shono
Advertisement

সবুজ পাহাড় আর চা-বাগানের ঘেরাটোপে যেন বন্দি মায়াময়ী মুন্নার

কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন? খরচই বা কত? The post সবুজ পাহাড় আর চা-বাগানের ঘেরাটোপে যেন বন্দি মায়াময়ী মুন্নার appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 08:12 PM Mar 08, 2018Updated: 02:38 PM Sep 13, 2019

সৌমেন জানা: দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততায় মন উদাস হয়ে ওঠে। কুয়াশাচ্ছন্ন পর্বত, সারি সারি অর্জুন এবং সবুজ চা-বাগানের মাঝে নিরুদ্দেশ হয়ে যেতে ইচ্ছে করে। তাই সুযোগ পেয়েই এবার পাড়ি দিলাম “ঈশ্বরের দেশ”-এর উদ্দেশ্যে।

Advertisement

কেরল ভারতের একেবারে দক্ষিণে। দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ ঘেঁষা একটি ছোট রাজ্য। পশ্চিমে আরবসাগর, পূর্বে ৫০০-২৭০০ মিটার উঁচু পশ্চিমঘাট পর্বতমালা দ্বারা এবং ৪৪টি নদী দ্বারা বেষ্টিত কেরল বহুমুখী ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে মোড়া। তাই অনেকেই কেরলকে “ঈশ্বরের নিজের দেশ” বা “God’s Own Country”-ও বলেন। পর্যটকদের কাছে কেরল মানেই কোথাও সমুদ্র আর দীর্ঘ উপকূল, কোথাও আবার সবুজ চা-বাগান।

[পিঁদাড়ে পলাশের বন পুরুলিয়া চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে শান্তিনিকেতনকে]

যেতে যেতে চোখে পড়ল রাস্তার পাশে চা-বাগানগুলোর মাঝে-মাঝে সোজা মাথা তুলে আকাশের সঙ্গে মিতালি পাতাতে ব্যস্ত সারি দেওয়া পাইন গাছ৷ আর পাইন গাছের কাণ্ডকে সস্নেহ বেষ্টনে জড়িয়ে ধরেছে গোলমরিচের লতাগুলো৷ যাত্রাপথে খানিক বিরতিতে রাস্তার ধারের ছোট্ট ঝুপড়ি চায়ের দোকানের গরম, সুস্বাদু মশলা চায়ে চুমুক দিতে-দিতে এই ঢেউ খেলানো সবুজের বাহার দেখতে দেখতে মনে হল এ কোথায় এলাম! এত সবুজ, এত সবুজ! মুন্নার তাই সবুজে মাখামাখি এক শহর৷

কেরলের অন্যতম জনপ্রিয় হিল-স্টেশন হল মুন্নার। মুন্নারকে ‘কেরলের কাশ্মীর’ও বলা হয়। মুধিরাপূজা, নাল্লাথানি এবং কুন্দালি নদীর স্রোত যেন এক হয়ে মিলেছে মুন্নারের ঠিক মাঝখানে এবং সম্ভবত এই নদীর কারণেই প্রাকৃতিকভাবে মুন্নারের আবহাওয়া, জীবজন্তু এবং গাছপালা অন্য যে কোনও জায়গার চেয়ে আলাদা। পশ্চিমঘাট পর্বতমালার ঢালে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত মুন্নার শহরটি ছিল একসময়ের দক্ষিণ ভারতের ব্রিটিশ শাসকদের গ্রীষ্মকালীন অবসরযাপনের জায়গা। পাহাড়ের পর পাহাড়, চারপাশটা সবুজে ঢাকা। তার মধ্যে মেঘের ভেলা এদিক-ওদিক ভেসে বেড়াচ্ছে। বিস্তৃর্ণ অঞ্চল জুড়ে চা-বাগান, পুরোনো আমলের সব বাংলো, ছোট ছোট নদী, জলপ্রপাত এবং শীতল আবহাওয়া, এই সবই এখানকার বৈশিষ্ট্য। মুখচোরা রোদ এখানে অভিমানে করে লুকিয়ে থাকে। সবুজ পাহাড় আর চা বাগানের ঘেরাটোপে কেউ যেন বন্দি করে রেখেছে সবুজ সুন্দরীকে। কোচি থেকে ক্যাব নিয়ে তিন-চার ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম মুন্নার। যেতে যেতে দেখতে পেলাম সুদৃশ্য দুটি জলপ্রপাত, স্পাইস গার্ডেন আর এলিফ্যান্ট রাইড পার্ক।

পাহাড়ের ঢালে ঢালে যেন ঢেউ খেলানো চা-বাগান তার অপরূপ শোভার ডালি নিয়ে যেন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। যাত্রাপথের সৌন্দর্য্যে চোখে জুড়িয়ে গেল, মনে ফেলল প্রশান্তির ছায়া।

[সামনেই রয়েছে বিরাট ছুটি, ঘুরে আসুন প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি শিমুলতলায়]

