নিজস্ব সংবাদদাতা, মেখলিগঞ্জ: বাইরের রাজ্যে কদর কমেছে উত্তরবঙ্গের দেশি তামাকের। যে কারণে এখানকার তামাক ভিনরাজ্যে রপ্তানি অনেকটাই কমে গিয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ ব্লকেও। কারণ বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এই এলাকার অন্যতম অর্থকরী ফসল ছিল তামাক। ব্লকের চ্যাংরাবান্ধায় তামাকের ব্যবসার রমরমা ছিল। এলাকার বিভিন্ন হাট থেকে এখানকার মহাজনেরা তামাক কিনে মজুত করে রাখতেন। তারপর সেগুলি ভালোমতো বাঁধাই করে বাইরে পাঠাতেন। এখনও এখানকার তামাক কলকাতা পাঠানো হয়। প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশাতেও পাঠানো হয় তামাক। তবে তা প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।
আগে এই এলাকা থেকে মাসে কুড়ি ট্রাক তামাক ভিনরাজ্যে যেত। বর্তমানে সেই সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে। এই ১০-১১-তে কাজের জন্য অনেক শ্রমিকও যুক্ত থাকতেন। ব্যবসা কমে যাওয়ায় চাষিরাও এখন তামাক কম চাষ করছেন। তাই কর্মসংস্থানেও দেখা গিয়েছে ঘাটতি। চ্যাংরাবান্ধার ব্যবসায়ী দিলীপ পারেখের বক্তব্য, "তামাকের ব্যবসা আর আগের মতো নেই। যে কারণে ব্যবসায়ীর সংখ্যাও কমেছে। আগের থেকে পরিমানে অনেক কম তামাক এখন বাইরে যাচ্ছে।" কুচলিবাড়ির কৃষক রতন বর্মন বলেন, "কয়েক বছর আগেও আমাদের এলাকায় অনেক কৃষক তামাক চাষ করতেন। কিন্তু এখন এই চাষে খুব একটা লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না বলে চাষ প্রায় হয় না বললেই চলে।"
জানা গিয়েছে, কোচবিহার জেলার সিতাই, শীতলকুচি এবং মেখলিগঞ্জ এই তিন জায়গায় তামাকের ভাল উৎপাদন হত। বর্তমানে তিন জায়গা থেকেই এই চাষ কমার খবর পাওয়া গেছে। তবে তামাকের ব্যবসায় মন্দা দেখা দেওয়ার বাইরের কারখানার মালিকদের ব্যবসার সিস্টেমও একটা অন্যতম কারণ। একটা সময় স্থানীয় মহাজনরা সরাসরি কারখানায় তামাক বিক্রি করতেন। বর্তমানে অনেক কারখানার মালিক এলাকায় এসে কমিশনে এজেন্ট নিয়োগ করে তাঁদের দিয়ে তামাক ক্রয় করাচ্ছেন। এতেই মাঝে থাকা মহাজনদের ব্যবসায় ভাটা পড়ে গিয়েছে। পাশাপাশি ভিনরাজ্যে তামাকের চাহিদাও অনেক কমে গিয়েছে। এমনকী তামাক চাষ কমানোর লক্ষ্য রয়েছে সরকারেরও। মেখলিগঞ্জ ব্লক কৃষি দপ্তর সূত্রেই জানা গিয়েছে, এই ব্লকে গত মরশুমে ১১০০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছিল। এবার সেটা কমে হয়েছে ৭৫০ একর। কোচবিহার জেলার সহ কৃষি অধিকর্তা অমিতকুমার দাস জানান, তামাক চাষ আগের চেয়ে অনেক কমে গিয়েছে। এর পরিবর্তে ভুট্টা চাষ হচ্ছে।