অর্ক দে, বর্ধমান: বাংলার ধান উৎপাদনের উচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার এবার গোটা আমেরিকাকে শেখাবেন বর্ধমানের তরুণ। ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আমেরিকার (USA) ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ে গবেষণার সুযোগ পেলেন আকাশ দত্ত। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণার ক্ষেত্রে এশিয়া (Asia) মহাদেশ থেকে মাত্র দু’জন আমেরিকায় গিয়ে এই কাজের সুযোগ পেয়েছেন। উন্নতমানের ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে জেনেটিক্স প্রযুক্তি আকাশের গবেষণার বিষয়। বিশ্ব উষ্ণায়নে (Global Warming) ক্রমাগত বদলে যাওয়া আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে আরও বেশি ফলনশীল ধানের প্রজাতি তৈরির ক্ষেত্রে কীভাবে কাজ হয়, সেটাই দেখাবেন বর্ধমানের তরুণ গবেষক।
বাংলার শস্যগোলা পূর্ব বর্ধমান (East Burdwan) জেলা থেকে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণার ক্ষেত্রে আকাশের এই সাফল্য জেলাবাসীর কাছে গর্বের বিষয়। বর্ধমান পৌর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন আকাশ। তারপর কৃষিবিজ্ঞান (Agriculture) নিয়ে স্নাতক হন ওড়িশার শিক্ষা ও অনুসন্ধান কলেজ থেকে। ২০২০ সালে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন থেকে স্নাতকোত্তর আকাশ গবেষণার জন্য বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেছিলেন। ২০২১ সালে ফিলিপিন্সের ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটেও আবেদনপত্র পাঠান তিনি। সেখানে এশিয়া মহাদেশ থেকে দু’জনের আবেদন খতিয়ে দেখা হয়। একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে তাঁকে প্রজেক্ট জমা দেওয়ার অ্যাসাইনমেন্ট দেয় ওই প্রতিষ্ঠান। সেই প্রজেক্টের ভিত্তিতেই আকাশ ১০০ শতাংশ স্কলারশিপ পান। আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ে আর্বানা শাম্পেইনে গবেষণার সুযোগ পেয়েছেন আকাশ দত্ত। এই কাজে এশিয়া থেকে সুযোগ পাওয়া আরেকজন বাংলাদেশের নাগরিক বলে জানা গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: Purulia’র বাজার কাঁপাচ্ছে ‘কৃষক বন্ধু জৈব সার’, ব্যবহার হচ্ছে ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পেও]
এত বড় জায়গায় নিজের পছন্দমতো বিষয়ে গবেষণার সুযোগ পেয়েছেন, এই সুখবর গত মাসেই পেয়েছিলেন আকাশ। তাঁর বাবা তারাপদ দত্ত কৃষি দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর। ছেলের এই পড়াশোনার ক্ষেত্রে মূল উৎসাহদাতা তিনিই। তবে বিষয় বাছাই করার ক্ষেত্রে ছেলের সঙ্গে মতের অমিল হলেও শেষমেষ ছেলের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন বাবা। এত বড় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গবেষণার সুযোগ মেলায় খুশি পরিবারের সকলেই। তাই বাড়িতে এখন বিদেশযাত্রার তোড়জোড়।
[আরও পড়ুন: কীভাবে কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রকল্পের সুবিধা পাবেন কৃষকরা? জানুন আবেদনের পদ্ধতি]
আকাশ বলছেন, “মূলত পশ্চিমবঙ্গে উৎপাদিত হয়, এরকম প্রজাতির ধান (Paddy Cutivation) নিয়েই গবেষণা করব। বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে ধান গাছের জেনেটিক ম্যানিপুলেশনই আমার গবেষণার বিষয়। আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কীভাবে আরও উচ্চ ফলনশীল ধান প্রজাতি তৈরি করা যায়, সেটাই হবে মূল লক্ষ্য।” তিনি আরও জানান, স্নাতকোত্তর শেষ করার পর গবেষণার জন্য দেশ-বিদেশের অনেক নামী প্রতিষ্ঠানেই আবেদন করেন। জার্মানি, ম্যাসাচুসেট ইউনিভার্সিটি সব জায়গা থেকেই ডাক এসেছিল। এছাড়া আইআইটি গুয়াহাটিতেও সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে আন্তর্জাতিক রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের একটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আমেরিকার ইলিনয় ইউনিভার্সিটিতে সুযোগ মেলে। সেখানেই গবেষণা করতে মনস্থির করেন আকাশ। এখানের কাজ শেষ করে ফিলিপিন্সের ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটে যোগ দেওয়ার কথা বর্ধমানের তরুণের।