রোদ-বৃষ্টি যাই হোক, ঘাম অস্বস্তি চলছেই। ঘেমে জবজবে, সঙ্গে দুর্গন্ধ হলে সাবধান। নারায়ণ মেমোরিয়াল হাসপাতালের ডার্মাটোলজিস্ট ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ এ ব্যাপারে কী বলছেন জেনে নিন। কোয়েল মুখোপাধ্যায়
দরদর করে ঘামতে থাকেন। একটুতেই অবস্থা শোচনীয় হয়ে যায়। একে ঘামে জবজবে জামা-কাপড়, তার উপর আবার তীব্র কটু গন্ধ। লোকসমাজে হয়রানি, ব্যঙ্গ-টিটকিরিতে জীবন দুর্বিষহ। এমন সমস্যায় ভুগলে মোটেই অবহেলা করবেন না। আপনার ঘামের অসহনীয় দুর্গন্ধ কিন্তু বহু রোগ-জ্বালার সংকেত বহন করে আনতে পারে।
নেপথ্যে কোন রোগের হাতছানি রয়েছে জানেন কি?
অতিরিক্ত ঘাম থেকে তীব্র দুর্গন্ধ আদপে এক ধরনের অসুখ। যার নাম ব্রোম-হাইড্রোসিস। যা বিভিন্ন কারণে হয়।
ব্যাকটিরিয়াল ইনফেকশন: হতে পারে আপনার শরীরের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণ বা ফাংগাল ইনফেকশন হয়েছে। ‘Cornyebacterium’, ‘Staphylococcus Hominis’, ‘Cutivacterium Avidum’, ‘Acinebacter Schindleri’ কিংবা ‘Staphylococcus Epidermidis’ ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে। খুব ঘামলে এবং ঘাম থেকে কটু গন্ধ বেরলে সতর্ক হোন।
[আরও পড়ুন: পায়ের ব্যথায় কাবু? হাড়ের ক্ষয় নয়তো? পুষ্টিকর খাবার খান, পরামর্শ চিকিৎসকের]
শারীরিক অসুস্থতার কারণেও হয়
ঘামের অসহনীয় দুর্গন্ধ বেশ কিছু রোগের পূর্ব ইঙ্গিত হতে পারে। যেমন ওবেসিটি, ডায়াবিটিস, থাইরয়েড, লিভার এবং কিডনির অসুখ প্রভৃতি। আসলে মানব শরীরে উৎপন্ন যাবতীয় বর্জ্য পদার্থসমূহ শরীর থেকে বেরিয়ে যায় লিভার এবং কিডনির সাহায্যে। কোনওভাবে এইগুলি রোগগ্রস্ত হলে, সেই বর্জ্য সহজে বেরতে পারে না। তখন তা শরীরের ভিতরেই জমতে থাকে। ফলে দুর্গন্ধ হয়। ডায়াবিটিসে আক্রান্তদের দুর্গন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি কারণ তাঁদের সংক্রমণের তীব্রতা বেশি।
এছাড়াও রয়েছে বিশেষ কিছু ফ্যাক্টর। ‘স্পেশালাইজড’ কিছু ‘স্কিন কনডিশন’-এ এমন দুর্গন্ধ হয়। যেমন যাঁদের বাহুমূল অন্যদের তুলনায় অতিরিক্ত কালো, তাঁদের এই সমস্যা হতে পারে। আবার অনেকের পায়ের নিচের চামড়ায় ছোট ছোট ছিদ্র দেখা যায়। সেক্ষেত্রেও অতিরিক্ত ঘাম থেকে গন্ধ হতে পারে। আর বিরল কিছু রোগ, যার উৎপত্তি শৈশবে হয়, যেমন ‘Trimethylaminuria’-তেও এমনটা হয়।
সাদা জামা হলুদ
মাত্রাধিক ঘামের কারণে সাদা পোশাক হলুদ বা বাদামি কিংবা কালো হয়ে যাওয়া অনেকেরই হয়। এটাও ঘাম সংক্রান্তই ব্যাধি তবে বৈশিষ্টে একটু আলাদা। এর নাম ক্রোম-হাইড্রোসিস। এক্ষেত্রে মানবশরীরে এক ধরনের ক্ষরণ তৈরি হয়, যাকে ‘Lipofuscin Granules’ বলে। এই রোগের লক্ষণ থাকলে মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট দরকার।
নিয়ম মানলে পরিত্রাণ
খুব সাধারণ কয়েকটি নিয়ম মানলে কিছুটা নিরাময় সম্ভব। তবে সম্পূর্ণ সমস্যামুক্ত হতে গেলে ডার্মাটোলজিস্টের কাছে যেতেই হবে। তবে কয়েকটি নিয়ম মেনে চলা জরুরী।
- স্নান করার সময় সাবান দিয়ে ভাল করে স্নান করুন। একটু বেশি সময় ধরেই স্নান করুন। যতটা জল লাগে, প্রয়োজনে তার থেকে বেশি জল ব্যবহার করুন।
- দোকানে Anti-perspirants পাওয়া যায়। চিকিৎসকের পরামর্শমতো তা ব্যবহার করতে পারেন। তবে সাবধান! বাজারচলতি যা কিছু, কৌটোর গায়ে Anti-perspirants লেখা থাকলেই কিনবেন না। ডাক্তার যা ‘প্রেসক্রাইব’করবেন, সেই ‘মেডিকেটেড’জিনিসই ব্যবহার করুন। ডিওডোরেন্ট ব্যবহারে অসুবিধা নেই। তবে সেটা ঘামের দুর্গন্ধ থেকে স্থায়ী ‘প্রোটেকশন’দেয় না, সাময়িক স্বস্তি দেয়।
- শরীরের যে অংশে ঘাম বেশি হচ্ছে, তা লোম-মুক্ত রাখুন। এতে ব্যাকটিরিয়া কম হবে।
- যাঁরা স্থূলতার সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা ওজন কমানোর দিকে নজর দিন।ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।