সৈকত মাইতি, তমলুক: একদিকে অধিক উৎপাদন। অন্যদিকে আবার মল মাস শ্রাবণে বিয়ের মরশুম নেই। আর তাতেই বিগত কয়েকদিনের ব্যবধানেই দাম তলানিতে ঠেকল বহু কদরের রজনীগন্ধা, গোলাপের (Roses)। ধান চাষের বিকল্প হিসেবে রকমারি ফুলের উৎপাদনে ইতিমধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুর (East Midnapore) জেলার কোলাঘাট এবং পাঁশকুড়া ব্লক নজির গড়েছে। আর জনপ্রিয় এই ফুল চাষকে কেন্দ্র করে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর কোলাঘাটের দেউলিয়া বাজারেই গড়ে উঠেছে রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুলের বাজার। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে বহু ক্ষেত্রেই মূল্যবান এই ফুল রাস্তার ধারে ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা।
শীতের মরশুমে নানা পুজো-পার্বণ অনুষ্ঠান ঘিরে ফুলের (Flowers) দর একরকম চড়া থাকে। সেখানে বর্তমানে বহুমূল্যের রজনীগন্ধা, গোলাপের দর একরকম প্রায় তলানিতে বললেই চলে। এক্ষেত্রে অবশ্য চলতি মরশুমের আবহাওয়ার গড় ভাল থাকায় উৎপাদন অধিক মাত্রায় হওয়াতে এই ফুলের দর এমনিতেই নামতে শুরু করেছিল। অর্থাৎ বৈশাখ মাসে যে রজনীগন্ধার দর কেজি প্রতি ৭০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, জ্যৈষ্ঠ মাসে সেই রজনীগন্ধার গড় হিসেবে বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি প্রতি।
[আরও পড়ুন: চোর সন্দেহে দুই আদিবাসী মহিলাকে নগ্ন করে ‘মার’, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন বিজেপির]
গত আষাঢ় মাসে আবার এই রজনীগন্ধার দর নেমে এসেছে ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজিতে। এরপর আবার বর্তমানে শ্রাবণ মাস মল মাস হওয়াতে বিয়ে কিংবা কোনও পুজো পার্বণ বা অনুষ্ঠান নেই বললেই চলে। এর ফলে যে রজনী মরশুমের সময় পাইকারি বাজারেই ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি প্রতি বিক্রি হত, এখন তা একেবারেই তলানিতে নেমে এসেছে। একইভাবে রজনীর পাশাপাশি বহু কদরের গোলাপ চাষেও অতিরিক্ত উৎপাদন এবং চাহিদা না থাকায় গত জ্যৈষ্ঠ মাস থেকেই এই গোলাপের দর পিস প্রতি ১০ থেকে ৪০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। যেখানে মরশুমের থেকে এই ফুলের দর প্রচুর নেমে এসেছে। তবে বহু সাধের রজনীগন্ধার কিংবা গোলাপের এহেন অবস্থা হলেও একটা সময়ের পর ফেলে দেওয়া দোপাটি কিংবা গাঁদা ফুলের কেজি প্রতি ৮০ টাকা করে দেদার বিকোচ্ছে কোলাঘাটের (Kolaghat) পাইকারি ফুলের বাজারে।
জুঁই এবং বেলফুল কেজি প্রতি ১০০ টাকা, জবা দশ টাকায় ১০০ পিস, অপরাজিতা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে পাইকারি বাজারেই। মরশুমের সময় আবার এই বেলফুল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি, জুঁই ফুল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছে। ফলে একদিকে অনিয়ন্ত্রিত উৎপাদন, অন্যদিকে উপযুক্ত হিমঘর (Cold Storage) না থাকায় সংরক্ষণের অভাবে বিভিন্ন ফুলের বাজার প্রায় শেয়ার মার্কেটের মতই উত্থানপতন ঘটছে। বহু ক্ষেত্রেই মাঠেই মার খাচ্ছেন জেলার ফুল চাষিরা। কোলাঘাটের খন্নাডি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বকসীতলা এলাকার বাসিন্দা চাষি মোহনদাস এ বছর প্রায় ৪০ ডেসিমল জমিতে রজনীগন্ধার চাষ করেছিলেন। তিনি বলেন, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় অর্থাৎ চলতি বছরে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত না হওয়াতে এমনিতেই ফুলের গড় উৎপাদন ভালই হয়েছে।
[আরও পড়ুন: সিগন্যাল-সহ রক্ষণাবেক্ষণের একাধিক কাজ, সপ্তাহান্তে হাওড়ার বিভিন্ন শাখায় বাতিল বহু ট্রেন]
আর তার ফলেই সামগ্রিকভাবে ফুলের দল নিচের দিকেই নেমে আসছিল। এরপর চলতি মাস মল মাস হওয়ায় প্রায় সমস্ত পুজোপার্বণ, শুভ অনুষ্ঠান জ্যোতিষশাস্ত্র মতে পিছিয়ে গিয়েছে। ফলে রজনী কিংবা গোলাপের দর এখন একদম তলানিতে। কোলাঘাটের বাসিন্দা তথা হাওড়ার মল্লিক ঘাটের ফুল ব্যবসায়ী সনাতন মাইতি বলেন, উৎপাদিত ফুল কোনওভাবেই দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করার কোন উপায় নেই। তাই বাধ্য হয়েই সামান্যতম দামি হলেও বহু সাধের এই ফুল বিক্রি করতে বাধ্য হন ফুলচাষি। সারা বাংলা ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বলেন, ”চাষিদের এই দুরবস্থার কথা মাথায় রেখে সরকারের কাছে আমরা একাধিকবার ফুল সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে এসেছি। কিন্তু তারপরেও সেই পরিস্থিতির কোনও রকমের পরিবর্তন না হয়, আমরাও হতাশ।”