সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: টালার পর এবার আরও কিছু সেতুর অবস্থা নিয়ে উদ্বেগে বিশেষজ্ঞরা। সেই তালিকায় নাম রয়েছে চিৎপুর, চেতলার নাম। সমস্যা রয়েছে তারাতলা ব্রিজ নিয়েও। পুজো উদ্বোধনে এসে এই তথ্য জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু একইসঙ্গে প্রশাসনের অসহায়তা ও বাধ্যবাধকতার কথাও শোনালেন তিনি। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “এতদিন দেখেনি কেন? এখন আমি কী করব, সব ভেঙে দেব একসঙ্গে? লোকে যাবে কী করে? সরকারের তো কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। ইঞ্জিনিয়ারদের দেখতে বলা হচ্ছে কীভাবে সব আস্তে আস্তে করা যায়। আবার রেখে দিলে লোক মরলে আমায় বলবে। আমি কী করতে পারি? ৭০ বছর আগে সব করে গিয়েছে। নজর দেয়নি। কোনও মেকানিজম নেই। কাগজ পাওয়া যায় না।”
[ আরও পড়ুন: পরিবহণ দপ্তরের চুক্তিভিত্তিক চালক-কন্ডাক্টরদের বেতনবৃদ্ধি, পুজোর উপহার ‘জলসাথী’দেরও ]
অন্যদিকে পুজোর মুখে টালা ব্রিজের মতো ব্যস্ততম সেতু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চূড়ান্ত ভোগান্তির মুখে পড়েছেন যাত্রীরা৷ এই ভোগান্তির কথা মাথায় রেখেই ১১ অক্টোবর পর্যন্ত টালা ব্রিজে বাস চালানোর কথা ভাবছে রাজ্য৷ যদিও রাজ্যের এই সিদ্ধান্তে সহমত দেয়নি বিশেষজ্ঞ কমিটি রাইটস৷ নবান্ন সূত্রে খবর, এই বিষয়ে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হবে৷ সেই বৈঠকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ রবিবার থেকেই তিন টনের বেশি ভারী যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে উত্তরের গুরুত্বপূর্ণ টালা ব্রিজে। সরকারি—বেসরকারি বাসের যাত্রাপথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে বা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মানুষকে দারুণ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সোমবার ছিল প্রথম অফিসের কাজের দিন। সাধারণভাবে যা সময় লাগত, তার দ্বিগুণের বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। উত্তর ও মধ্য কলকাতায় তীব্র যানজটও হয়েছে। মেট্রো রেলের টিকিট কাউন্টারেও মারাত্মক ভিড়। রবিবার এমনটা টের পাওয়া যায়নি। পুলিশের একটি অংশ সুপারিশ করেছে, পুজো অর্থাৎ ১১ তারিখ পর্যন্ত টালা ব্রিজে বাস চলাচলের অনুমতি দিলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। বিকল্প রাস্তার উপর এত বাস চালানো সম্ভব নয়। বাসের সংখ্যা কমালে
আবার মানুষের ভোগান্তি চরম হবে। নবান্ন এ বিষয়ে সোমবার বৈঠক করে। নয়া মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা মঙ্গলবার ফের বৈঠকে বসবেন। ট্রাফিক পুলিশের কাছেও চূড়ান্ত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। তারপরই সিদ্ধান্ত। রাইটস বাস না চালানোর প্রস্তাব দিয়েছে। রাজ্য প্রশাসনও নিরাপত্তায় কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না। তবে বারাকপুর থেকে বিবাদি বাগ পর্যন্ত তিনজোড়া বাড়তি ট্রেন চালানো হবে বলে জানিয়েছে পূর্ব রেল।
[ আরও পড়ুন: একুশের আগে বঙ্গে জনসংযোগে জোর, পুজো উদ্বোধনে আজ শহরে অমিত শাহ ]
জানা গিয়েছে, বিবাদি বাগ থেকে বেলা ১০.৩৮, দুপুর একটা ও বিকেল ৫.১৮য় ছাড়বে। বারাকপুর থেকে বেলা ১১.৪৬, দুপুর ২.১২ ও বিকেল সাড়ে চারটেয় এই ট্রেন ছাড়বে। রেলের কাছে আবেদনও জানিয়েছিল নবান্ন। যানজটের পরিস্থিতি যে এমন হতে পারে, তা আশঙ্কাই করেছিল পুলিশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে বেশ কিছু রুটের বাস চলাচল ওই রাস্তায় বন্ধ করার সুপারিশ করছে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ। এদিন যশোর রোড ও আরজিকর রোডে প্রবল চাপ ছিল। গাড়ি নিয়ে এগোনোই যায়নি।
মমতা এই যানজটের প্রসঙ্গেও বলেন সমাজসেবী সংঘের পুজোর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে। উল্লেখ করেন, পুলিশ ইচ্ছে করে যানজট তৈরি করে না। কীভাবে মানুষকে স্বস্তি দেওয়া যায়, সেই চেষ্টা করা হয়। তাঁর কথায়, “টালা একটা গুরুত্বপূর্ণ জংশন। এখনও পুরো বন্ধ করেনি। ছোট গাড়ি চলছে। মিনিবাসকে অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু ৩ টনের বেশি যাওয়া যাবে না। আগে কেউ দেখেনি। আমরা শুরু করেছি। দেখতে গিয়ে সবাই বলে দিচ্ছে খারাপ। সব যদি একসঙ্গে খারাপ বলে দেয়, তবে তো এলাকাটাই কোলাপস করে যাবে। ফলে না পারছি গিলতে, না পারছি ওগরাতে। বিধিনিষেধ করতে হচ্ছে।” তিনি অভিযোগ করেন, ৬৫-৭০ বছরের পুরনো সেতুগুলোতে আট-নয় বছর আগেও কোনও রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। এখন ব্রিজগুলি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, হাল খুব খারাপ। কিন্তু একসঙ্গে সব সেতু তো বন্ধ করে দেওয়া যায় না। তাই ধাপে ধাপে মেরামত করতে হচ্ছে।
The post টালার পর চিৎপুর, চেতলা ব্রিজ নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ বিশেষজ্ঞদের appeared first on Sangbad Pratidin.