরে বসে কলকাঠি নাড়েন একজন।’ সব মনখারাপ পেরিয়ে যখন শ্রদ্ধানুষ্ঠান শুরু হল, তখন একের পর এক গল্পের ঝুলি উপুড় হতে থাকল প্রতুলের। যেন বোহেমিয়ান হলেন গায়ক-কবি।
ছবি : কৌশিক দত্ত
পরিবারের এক আত্মীয়ের কথায়, “কিছুতেই বাজারে যাওয়া ছাড়তেন না। শুধুমাত্র জনসংযোগ করবেন বলে। বাজারে ঘুরতে ঘুরতে অজ্ঞান হয়ে গেলে বাজারের লোকেই ঘরে দিয়ে যেত।” শেষ সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যা তাঁকে বলেছিলেন, ফিরতে হবে। আবার গান গাইতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, কষ্ট হয়েছিল সে কথা শুনে। কারণ হাসপাতালে যখন ভর্তি হন এক বন্ধুকে বলেছিলেন, ‘আবার ফিরে আসব, গান গাইব।’ ছিলেন দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের তরফে সাংসদ দোলা সেন, প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, সমীর পুততুণ্ড, সুমন ভট্টাচার্য, সান্টু গুপ্ত, ‘যত হামলা করো সব সামলে নেব'র লেখক নীতীশ রায়, জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়রা। স্মৃতিচারণেরই মঞ্চের আবহে বারবার ফিরে ফিরে এসেছে ‘আলু বেচো, ছোলা বেচো, বেচো বাখোরখনি, বেচ না বেচ না বন্ধু তোমার চোখের মণি’, ‘ছোকরা চাঁদ, জওয়ান চাঁদ’-এর মতো প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গান। শেষে তাঁকে নিয়ে অনন্যা চক্রবর্তীর তৈরি একটি তথ্যচিত্রও দেখানো হয়।