সৌরভ মাজি, বর্ধমান: রান্নার স্বাদ বাড়িয়ে দিতে কারিপাতার জুড়ি মেলা ভার। দক্ষিণ ভারতীয় রান্নায় বিভিন্ন পদে এই সুগন্ধি কারিপাতার ব্যবহার অপরিহার্য। ধীরে ধীরে তা অন্যান্য প্রাদেশিক রান্নাতেও জায়গা করে নিয়েছে। বর্তমানে বাংলার বিভিন্ন পদেও যেন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে কারিপাতা। পশ্চিমবঙ্গেও বর্তমানে ভাল চাহিদা রয়েছে কারিপাতার। দক্ষিণ ভারতে কারিপাতা চাষ বাণিজ্যিকভাবে সফল। পশ্চিমবঙ্গেও কারিপাতার বাজার ক্রমশ বেড়েছে। তাই চাষ করে এখানেও বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই চাষের সব থেকে বড় সুবিধা যেকোনও আবহাওয়ায় চাষ করা যায়। এমনকি শুষ্ক আবহাওয়াতেও কারিপাতা গাছ জন্মায়। শীতপ্রধান এলাকাতেও সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে গাছের বৃদ্ধি সামান্য ব্যাহত হয়। সব ধরনের মাটিতেই এই গাছ জন্মায়। তবে লালমাটিতে কারিপাতায় চাষ সব থেকে ভাল হয়। খুব বেশি জাত নেই কারিপাতার। তবে চাষিদের খুব পছন্দের জাত হল যে কারিপাতার মধ্যশিরা গোলাপি রঙের। এছাড়া ধারওয়াড় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি আরও দুইটি প্রজাতির কারিপাতা বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এই দুই প্রকার কারিপাতাতেও যথেষ্ট সুগন্ধ রয়েছে। কম খরচে বেশ ভাল আয় করা যায় কারিপাতা চাষ করে। কারিপাতা চাষের আরও একটি বড় সুবিধা হচ্ছে রোগপোকারা উপদ্রব খুব কম। পোকামাকড়ের আক্রমণ হলে গাছ বাঁচাতে কিছু কীটনাশক বা নিমের সামগ্রী ব্যবহার করা যেতে পারে। মিলিবাগ, এফিড, পাতামোড়া প্রভৃতি পোকার কারিপাতা গাছে আক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে ডায়মিথোয়েট দু’মিলিলিটার প্রতি লিটার জলে গুলে ভাল করে স্প্রে করলে উপকার মিলবে। অনেক সময় পাতায় দাগ রোগ দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে কার্বেন্ডাজিম এক গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
কারিপাতা চাষের আগে জমিতে ভালভাবে চাষ দিতে হবে। অঙ্কুরিত বীজ থেকে সহজেই চারাগাছ তৈরি করা যায়। চারাগাছ তিন বছর পর্যন্ত বড় হয়। অনেকদিন বেঁচে থাকে বলে কারিপাতা গাছকে বহুবর্ষজীবী বলা হয়। জমিতে চারা বসানোর সময় দু’টি গাছের মাঝে ৯০ থেকে ১২০ সেন্টিমিটার দূরত্ব রাখতে হবে। দু’টি সারির মধ্যে ৭৫ সেন্টিমিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। গাছ লাগানোর আগে ৩০ ঘনমিটার গর্ত করতে হবে। তার মধ্যে কম্পোস্ট মিশ্রিত সার দিয়ে ভরতি করে দিতে হবে। তার পর সেখানে সুস্থ সবল চারাগাছ লাগাতে হবে। তার পর হাল্কা সেচ দিতে হবে। জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। যখন প্রয়োজন হবে সেই অনুযায়ী জলসেচ করতে হবে। গাছে অজৈব রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় না। গাছের বৃদ্ধি ও বেশি ফসল উৎপাদনের জন্য প্রতিটি গাছে ২০ কেজি হারে জৈব সার দিতে হবে। এছাড়া প্রতি বছর প্রতিটি গাছে এনপিকে সার ১৫০:২৫:৫০ গ্রাম হারে প্রয়োগ করতে হবে।
[আরও পড়ুন: বাড়ছে চাহিদা, বেশি লাভের আশায় বিকল্প হিসাবে গাঁদা চাষে মন কৃষকদের]
আগেই বলেছি কারিপাতা গাছ বহুবর্ষজীবী। একটি গাছে ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত পাতা তোলা যায়। বছরে প্রতিটি গাছ থেকে তিন থেকে চারবার পাতা তোলা যায়। একটি গাছ সাধারণত ১.২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। গাছের ছ’মাস বয়সে মাটি থেকে ১৫ সেমি হয়ে থাকে। বীজ থেকে চারা হওয়া পর্যন্ত ১ মিটার লম্বা হলে গাছের ঠিকমতো পরিচর্যা করা প্রয়োজন। ঠিকমতো পরিচর্যা করলে প্রতি হেক্টের ৫ থেকে ৭ টন কারি পাতা তোলা যায়। চারা বসানোর পর প্রথম বছরের শেষ গাছে প্রথম শস্য এলে প্রথম পাতা তোলা যায়। প্রথম বছরের শেষে প্রতি হেক্টর জমিতে ৪০০ কেজি পাতা তোলা য়াবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বছরে চার মাস অন্তর পাতা তোলা যায়। বছরে ২০০০ থেকে ২২০০ কেজি পাতা মিলবে প্রতি হেক্টরে। চতুর্থ বছরে তিনমাস অন্তর পাতা তোলা যাবে। বছরে পাতা মিলবে ২৫০০ কেজি প্রতি হেক্টরে। পঞ্চম বছর থেকে বছরে আড়াই মাস অন্তর পাতা তোলা যাবে। ৩৫০০ থেকে ৫০০০ কেজি প্রতি হেক্টরে পাতা তোলা যাবে।
The post কেনার ভাবনা ছেড়ে বাড়িতেই করুন কারিপাতা চাষ, জেনে নিন পদ্ধতি appeared first on Sangbad Pratidin.