সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: ছবির মতো সুন্দর চা বাগান আর পাহাড়ে ঘেরা উত্তরবঙ্গ। দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং বাদ দিলেও সমতল থেকে সামান্য উপরের তরাই-ডুয়ার্স সংলগ্ন এলাকাও কম নজরকাড়া নয়। গ্রামীণ পার্বত্য এলাকা সাদামাটা অথচ মনোরম দৃশ্য। আর রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে উত্তরবঙ্গের অচেনা, অজানা অঞ্চলকে আরও তুলে ধরতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে আন্তর্জাতিক এক সংস্থা। ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল আর্টিস্ট ফোরাম আয়োজন করেছে এক সপ্তাহব্যাপী ছবি আঁকা উৎসব, যার পোশাকি নাম “এক্সপ্লোরিং রুরাল ল্যান্ডস্কেপ থ্রু আর্ট।” অর্থাৎ হাতে আঁকা ছবির মধ্যে দিয়ে গ্রামীণ পার্বত্য অঞ্চলগুলি চেনা। মংপুতে কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতে বসেই চলবে ছবি আঁকা। যাঁরা চেনা,পরিচিত জায়গার বাইরে অন্য কোথাও, অন্য কোনওখানে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন, তাঁদের জন্য এই সময় আদর্শ ভ্রমণ স্থান হতে পারে কালিম্পংয়ের মংপু।
বিনামূল্যে টয় ট্রেনে ভ্রমণ, বিশেষ ঘোষণা দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের
গ্রামীণ পাহাড়ি সংস্কৃতিকে ছবির মাধ্যমে তুলে ধরতে বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে “এক্সপ্লোরিং রুরাল ল্যান্ডস্কেপ থ্রু আর্ট।” এমন একটি ফেস্টিভ্যালের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত মংপুকে। এখানকার রবীন্দ্রভবনে বসে পাহাড়ের নিসর্গ প্রকৃতির ছবি আঁকবেন শিল্পীরা। ভারত ও নেপালের ৮ জন শিল্পী এক সপ্তাহ ধরে যেসব ছবি আঁকবেন, পর্যটকরা গেলেই তা দেখতে পাবেন। বিভিন্ন এলাকার সঙ্গেও পরিচিত হতে পারবেন আঁকা ছবির মাধ্যমে। অন্যতম উদ্যোক্তা রাজ বসু জানালেন, এখানে আঁকা ছবি শিল্পীরা নিজেদের মধ্যে অদলবদল করবেন। নেপালের ছবিগুলি ভারতে থাকবে, আবার ভারতের ছবিগুলি নেপালে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তাহলে দু’দেশের অচেনা-অদেখা পর্যটন ক্ষেত্রগুলি জানার পরিধিতে আসবে।
পাবদা মাছের টক আর বুনো ফুলের গন্ধ নিয়ে অপেক্ষা করছে বিচিত্রপুর
এ ধরনের উদ্যোগ এবারই প্রথম হলেও, “এক্সপ্লোরিং রুরাল ল্যান্ডস্কেপ থ্রু আর্ট” এবার থেকে পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এই উৎসবে শামিল করা হবে শিল্পী, ভ্রমণপ্রিয় মানুষজনকে। এতে একসঙ্গে একাধিক লক্ষ্য পূরণ হবে বলে মনে করছেন রাজবাবু। তাঁর কথায়, “প্রচারবিমুখ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলি বর্তমানে অনেকের কাছেই পছন্দের ডেস্টিনেশন হয়ে উঠছে। অনেক সময়ে সেসব জায়গা খুঁজে ঠিকমতো বের করতে পারেন না। বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা ট্রাভেল পোর্টালে সেসবের হদিশ থাকে না। ফলে ইচ্ছে থাকলেও চট করে সেসব জায়গায় যাওয়া সম্ভব হয় না। তাই বিকল্প হিসেবে যতগুলি উপায় অবলম্বন করা যায় সেটাই আমরা করছি।” রাজ বসুর দাবি, যোগযোগের অন্যতম উপায় ছবি আঁকা। এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম প্রচার এবং যোগাযোগের মাধ্যম। গুহাচিত্র থেকে পটচিত্র – কয়েক হাজার বছরের ছবি, সবই এখনও পর্যন্ত সজীব। যদিও অত্যাধুনিক বিভিন্ন রকম যোগাযোগের মাধ্যম তার প্রয়োজনীয়তা কমিয়েছে। এই বাস্তব মেনে নিলেও, যেখানে প্রযুক্তি পৌঁছতে পারছে না, সেখানে এই পদ্ধতি ভীষণভাবে কার্যকর। তাই ছবি আঁকাকে উৎসাহ দেওয়া এবং পর্যটনকে ছবির মাধ্যমে তুলে ধরা দু’টি বিষয় এখানে সমানভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। আগামী কয়েক বছরের লক্ষ্যমাত্রা, পাহাড়ের প্রায় সমস্ত গ্রামীণ পর্যটন, হোম স্টে-কে এই এক্সপ্লোরিং রুরাল ল্যান্ডস্কেপের মাধ্যমে সামনে আনা।
The post পাহাড়ের গ্রামীণ সৌন্দর্যকে সামনে আনতে সপ্তাহব্যাপী আঁকার উৎসব appeared first on Sangbad Pratidin.