সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ওষুধ বাঁচাবে প্রাণ? না মারবে বেঘোরে?
যদি জানতে পারেন, ‘প্রাণদায়ী’ ওষুধ পরিচয়ে সরকারি হাসপাতালে নার্স-ডাক্তারবাবুদের হাত থেকে চোখ বুজে যে অ্যান্টিবায়োটিকটি খাচ্ছেন, তা আদপে ‘প্রাণঘাতী’? জাল? বিষাক্ত? রোগ-ব্যধি উপশমকারী ঔষধি উপাদানের বদলে তাতে মিশে রয়েছে ট্যালকম পাউডার আর স্টার্চ?
বিস্ময়ে চোখ কপালে উঠে যাওয়া এমন ঘটনাই ঘটেছে বাস্তবে। জাল ওষুধের এমন ভয়ঙ্কর দুষ্ট চক্র দিনকয়েক আগে পর্যন্ত রমরমিয়ে চলছিল উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্রের মতো একাধিক রাজ্যে। এই সমস্ত রাজ্যে সরবরাহ হত ভুয়ো অ্যান্টিবায়োটিক। জানা গিয়েছে, হরিদ্বারের এক পশু-ওষুধের ল্যাবরেটরিতে তৈরি হত ওষুধের নামে গায়ে মাখার সস্তা পাউডার আর স্টার্চের এই বিষাক্ত মিশ্রণ। আর তার পর সেই ‘ওষুধ’ পাঠিয়ে দেওয়া হত একের পর এক রাজ্যে। হাওয়ালা চক্রের মাধ্যমে মুম্বই থেকে উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরে আসত কোটি কোটি টাকা। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, পরীক্ষা ব্যবস্থার ফাঁক গলে দুর্বার গতিতে চলছিল এই অবৈধ কারবার। ছন্দপতন ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। নীতিন ভাণ্ডারকর নামে এক ড্রাগ ইনস্পেক্টরের হাত ধরে।
দুষ্ট চক্রের পর্দাফাঁসের সূত্রপাত নাগপুরের কলমেশ্বরের এক গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখানেই পরিদর্শনে গিয়ে প্রথম নীতিন বোঝেন, অ্যান্টিবায়োটিকের নামে ভুয়ো ওষুধ দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। তিনি ওষুধ সরবরাহকারী এবং বণ্টনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (এফডিএ)। ফলস্বরূপ অভিযুক্ত সংস্থাগুলিকে তখনকার মতো কালো তালিকাভুক্ত করে দেওয়া হয়। কিন্তু কিছু দিন পরই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। তবে এবার এই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল শুরু হয়। খবর জেনে এসপি (রুরাল) হর্ষ এ পোদ্দার, আইপিএস অনিল মাসখে-কে তদন্তের ভার দেন। তদন্তে উঠে আসে ভয়ঙ্কর তথ্য। গত ২০ সেপ্টেম্বর এই বিষয়ে ১,২০০ পৃষ্ঠার বিস্তারিত তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয় নাগপুর (গ্রামীণ) পুলিশ। তার পরই জানা যায়, হাসপাতালে ভুয়ো অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে গোটা মহারাষ্ট্র জুড়েই। ওয়ার্ধা, নানদেড়, থানে প্রভৃতি জায়গায়। আর সবের পিছনেই রয়েছে বড় একটি চক্র। শুধু মহারাষ্ট্র নয়, জাল ওষুধ যেত উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড ও ছত্তিশগড়েও।
তদন্তের প্রেক্ষিতে প্রথমেই গ্রেপ্তার করা হয় হেমন্ত মুলে নামে এক ব্যক্তিকে। সে-ই টেন্ডার পেয়েছিল। পরে সেই সূত্র ধরেই পাকড়াও করা হয় মিহির ত্রিবেদী, বিজয় চৌধুরি, গগন সিং, রবিন তানেজা, রমণ তানেজাকে। খোঁজ মেলে হরিদ্বারের পশু ল্যাবরেটরির। এই ল্যাবরেটরির মালিক অমিত ধীমান নামে এক ব্যক্তি, যিনি আগে থেকেই জেলবন্দি।