শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: চাকরির অবসরগ্রহণের পর অনন্ত সময়। ঘরে বসে বসে মনোরোগে আক্রান্ত হওয়ার বদলে জীবনের নয়া দিশা দেখাচ্ছেন জলসম্পদ বিভাগের প্রাক্তন ইঞ্জিনিয়ার চন্দন মজুমদার। সেই সঙ্গে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী থেকে অসহায়দের নিজের হাতে চাষ করা বাড়ির ছাদবাগানে উৎপাদিত নির্ভেজাল হরেক ফল বিনামূল্যে বিলিয়ে বর্তমান প্রজন্মকে প্রকৃতিকে ভালোবাসার পাঠ দিচ্ছেন প্রবীণ এই ব্যক্তি।
বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থেকে তরুণ প্রজন্মকে সবুজায়নে উৎসাহিত করে চলেছেন উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ শহরের স্কুলপাড়ার বাসিন্দা চন্দনবাবু। তাঁর নিজের বাড়ির বিস্তীর্ণ ছাদে চৌবাচ্চায় সারি সারি গাছে ঝাঁক ঝাঁক ঝুলছে লালচে বেদানা থেকে শুরু করে মরশুমি হরেক প্রজাতির ফল চাষে মজেছেন তিনি। সেই সঙ্গে বহুগুণে ভরা সবজি বেগুন থেকে শুরু করে কাঁচা লঙ্কা ও ব্রকলি। দোল উৎসবে শামিল হওয়ার ঠিক আগে বৃহস্পতিবার ছাদবাগানের বেদানা হাতে নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘বয়সকালে অনেক মানুষ মনোরোগী হয়ে বাড়িতে পড়ে থাকেন৷ যদি একবার গাছ চাষের নেশা ছড়িয়ে পড়ে অন্তরে, তাহলে ফুৎকারে সব রোগ নিমিষেই উড়ে যাবে। বাড়ির ছাদে যদি একটু জায়গা থাকে, তাহলে প্রবীণরা অনায়াসেই নানাধরণের ফল আবাদ করলে নিজের শরীর-মন চাঙ্গা থাকবে, সেইসঙ্গে অনেক মানুষ উপকৃত হবেন। আর প্রকৃতির যত্নে চারদিকের পরিবেশ আরও সুন্দর হয়ে উঠবে।
নীরবে চাষাবাদে মগ্ন জলসম্পদ দপ্তরের প্রাক্তন এই কর্মী বলেন, ‘‘বয়সের কারণে দিনেবেলার বদলে রাতে গাছের পরিচর্চায় বেশি স্বচ্ছন্দ আমি। আর ছাদের উপরে গাছ থাকায় পরিচর্চা করতে সুবিধা হয় এবং এতে পোকা মাকড়ের সংক্রমণ নিচের তুলনায় অপেক্ষাকৃত অনেক কম হয়।’’ তিনি জানান, এক একটা গাছে ৬০ থেকে ৭০ টি বেদানা হয় বর্ষা মরশুমে। সেই ফল বাজারে বিক্রির কোনও প্রশ্নই নেই। পরিবর্তে কালিয়াগঞ্জের হাসপাতালের শয্যায় চিকিৎসাধীন রোগী থেকে শুরু করে স্থানীয় নাটমন্দিরের নিত্যপুজোয় বিলি করা হয়। তারপর পাড়ার গরিব মানুষজনদের পাশাপাশি ভারত সেবাশ্রমের হস্টেলের ছাত্রদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আর এই ছাদবাগান গড়ার মধ্যে লুকিয়ে আছে প্রবীণ নাগরিকদের মানসিক রোগের মুক্তির রক্ষা কবচ। চন্দনবাবুর সংযোজন, ‘‘এই বাগান তৈরিতে কেউ উৎসাহিত হলে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আমি।’’