সৈকত মাইতি, তমলুক: মাছ চাষে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে রুই, কাতলা, মৃগেলের পাশাপাশি নোনাজলের মাছ চাষের ক্ষেত্রেই এই জেলা এখন অনেক এগিয়ে। তার মধ্যে চিংড়ি চাষ প্রচুর লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। অতিরিক্ত লাভের আশায় চিংড়ি চাষ করতে গিয়ে এখন বিপাকে মৎস্যজীবীরা। করোনার ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে মড়ক লেগেছে চিংড়ির (Prawn)। আর তাতেই চিংড়ি চাষের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে তৈরি হয়েছে এক গভীর সংশয়।
নোনাজলের কারণে মূলত খেঁজুরি, সাহেবনগর, তেরপেখা, দিবাকরপুর, মনহরপুর, নরঘাট, জুনপুট-সহ সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাতে এই চাষ ব্যাপকভাবে হয়ে থাকে। খাদ্যরসিক বাঙালির পাশাপাশি এই ভেনামি চিংড়ির কদর রয়েছে দেশ-বিদেশের বাজারেও। তাই বিশেষ উপায়ে সংরক্ষণ করে এই ভেনামি চিংড়ির মিন চেন্নাই থেকে নিয়ে আসা হয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। এরপর কৃত্রিম খাদ্য ব্যবহার করে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার মাসের মধ্যেই প্রতি চিংড়ির ওজন হয়ে দাঁড়ায় ৩০ গ্রামেরও বেশি। তবে অল্পদিনে লাভজনক ব্যবসা হলেও করোনা আবহে সিংহভাগ রপ্তানি বন্ধ হয়েছে।
তার মধ্যেই আবার স্বল্প পরিসরে অধিক পরিমাণ মাছ চাষ করতে গিয়েই ঘটছিল বিপত্তি। ভেনামির রোগ আক্রমণে স্বাভাবিক বৃদ্ধির হারেও ব্যাঘাত ঘটেছিল। সেক্ষেত্রে মড়ক ঠেকাতে কখনও চোলাই মদ, ফলের রস খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করে কিছুটা হলেও সুফল মিলেছিল। কিন্তু ফের আর এক অজানা রোগের আশঙ্কায় চাষিদের মাথায় হাত। এলাকার চিংড়ি চাষিদের দাবি, প্রাথমিকভাবে স্বাভাবিক খাওয়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ভেনামির। এরপর জলাশয়ের একেবারে তলদেশে গিয়ে গর্ত খুঁড়ে নিজেরাই সেখানে স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরে অসহ্য যন্ত্রণার কারণেই তা ঘটে থাকতে পারে।
[আরও পড়ুন: নিউ নর্মালে পড়ানোর উপায় নেই, কলেজ খুললে ক্যাম্পাসে ফের ফুল চাষ করবেন শিক্ষক]
এই রোগের প্রভাব এখন মহিষাদলের তেরপেখা, নন্দীগ্রামের মঙ্গলচক, তেতুঁলবাড়ি, দিনভুইচক, গোপালচক, বাসুদেবপুর এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেছে। প্রায় ১১বিঘা জমি লিজ নিয়ে ভেনামি চাষ করেছিলেন স্থানীয় এক মৎস্যজীবী অমল ভুঁইয়া। ইতিমধ্যেই ওই চাষির প্রায় সাড়ে তিন বিঘা ফিসারিতে এই অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বহু ভেনামি পচে নষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, “এতদিন বৃষ্টি না হওয়ায় এক ধরনের রোগ সংক্রমণ ঘটছিল। কিন্তু চলতি বছর লকডাউনের বাজারেই প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০ কেজি করে মাছ পচে ভেসে উঠছে। আর তার থেকে এই সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ছে।” মৎস্যজীবী তনুময় বেরার দাবি, রানিং মর্টালিটির কারণেই এমনটা ঘটছে। যদিও এ বিষয়ে জেলার মৎস্য অধিকর্তা (নোনাজল) সুরজিৎ বাগ বলেন, “অপেক্ষাকৃত স্বল্প জায়গায় অতিরিক্ত পরিমাণ চাষের জন্যই বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে। তাই এই চাষের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে চাষিদের আরও বেশি করে সতর্ক হতে হবে।”
The post অজানা রোগে মৃত্যু চিংড়ির, করোনা আবহে নয়া বিপদে চিন্তিত রাজ্যের মৎস্যজীবীরা appeared first on Sangbad Pratidin.