বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: চায়ের নমুনা পরীক্ষা নিষিদ্ধ কীটনাশকের উপস্থিতি, উত্তর থেকে মুখ ফেরাচ্ছে বড় ক্রেতা সংস্থাগুলো। বিপাকে বটলিফ কারখানা কর্তৃপক্ষ। সোমবার ওই সমস্যা সমাধানের দাবি নিয়ে 'ফেডারেশন অব অল টি স্টেক হোল্ডার অ্যাসোসিয়েশন' সাতজনের প্রতিনিধি দল নয়া দিল্লিতে 'ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া'-র কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁরা চা বাগান পরিচর্যায় 'ডিমেথোয়েট' এবং ‘ইমিডাক্লোপ্রিড’ নামে দুটো রাসায়নিক ব্যবহারের অনুমতি চান। ফেডারেশন অব অল টি স্টেক হোল্ডার অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাদের মতে ওই দুটো রাসায়নিক মোটেও বিপজ্জনক নয়। তাই ব্যবহার করা যেতেই পারে। সেটা হলে সমস্যা অনেকটাই মিটবে।
সম্প্রতি চা পর্ষদ বিভিন্ন কারখানা থেকে সংগ্রহ করা প্রায় সাড়ে তিনশো চায়ের নমুনা পরীক্ষা করে নিষিদ্ধ কীটনাশকের উপস্থিতি খুঁজে পায়। এরপরই হিন্দুস্তান লিভারের মতো বড় ক্রেতা সংস্থাগুলো উত্তরবঙ্গ থেকে চা কেনা বন্ধ রেখে অসম থেকে কিনতে শুরু করে। স্বভাবতই বিপাকে পড়েন ক্ষুদ্র চা চাষিরা। প্রসঙ্গত, ভারতীয় চা পর্ষদ চা বাগানে ব্যবহারের জন্য ২০ ধরণের রাসায়নিক এবং কীটনাশক নিষিদ্ধ করেছে। নিষিদ্ধ রাসায়নিক এবং কীটনাশকের মধ্যে রয়েছে অ্যালড্রিন, ডাইলড্রিন, ক্যাপটোফোল, ফারবাম, সোমাজিন ইত্যাদি। কীটনাশক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি চালু হয়েছে নতুন ‘প্লান্ট প্রোটেকশন কোড’। সেখানে বিভিন্ন কীটনাশক অথবা রাসায়নিকের নাম ও ব্যবহারবিধি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না বলে অভিযোগ। বিভিন্ন ছোট চা বাগানে নিষিদ্ধ কীটনাশকের ব্যবহার যে বেড়েই চলছে সেটা সম্প্রতি চা পর্ষদের সংগ্রহ করা প্রায় সাড়ে তিনশো চায়ের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে স্পষ্ট।
এদিন 'ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া'-র সিইও প্রভাত রাজীব পুনহানির সঙ্গে বৈঠকের পর ফেডারেশন অব অল টি স্টেক হোল্ডার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে কমল বেজরায়া জানান, খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। সংস্থার অন্যতম সদস্য বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘চায়ে নিষিদ্ধ কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ মেলায় কিছু বড় সংস্থা এবছর উত্তরবঙ্গ থেকে বটলিফের চা কেনেনি। বিরাট ক্ষতির মুখে দাঁড়িয়ে উত্তরের চা শিল্প। আমরা বলেছি ‘ডিমেথোয়েট’ এবং ‘ইমিডাক্লোপ্রিড’ নামে দুটো রাসায়নিক ব্যবহারের অনুমতি দিলে সমস্যা অনেকটাই মিটবে। ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে।’’ তিনি জানান, আবহাওয়ার পরিবর্তনের জন্য চা বাগানে পোকার দাপট বেড়েছে। কিছু চা চাষি মারাত্মক হারে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। অনেকে চটজলদি সুরাহা পেতে নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহার করছেন। ওই কারণে চায়ের অবশিষ্টাংশের মধ্যে সেই কীটনাশকের প্রভাব থেকে যাচ্ছে। সেটা বিপজ্জনক। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিকল্প ব্যবস্থার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