একটা হোটেলে সেদিনের মতো ঠাঁই হল। পরেরদিন বেরোলাম মাতুপত্তির উদ্দেশ্যে। মাতুপত্তি আসলে অনেকগুলো পাহাড়ের সারি। এর বুক চিরেই গড়ে উঠেছে মাতুপত্তি ড্যাম। এই কৃত্রিম হ্রদের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে প্রতিদিন হাজারো পর্যটকের সমাগম ঘটে এখানে। ১৯৭০ সালে মুন্নারের এই ড্যামটির নির্মাণকার্য সমাপ্ত হয়। এই ড্যাম এখন শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন নয়, বন্যপ্রাণী আর পাখিদের অভ্যয়ারণ্যেও পরিণত হয়েছে।

[পাহাড়ে একঘেয়েমি? অন্য স্বাদের খোঁজ পেতে চলুন সিটং]

ড্যামের স্থির নীলচে জলে সবুজ পাহাড়ের ছায়া, সারিসারি চা-বাগান, আর দূরে পাহাড়ের গায়ে ঘুমিয়ে থাকা গভীর বন যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এখানকার রোমাঞ্চই আলাদা। জোরে কথা বললেই অপর পার থেকে ফিরে আসে প্রতিধ্বনি। গলা চড়িয়ে পরীক্ষা করে নিলাম ভাল করে। পর্যটকদের জন্য রয়েছে স্পিড বোটে করে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ, রয়েছে প্যাডেল বোট। শান্ত এই হ্রদের পাড়ে কিছুক্ষন বসে থেকে ‘কেরালা কফি’র স্বাদ আস্বাদন করলাম। এখানে বোটিং করতে চাইলে প্রতি পাঁচজনের গ্রুপের জন্য প্রতি ১৫ মিনিটের খরচ ৩০০-৫০০ টাকা সাধারণ বোটে আর ৭০০-১০০০ টাকা স্পিড বোটে।

সন্ধ্যাবেলায় দেখলাম কেরালার এক প্রাচীন মার্শাল আর্ট “কলারিপায়াতু”। শিল্পীদের শারীরিক কসরৎ দেখবার মত।

পরেরদিন রওনা দিলাম টপ স্টেশনের উদ্দেশ্যে। মুন্নার থেকে ৩২ কিমি দূরে টপ স্টেশন, মুন্নারের সর্বোচ্চ ভিউ পয়েন্ট। চারিদিকে পাহাড়, কিছু পথ হেঁটে কয়েক ধাপ সিঁড়ি ভেঙে পৌঁছে গেলাম ভিউ পয়েন্টে। এইখানে দেখলাম রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরি খেলা। নিচে রয়েছে থেনি শহর। পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের লুকোচুরি স্বপ্নরাজ্যে পৌছে দেয়। চারিদিকের সবুজের সমারোহ বলে শেষ করা যাবে না। সব মিলিয়ে চেনা জীবন হঠাৎই অচেনা।

পরদিন ফেরার পালা। এক স্পাইস গার্ডেন থেকে কেনা হল নানা মশলা। ফেরার ট্রেন কন্যাকুমারী এক্সপ্রেস, এর্নাকুলাম থেকে। হালকা মেঘের চাদরে মোড়া রহস্যময়ী সুন্দরী মুন্নারের মায়ায় আজও আচ্ছন্ন।

[সমুদ্রপাড়ে তাঁবুতে রাত্রিবাস, এমন দিঘা কখনও দেখেছেন?]

কখন যাবেন: আগস্ট থেকে মার্চ মাস মুন্নার বেড়ানোর জন্য আদর্শ সময়৷ এখানে আবহাওয়া শীতল প্রকৃতির তাই সঙ্গে অবশ্যই যথেষ্ট গরম জামা রাখবেন৷

কীভাবে যাবেন: হাওড়া থেকে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চেন্নাই সেন্ট্রালে পৌঁছে ওখান থেকে ট্রেনে এরনাকুলাম টাউনে পৌঁছে যেতে পারেন পরের দিন সকালে৷ এরনাকুলাম টাউন থেকে মুন্নারের দূরত্ব সড়ক পথে ১৩০ কিলোমিটারের মতো৷

কোথায় থাকবেন: কেরল পর্যটন দপ্তরের হোটেল আছে মুন্নারে৷ দেখে নিতে পারেন তাদের ওয়েবসাইট৷ এছাড়াও সারা মুন্নার জুড়ে আরও অনেক হোটেল, রিসর্ট রয়েছে৷

কী করবেন না: খাওয়ার প্লেট, জলের বোতল, প্লাস্টিকের প্যাকেট ইত্যাদি যত্রতত্র ফেলে এই সুন্দর সবুজ শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করবেন না, দূষিত করবেন না৷

[সবুজে ঘেরা স্বপ্নের দেশ]

খরচ: দুদিনের মতো ঘুরতে মোটামুটি ৫-৭ হাজার টাকার বেশি খরচ হবে না।

(প্রতিবেদক পেশায় শিক্ষক। কিন্তু পায়ের তলায় সর্ষে। বেড়ানোর সুযোগ পেলেই ছুটে যান নয়া গন্তব্যে। এই প্রতিবেদনটির সমস্ত তথ্য ও বর্ণনা লেখকের ব্যক্তিগত। তথ্য ও ছবি সংকলনে প্রতিবেদক।)

The post সবুজ পাহাড় আর চা-বাগানের ঘেরাটোপে যেন বন্দি মায়াময়ী মুন্নার appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement