রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: বক্তার নাম সৌরভ গঙ্গেপাধ্যায়। আজ থেকে শুরু হতে চলা বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল নিয়ে যিনি সাক্ষাৎকার দিলেন ‘সংবাদ প্রতিদিন’কে। লন্ডনের বাড়িতে বসে।
প্রশ্ন: একটা কথা বলুন। এই যে বলা হয়, টেস্ট ক্রিকেট মৃতপ্রায়, টেস্ট ক্রিকেট ফুরিয়ে আসছে। সে দিক থেকে দেখলে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ কতটা তাৎপর্যপূর্ণ?
সৌরভ: না, না। টেস্ট ক্রিকেট শেষ হয়ে আসছে, কিছু কিছু জায়গায়। সর্বত্র নয়। একটা কথা মাথায় রাখবেন। টেস্ট ক্রিকেট শেষ হয়ে গেলে ক্রিকেটের কোয়ালিটিও শেষ হয়ে যাবে। ক্রিকেটের গুণগত মান বাঁচিয়ে রাখতে টেস্ট ক্রিকেটের প্রবল দরকার আছে। আর আগামী পাঁচ দিন দেখুন না। ইট উইল বি আ সেলআউট। এরপর অ্যাসেজ রয়েছে। পাঁচটা টেস্ট অস্ট্রেলিয়া খেলবে এখানে। তাই এ দেশে আগামী এক মাস ধরে পুরো টেস্ট ক্রিকেটই চলবে। আমি বলব, টেস্ট ক্রিকেট থাকবে। বরং আমি জানি না, ওয়ানডে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কী? আমার মতে, আগামী দিনে টেস্ট আর টি-টোয়েন্টিই থাকবে শুধু।
প্রশ্ন: কিন্তু এই যে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, সেটা কি টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি আরও বেশি আগ্রহ তৈরি করে দেয়নি?
সৌরভ: নিশ্চয়ই। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আসার পর তাৎপর্য অনেক বেড়ে গিয়েছে টেস্টের। নাও ইউ প্লে ফর সামথিং। একটা আলাদা অর্থ রয়েছে। প্রতি দু’বছর অন্তর টেস্ট চ্যাম্পিয়শিপ হচ্ছে। গতবার ভারত খেলেছে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলেছিল। এবার অস্ট্রেলিয়া সামনে।
[আরও পড়ুন: সমস্যা মেটার পথে? আলোচনার জন্য কুস্তিগিরদের আমন্ত্রণ কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রীর]
প্রশ্ন: গত টেস্ট ফাইনালে আমরা হেরে গিয়েছিলাম। এবার কী মনে হচ্ছে?
সৌরভ: কী হতে পারে, সেটা নির্ভর করবে কেমন খেলে। ইন্ডিয়ার কাছে টিম রয়েছে ভাল করার মতো। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে ব্যাটিং। ভারত যদি ভাল ব্যাট করে, বিশেষ করে প্রথম ইনিংসে সাড়ে তিনশো থেকে চারশো রান তোলা যায়, তা হলে ভারতের সামনে বড়সড় সম্ভাবনা থাকবে ম্যাচটা জেতার। সেটা যদি করতে না পারে, তাহলে কঠিন হবে। দু’টো টিমই ভাল। দু’পক্ষেরই সুযোগ রয়েছে ভাল করার। দেখা যাক।
প্রশ্ন: ওভালের পিচ নিয়ে প্রচুর চর্চা চলছে। এখানে আজ পর্যন্ত কখনও জুন মাসের শুরুতে টেস্ট হয়নি এখানে। তাই ওভাল পিচ কেমন হবে, তা নিয়ে একটা সার্বিক ধোঁয়াশা রয়েছে। আপনার কী মনে হয়? কী রকম হতে পারে ওভাল পিচ?
সৌরভ: ভাল উইকেট হবে। ভাল বাউন্স থাকে। আমি এবার এসে ওভালের উইকেট দেখিনি এখনও। মাঠে গিয়ে দেখতে পাব কী অবস্থা। ইংল্যান্ডে অনেক কিছু নির্ভর করে পিচে ঘাসের উপর। ঘাস থাকলে সিমাররা সাহায্য পাবে। আমি টুইটারে ওভাল পিচের ছবি-টবি দেখছি। পুরো গ্রিন পিচের ছবি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ইংল্যান্ডের পিচের দু’তিন দিন আগের ছবি দেখে আপনি কিছু বুঝতে পারবেন না। এটা উপমহাদেশের পিচ নয় যে, আগের থেকে ঘাস কেটে রাখবে। খেলার দিন সকালে এখানে গিয়ে অনেক সময়ই নতুন সারফেস আবিষ্কার করা যায়।
প্রশ্ন: দশ বছর ভারত আইসিসি টুর্নামেন্ট জেতেনি। সেটা নিয়েও চর্চা চলছে।
সৌরভ: মনে রাখতে হবে, আমরা আঠাশ বছর পর ২০১১ সালে বিশ্বকাপ জিতেছিলাম। তা হলে? রোজ রোজ আইসিসি টুর্নামেন্ট কিন্তু জেতা যায় না।
প্রশ্ন: বুঝলাম। কিন্তু এই যে ঋষভ পন্থ নেই। এটা কত বড় ধাক্কা? কেএস ভরত বা ঈশান কিষাণের মধ্যে কাকে দেখছেন?
সৌরভ: পন্থের না থাকাটা বিশাল ধাক্কা। আমার মনে হয়, কেএস ভরত খেলবে এই টেস্টে। রাহুল দ্রাবিড়ের মাইন্ডসেট যতটুকু যা বুঝি, তাতে সেটাই মনে হচ্ছে। আশা করবে, কেএস ভরত ভাল করবে।
প্রশ্ন: আর জশপ্রীত বুমরাহ? তাঁর না থাকাটাও তো বিশাল ধাক্কা।
সৌরভ: অবশ্যই বিশাল ধাক্কা। কিন্তু চোট পেয়ে গেলে কিছু করার নেই। অস্ট্রেলিয়ারও হ্যাজেলউড নেই। কিন্তু আমাদেরও সামি আছে, সিরাজ আছে। ওরাও খুব ভাল। শার্দূলও হয়তো খেলবে।
প্রশ্ন: ভারতের দুই স্পিনারে খেলার সম্ভাবনা দেখছেন?
সৌরভ: জাদেজা খেলবে অলরাউন্ডার হিসেবে। কিন্তু অশ্বিনকে খেলাতেই হবে কারণ সে-ই তোমার সেরা স্পিনার।
[আরও পড়ুন: পরীক্ষাই দেননি প্রার্থী, তবুও নিয়োগ বাম আমলে, একাধিক নমুনায় পর্দাফাঁস]
প্রশ্ন: রিকি পন্টিংয়ের মতো কোনও কোনও অস্ট্রেলীয় প্রাক্তন বলতে শুরু করেছেন যে, অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে। মাইন্ডগেম বলবেন? নাকি সত্যি অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে?
সৌরভ: কী করে এগিয়ে? ইন্ডিয়া অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ওদের হারিয়ে এসেছে। অস্ট্রেলিয়া ভারতে এসেছে যখন, তখনও ভারত ওদের হারিয়েছে। জানি এটা একটা টেস্টের ব্যাপার। এখানে একটা সেশন অনেক কিছু বদলে দিতে পারে। কিন্তু ২০১৭ থেকে দেখলে ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ভারত অনেক, অনেক এগিয়ে।
প্রশ্ন: আপনি স্টিভ ওয়া, রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়াকে দেখেছেন। খেলেছেন। কোথায় রাখবেন এই অস্ট্রেলিয়াকে?
সৌরভ: স্টিভের অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কোনও তুলনাই হয় না ওদের। স্টিভের অস্ট্রেলিয়া খুব সম্ভবত গত পঞ্চাশ বছরের শ্রেষ্ঠ টিম।